ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা উচিৎ নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন জাপার সমর্থন পদদলিতের অভিযোগ তুলে। তার ভাষ্য, শেখ হাসিনা যেভাবে বিরোধীদের শত্রু মনে করতেন, একই নীতিতে চলছে ইউনূস সরকার।
জি এম কাদের বলেন, ‘জাপা সরকারকে সমর্থনে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু সরকার সমর্থন পদদলিত করেছে। সংবিধান সংস্কার কমিটি কর্মচারী দিয়ে জাপার প্রস্তাবনা গ্রহণ করেছে; ছবি তুলতেও নিষেধ ছিল। এত ঘৃণ্য হয়ে গেলাম! আমাদের হাত থেকে প্রস্তাবনা নিতে ঘৃণা হয়! ঘৃণা আরও ঘৃণার জন্ম দেয়।’
শনিবার বনানী কার্যালয়ে ‘সংবিধান সংরক্ষণ দিবস’ এর আলোচনায় সভায় এসব কথা বলেছেন জি এম কাদের। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পতন ঘটে অভ্যুত্থানে। দিনটিকে অন্যান্য দল স্বৈরাচার পতন হিসেবে উদযাপন করলেও, জাপা সংবিধান সংরক্ষণ দিবস নামে পালন করে।
অন্য দল বাংলাদেশ কূটনৈতিক মিশনে হামলার প্রতিবাদ করলেও জাপা নিরব রয়েছে। জি এম কাদের সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, ‘আগ্রাসন এলে আমরা তা প্রতিহত করবো। গলাবাজির দরকার নাই। কেউ কেউ বলেন, এক ইঞ্চিও ছাড় দেব না। কে আপনাকে ছাড় দিতে বলে? দেশে আর্মি আছে, বিজিবি আছেন না?’
গত চার নির্বাচন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করায় স্বৈরাচারের দোসর তকমা পেয়েছে জাপা। দলটিকে সংলাপ, সংস্কার, জাতীয় ঐক্যে ডাকা হয়নি। এ প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগ আমলের বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের বলন, ‘২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ৪৮ দশমিক ৪ এবং জাপা ৭ দশমিক ০৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। ৫০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী দলকে জাতীয় ঐক্য, সংলাপের বাইরে রাখা হয়েছে। এতে অবিশ্বাস, সংঘাতের পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।’
জাতীয় পার্টির ওপর নির্যাতন হচ্ছে অভিযোগ করে জি এম কাদের বলেছেন, ‘জনগণের রায়ে শেখ হাসিনা নির্বাচিত হয়ে দানবীয় সরকার গঠন করেছিলেন। এ থেকে পরিত্রাণে রাষ্ট্রযন্ত্রের সংস্কার চাই। সংস্কারে সবার মতামত দরকার আছে, সংসদেও পাস করতে হবে। অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার কি সবার মতামতে সংস্কার করছে? ঐক্যের চেয়ে প্রতিশোধ সামনে আসছে।’
জি এম কাদের বলেন, ‘লাখ লাখ মানুষকে আসামি করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগ হতাশাগ্রস্ত। ইচ্ছা করে সবাই শেখ হাসিনার অপকর্মে জড়ায়নি। সবাইকে ঢালাও অপরাধী বানিয়ে বাদ দিলেন; শূন্যস্থানগুলোতে হয়েছে। তারা সরকারের চেয়ে নিয়োগদাতাদের কথা বেশি শুনছে। এমন প্রশাসন দিয়ে কীভাবে সংস্কার ও নির্বাচন হবে?’
নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কী না সন্দেহ করে জি এম কাদের বলেন, ‘কাজ করার শক্তি অন্তর্বর্তী সরকার হারিয়ে ফেলেছে। মানুষকে পথেঘাটে নির্যাতন করা হচ্ছে। আমাদের লোকজন ভোট দিতে পারবে? আমাদের নেতাকর্মীরা নির্বাচনের মাঠে দাঁড়াতে পারবে? আওয়ামী লীগের মতো কয়েকটি দল নিয়ে একতরফা নির্বাচন করে সব পাশ করিয়ে দিলে, তা টেকসই হবে? একতরফা নির্বাচনে জন্য শেখ হাসিনা নিন্দা করা হয়, আপনারা কি একই জিনিস করবেন? নির্বাচন হতে হবে অবাধ, নিরপেক্ষ এবং অন্তর্ভূক্তিমূলক। কোনো রাজনৈতিক দল যদি সন্ত্রাসী সংগঠন না হয়, রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে বাইরে রাখা যাবে না।’
সভায় বক্তৃতা করেন জাপার মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা।