ভারতের ক্রিকেটে পৃথ্বী শ’র আগমণ নতুন শচীন টেন্ডুলকার হিসেবে। মাত্র ১৯ বছর বয়সে টেস্টে অভিষেক তার। ১৩৪ রানের ইনিংস খেলে আগমণী বার্তা দেন এই ওপেনার। বুঝিয়ে দেন, তাকে নিয়ে ভুল কিছু বলা হচ্ছে না। আইপিএলে কেউ কেউ তার আগ্রাহী ব্যাটিংয়ের কারণে নতুন বিরেন্দ্র শেহবাগ নামেও ডাকতে শুরু করেন।
এমনকি পৃথ্বী’র আগ্রাসনে বিশ্বকাপ জয়ী শেহবাহও নিজের ছায়া খুঁজে পেয়েছিলেন। ওই পৃথ্বীর বয়স সবে ২৫ বছর। এর মধ্যেই হারিয়ে যাওয়ার প্রান্তে দাঁড়িয়ে তিনি। বিশৃঙ্খল জীবনযাপন, অলসতা মিলিয়ে নিজের প্রতিভার প্রতি অবিচার করা পৃথ্বী আইপিএলের ১৮তম আসরের মেগা নিলামে দল পাননি। মাত্র ৭৫ লাখ রুপি ভিত্তিমূল্য তালিকায় ছিলেন তিনি। অথচ তার প্রতি আগ্রহ দেখায়নি কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি।
পৃথ্বী’র আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার দাঁড়ায়নি। মাত্র ৫টি টেস্ট খেলেছেন তিনি। ৬ ম্যাচে থমকে গেছে ওয়ানডে ক্যারিয়ার। একমাত্র আন্তর্জাতিক টি-২০তে ডাক মেরেছেন। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার দিয়ে তাই নতুন শচীন তুলনার সঙ্গে তাকে মেলানো যাবে না। সেজন্য তাকাতে হবে তার ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্সের দিকে।
পৃথ্বী ৫৮টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে সাড়ে চার হাজারের ওপরে রান করেছেন। ১৩ সেঞ্চুরির মধ্যে আছে ট্রিপল সেঞ্চুরিও। তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস ৩৭৯ রানের। লিস্ট ‘এ’ অর্থাৎ ওয়ানডে ফরম্যাটের ঘরোয়া ক্রিকেটে তার ক্যারিয়ার সেরা ২৪৪! ৬৫ ম্যাচে ১০ সেঞ্চুরি ও ১৪ ফিফটি করেছেন। এমন একজনকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত না হয়ে উপায় কী!
কিন্তু তার পতন স্মরণ করায় বিনোদ কাম্বলিকে। শচীনের মতো ভারতের কিংবদন্তি হওয়ার কথা ছিল কাম্বলির। ১৪ বছরের শচীনের সঙ্গে ১৬ বছরের কাম্বলি হ্যারিস শিল্ডে ৬৬৪ রানের রেকর্ড জুটি গড়ে আলোচনায় এসেছিলেন। ওই কাম্বলি পরে জাতীয় দলে ডাক পান। দুই বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে ৪টি সেঞ্চুরি ও ৩টি ফিফটি করেন। ১৭ টেস্টের ছোট্ট ওই ক্যারিয়ারেই ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পান। থেমে থেমে ওয়ানডে ক্যারিয়ারটা তবু নয় বছরে নিয়ে যান কাম্বলি। ১০৪ ম্যাচ খেলে ২ সেঞ্চুরি ও ১৪ ফিফটিতে করেন ২ হাজার ৪৭৭ রান। প্রথম শ্রেণি ও লিস্ট‘এ’ ক্রিকেটে ১৫ হাজারের ওপরে রান তার। সেঞ্চুরি আছে ৪৬টি। পৃথ্বী শ’ অতদূরও যেতে পারেননি। পারবেন কিনা তাও অনিশ্চিত।
কাম্বলির ক্যারিয়ার শেষ হওয়ার পেছনে দায়ী তার অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। শচীন ক্রিকেটটা পূজা করার মতো করে ফেলেছেন। কাম্বলি ছিলেন বিশৃঙ্খল, সরস্বতী পায়ে ঠেলা লোক। নাইট ক্লাব, পার্টিতে মেতে থাকতে পছন্দ করতেন তিনি। গত বছর পৃথ্বীও ঘটিয়েছেন একই ঘটনা। নাইট ক্লাব থেকে বেরিয়ে সেলফি শিকারি ক’জন নারী ভক্তের সঙ্গে বাজে আচরণের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। ভক্তরা তার গাড়ি ভাঙচুর করেন।
কাম্বলি, পৃথ্বীর মতো ক্যারিয়ারের শুরুতে কিছুটা বিশৃঙ্খল ছিলেন বিরাট কোহলিও। সে সময় এক কোচ তাকে বলেছিলেন, ভারতে তোমার মতো সুদর্শন অনেকে আছে। যদি ভিন্ন কিছু করতে পারো মানুষ তোমাকে মনে রাখবে। এই সৌন্দর্যের জন্য কেউ তোমাকে চিনবে না। কোহলিকে আগ্রাসন মাঠে দেখাতে বলেছিলেন তার কোচ। কথাটা তরুণ কোহলির মনে ধরেছিল। যে কারণে শচীনের সঙ্গে তুলনার প্রতি সুবিচার করতে পেরেছেন তিনি। হারিয়ে গেছেন কাম্বলী। হারিয়ে যাচ্ছেন পৃথ্বী শ’।