গত সপ্তাহে ভারতের শীর্ষ অবকাঠামো টাইকন আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠার পর বড় ধরনের সংকটে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান গৌতম আদানি। যুক্তরাষ্ট্রে আদানি গ্রুপের কয়েকজন নির্বাহীর বিরুদ্ধে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ আনার পর দেশেও বেশ চাপের মুখে পড়েছেন তিনি। বিরোধী দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী শুরু থেকেই তাঁর গ্রেপ্তার দাবি জানান। সোমবার শীতকালীন অধিবেশনের শুরুতেই গৌতম আদানিকে নিয়ে চরম উত্তেজনা দেখা দেয় পার্লামেন্টে। আদানিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিরোধী সংসদ সদস্যদের হট্টগোলের জেরে লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশন মুলতবি করা হয়। এর রেশ থেমে থাকেনি। আজ বুধবারও আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ নিয়ে আলোচনার দাবি ওঠে সংসদে। পরে লোকসভার দুই কক্ষের অধিবেশন সারা দিনের জন্য মুলতবি ঘোষণা করা হয়। খবর- এনডিটিভি
লোকসভা ও রাজ্যসভায় আদানির ঘুষের অভিযোগ ছাড়াও মণিপুর সংকট, সম্ভলে সহিংসতাসহ অনেকগুলো মুলতবি প্রস্তাব পেশ করা হয়। তবে কোনোটিই আমলে না নেওয়ায় বিরোধী দল সংসদের কার্যক্রমে বাধা দেয়। এতে দুই কক্ষের অধিবেশন সারা দিনের মতো মুলতবি ঘোষণা করা হয়। এতে শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম তিন দিনই সংসদের দুই কক্ষের স্বাভাবিক কাজ বিঘ্নিত হলো।
এর আগে সোমবার বিরোধীদের হট্টগোলের জেরে দুপুর পর্যন্ত দুই কক্ষেই অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়। দুপুরের দিকে লোকসভা এবং রাজ্যসভার অধিবেশন ফের শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আদানি ইস্যুর পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশের সম্ভলে সহিংসতার ঘটনা সম্পর্কে বিরোধীরা সুর চড়ালে অধিবেশন বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
বিজেপি সংসদ সদস্য সন্ধ্যা রাই সোমবার লোকসভার সদস্যদের কাছে জানতে চান, তাঁর সভাপতিত্বে অধিবেশন এগিয়ে যেতে তারা ইচ্ছুক কিনা। এর পরও হট্টগোল না থামায় আজ বুধবার পর্যন্ত লোকসভার অধিবেশন মুলতবি করা হয়।
কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলো আদানি ইস্যুতে আলোচনা দাবি করে। তাদের অভিযোগ, সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহের বরাদ্দ পেতে ভারতীয় কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়েছেন আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান গৌতম আদানিসহ কয়েকজন। এ প্রসঙ্গে আলোচনা চেয়ে লোকসভায় মুলতবি প্রস্তাব দেন কংগ্রেস সংসদ সদস্য মনিকম টেগোর। এ নিয়ে লোকসভার স্পিকার ও সেক্রেটারি জেনারেলকে লেখা চিঠিতে তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদি সরকারের উদাসীনতা, নীরবতা সারাবিশ্বের কাছে ভারতের মাথা নিচু করে দিচ্ছে। সরকারকে জবাব দিতেই হবে।
এদিকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা ও সমন জারির পর এবার ভারতের সুপ্রিম কোর্টেও মামলা হয়েছে আদানির বিরুদ্ধে। ভারতের এই শীর্ষ ধনকুবেরের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন অ্যাডভোকেট বিশাল তিওয়ারি।
অন্যদিকে আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে সই হওয়া বিদ্যুৎ চুক্তি নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শ্রীলঙ্কার নবনির্বাচিত বাম সরকার। দেশটির সাবেক সরকারের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর বিদ্যুৎ-সংক্রান্ত যে চুক্তি হয়েছিল, সে বিষয়ে এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নবগঠিত মন্ত্রিসভা। সিলোন ইলেকট্রিসিটি বোর্ডের মুখপাত্র ধনুষ্কা পরাক্রমসিংঘে এ কথা জানিয়েছেন।
ভারতের অর্থনীতি দেশটির শীর্ষ অবকাঠামো টাইকন আদানির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। তিনি দেশগুলোর ১৩টি বন্দর পরিচালনা করেন (৩০ শতাংশ বাজার শেয়ার); সাতটি বিমানবন্দর (২৩ শতাংশ যাত্রী পরিবহন) ও ভারতের বৃহত্তম সিমেন্ট ব্যবসার (২০ শতাংশ বাজার) নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর রয়েছে ছয়টি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ ছাড়া আরও অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন তিনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে দেশটিতে নানা গুঞ্জন রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ প্রসঙ্গে ভারতীয় সাংবাদিক প্রাণঞ্জয় গুহ ঠাকুর বলেন, ‘এটা বড় অভিযোগ। আদানি ও মোদি দীর্ঘকাল ধরেই অবিচ্ছেদ্য। এটা ভারতের রাজনৈতিক অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে যাচ্ছে।’