উচ্চ আদালতের রায়ে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল হওয়ায় আবারও ফুঁসে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা। টানা তিন দিন ধরে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন চলছে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ২০১৮ সালের স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে।
হাইকোর্টের আদেশ প্রত্যাহারের জন্য সরকারকে জুন মাস পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এই সময়ের মধ্যে কোটা পুনর্বহালের আদেশ প্রত্যাহার না হলে সর্বাত্মক আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
রোববার (৯ জুন) বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় দিনের মতো কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে বিক্ষোভকালে শিক্ষার্থীরা এই ঘোষণা দেন।
গত ৫ জুন ২০১৮ সালের জারিকৃত পরিপত্রটিকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এরপর থেকেই সারাদেশে নানা স্থানে থেমে থেমে চলছে কোটা আন্দোলন। তবে এবার সারাদেশে একযোগে একই সময়ে কোটা আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। জাবি, জবি, রাবি, সাত কলেজসহ দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন কলেজে চলেছে এই কোটাবিরোধী আন্দোলন।
রোববার শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে একত্রিত হয়ে মিছিল নিয়ে কলাভবন, প্রশাসনিক ভবন, উপাচার্যের কার্যালয়ের প্রবেশপথ ঘুরে রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হয়। তারপর সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করে। সমাবেশ শেষে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের কাছে স্মারকলিপি দেয় শিক্ষার্থীরা।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত রশিদ বলেন, আমাদের সংবিধানে সরকারি চাকরিতে সমতা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু আজকে কোটার মাধ্যমে মেধাবীদের অবহেলা করা হচ্ছে। এই ছাত্রসমাজ কোনো দাবি আদায়ে যতবারই রাস্তায় নেমেছে সেই দাবি আদায় করে রাজপথ ছেড়েছে। আজকেও আমরা কোটা পুনর্বহালের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছি। যদি এই বৈষম্যমূলক কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বাতিল না করা হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা এই রাজপথ ছাড়বে না। প্রয়োজনে রক্ত ঝরবে, রাজপথে লাশ পড়বে তবুও আমরা এই দাবি আদায় করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।
তামান্না নামক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা বৈষম্যমূলক কোটা চাই না। আমরা মেধার ভিত্তিতে আমাদের প্রশাসন চাই। আমি নারী হয়ে নারী কোটাকে আমার সম্মানের ওপর নারিত্বের ওপর আঘাত বলে মনে করি। তাই কোটা ব্যবস্থা অচিরেই বাতিল করার জোর দাবি জানাই।
বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের শিক্ষার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন রিহাম বলেন, আমরা হাইকোর্টের রায়কে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করছি। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন কোটা প্রথা বিদ্যমান রাখা নিয়ে আমাদের এত উষ্মা কেন? কিন্তু আমরা বলতে চাই, ওনি কি সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষামন্ত্রী নাকি ২% শিক্ষার্থীর মন্ত্রী? আমাদের দাবি নিয়ে প্রশ্ন তোলার জন্য ওনাকে আমরা মন্ত্রী বানাই নাই।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে প্রথমে সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠে ছাত্র জনতা। সারাদেশে আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। তখন একটি পরিপত্রও জারি করা হয়। সেই পরিপত্র সম্প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশে অবৈধ ঘোষণার পর ফুঁসে ওঠে ছাত্ররা। তবে সরকার ইতোমধ্যে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল করেছে।