ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের মধ্যেই রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে সের্গেই শোইগুকে সরিয়ে দিচ্ছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এছাড়া প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নতুন একজনের নামও প্রস্তাব করা হয়েছে।
অবশ্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সরানো হলেও সের্গেই শোইগুকে পাঠানো হচ্ছে অন্য দায়িত্বে। সোমবার (১৩ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার দীর্ঘদিনের মিত্র সের্গেই শোইগুকে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর থেকে সরিয়ে দিতে চলেছেন বলে ক্রেমলিন ঘোষণা করেছে। ৬৮ বছর বয়সী শোইগু ২০১২ সাল থেকে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদে রয়েছেন এবং তাকে এখন রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান নিযুক্ত করা হবে।
রুশ পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ থেকে প্রকাশিত কাগজপত্রে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদে সের্গেই শোইগুর স্থলাভিষিক্ত হবেন উপ-প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোসভ। টানা দুই বছরের বেশি সময় ধরে রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধ করছেন এবং শোইগু সেই যুদ্ধে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন।
রাশিয়ার সরকারি কাগজপত্রে দেখা গেছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন চান নিকোলাই পাত্রুশেভের কাছ থেকে শক্তিশালী নিরাপত্তা পরিষদের দায়িত্ব নিক শোইগু। তবে পাত্রুশেভের নতুন পোস্ট কী হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে সের্গেই শোইগুর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আর এর কারণে প্রায়ই পুতিনকে তার (শোইগুর) জন্মভূমি সাইবেরিয়ায় মাছ ধরার সফরে যেতে দেখা যায়। মূলত সামরিক পটভূমি বা অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও শোইগুকে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার সের্গেই শোইগু ১৯৯০ এর দশকে জরুরি ও দুর্যোগ ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
২০২৩ সালে রাশিয়ার যুদ্ধ পরিচালনার বিষয়ে ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের সাথে প্রকাশ্য বিবাদে জড়িয়ে পড়েন শোইগু। প্রিগোজিন মস্কোর বিরুদ্ধে স্বল্পস্থায়ী বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং ভাইরাল হওয়া অডিও বার্তাগুলোতে সেসময় তিনি শোইগুকে ‘অপ্রীতিকর ব্যক্তি’ এবং ‘বয়স্ক ক্লাউন’ হিসাবে আখ্যায়িত করেন।
তবে ২০২৩ সালের আগস্টে সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে মস্কো যাওয়ার সময় ওয়াগনারের এই প্রধান বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান।
অন্যদিকে শোইগুর বদলে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদে সম্ভাব্য ব্যক্তি হিসেবে প্রস্তাবিত বেলোসভ সামান্য সামরিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন অর্থনীতিবিদ। অনেকের কাছে এই পদের জন্য তার নাম সামনে আসাটা বেশ বিস্ময়কর।
তবে অন্যান্য বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে, প্রেসিডেন্ট পুতিন রাশিয়ার অর্থনীতিকে চলমান যুদ্ধের প্রচেষ্টার সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সারিবদ্ধ করতে চাইছেন, আর এই পদক্ষেপটি সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
বিবিসি রাশিয়ার সম্পাদক স্টিভ রোজেনবার্গ বলেছেন, সের্গেই শোইগুকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়াটা আশ্চর্যজনক কিছু নয়, কারণ তার অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং কিছু সময় ধরে কথা হচ্ছিল- তিনি তার পদ হারাতে পারেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান সামরিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি সেনা ও বস্তুগত বড় ক্ষতির কারণে জর্জরিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেছেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসাবে একজন অর্থনীতিবিদ থাকা ক্রেমলিনের পরিবর্তিত অগ্রাধিকারগুলোকেই প্রতিফলিত করছে। রাশিয়ার অর্থনীতি এখন যুদ্ধের পর্যায়ে রয়েছে, তাই যুদ্ধে অর্থায়নের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের যথেষ্ট অর্থ থাকা অত্যাবশ্যক।