পুরোদমে জমে উঠেছে খুলনার ঈদের বাজার। জামা কাপড়ের পাশাপাশি নারীদের কসমেটিকস সামগ্রীর বেচাকেনাও চলছে পুরো গতিতে। ইদকে সামনে রেখে ত্বকের চর্চা এবং সৌন্দর্য বর্ধনে সব বয়সের নারীরা এসব প্রসাধনী সামগ্রী কিনতে ভিড় করছেন বিভিন্ন দোকানে। এবার বিদেশি নানা ব্র্যান্ডের পাশাপাশি দেশীয় ব্র্যান্ডের কসমেটিকস পণ্যের বেচা বিক্রিও বেড়েছে।খুলনার বড়বাজার, দৌলতপুর, বয়রা, নিউমার্কেটসহ বেশকিছু প্রসাধনী পণ্যের দোকানগুলোতে চোখে পড়েছে বিভিন্ন বয়সী নারীদের নানা ধরনের রূপচর্চার পণ্য কেনার হিড়িক। লিপস্টিক, ফাউন্ডেশন, ফেসপাউডার, ফেসওয়াশ, ফেসপ্যাক, নেলপলিশসহ, মেহেদি, আইলাইনারসহ নানান পণ্য বাজার ঘিরে রেখেছে। ঈদকে কেন্দ্র করে খুলনার কসমেটিকস পণ্যের দোকানগুলোতে বর্তমানে জমজমাট ভীড় দেখা যাচ্ছে।বিক্রেতারা জানিয়েছেন এবারের ঈদে গরম আবহাওয়ার কারণে হালকা ও স্নিগ্ধ সাজসজ্জার প্রতিই তরুণীদের ঝোঁক বেশি।পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের উৎসবে নিজেকে সাজাতে বিদেশি ব্রান্ডের পাশাপাশি দেশীয় নানা ব্রান্ডের কসমেটিকস পণ্য ব্যবহার করেন নারীরা। এসব প্রসাধনী সামগ্রীর মধ্যে মেহেদি, ফেস ওয়াশ, টোনার, লিপস্টিক, আইক্রিম, লিপ ক্রিম, হেয়ার প্যাক, স্ক্রাবসহ নানা ধরনের পণ্য বিক্রি হচ্ছে। তবে ঈদের সাজের ক্ষেত্রে সচেতন মেয়েরা মাথায় রাখছেন গরম আবহাওয়া ও পরিবেশের কথা।পেশায় স্কুল শিক্ষিকা সোহেলী শারমিন উর্মী বয়রা বাজারে এসেছেন বেশ কিছু প্রসাধনী সামগ্রী কিনতে। তিনি বলেন, সারাবছরই বিভিন্ন মেকাপ আইটেম কেনা হয় তবে ঈদের সময় কেনাকাটা করাটা আলাদা ভালোলাগা কাজ করে। যেহেতু আমি নিজে এসেছি কেনাকাটা করতে চেষ্টা করছি পরিবারের সববয়সী নারী সদস্যদের জন্যই কিছু না কিছু কিনতে।নগরীর বয়রা বাজারের সৈকত কসমেটিক্সের স্বতাধিকারি মোহাম্মদ সৈকত তালুকদার বলেন, ‘লিপস্টিক, ফাউন্ডেশনসহ রূপচর্চার নানা পণ্য বিক্রি বাড়ে ঈদের এই উৎসবকে কেন্দ্র করে। আমার দোকানে এবার বিদেশি পণ্যের পাশাপাশি এবার প্রচুর পরিমাণে দেশিয় পণ্য তুলেছি। বিক্রি বেড়েছে ২০ রোজার পর থেকেই। আশা করছি ঈদের বাকি দিনগুলোতে আরও ভালো বেচাকেনা হবে।’ঈদে মেয়েদের চাহিদার শীর্ষে থাকে হাত রাঙানো মেহেদির। ব্যতিক্রম হয়নি এবারো। ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে দোকানে চাহিদার তুঙ্গে আছে মেহেদি। বিপণী দোকানগুলোর মধ্যে নানান দেশি-বিদেশী ব্রান্ডের মেহেদি কিনছেন নারী ক্রেতারা।বাজার ঘুরে দেখা গেছে বাজারে কাভেরি, গোলেচা, প্রেম দুলহান, নূপুর হেনা, আনমোল কালি ও আলমাস নামের দেশি বিদেশি মেহেদি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ৬৫০ টাকায়। পাঞ্চক্লিপ ৫০ থেকে ২৫০ টাকা। নেলপলিস ৬০ থেকে ৩৫০টাকা। মেকআপ ফাউন্ডেশন ২০০ থেকে ৫৫০টাকা। ইমিটিশনের আংটি ৭০ থেকে ১৫০ টাকা। ব্রেসলেট ৮০ থেকে ৩০০টাকা। দেশি রেশমি চুড়ি ১২০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। মেটালের চুড়ি ১৮০ থেকে ২৫০টাকা। পায়েল ১০০ থেকে ৩০০ টাকা। মেকআপ বক্স পাওয়া যাবে ৩৫০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায়। আইশ্যাডো ২০ থেকে ৯০০টাকা। কমপ্যাক্ট পাউডার ১৫০ থেকে ৮০০ টাকা। লিপস্টিক ১০০ থেকে ৩৫০টাকা। মেকআপ বক্স পাওয়া যাবে ৭০০ থেকে দুই হাজার ৫০০টাকায়। হেয়ারব্যান্ড ৫০ থেকে ২৫০টাকা। কানের দুল ১০০ থেকে ৭০০টাকা। চুড়ি সেট জোড়া ১৫০ থেকে ১৫০০টাকা। নেকলেস সেট ৪০০ থেকে তিন হাজার টাকা।ছোটবোনকে সাথে নিয়ে নগরীর বড় বাজারে প্রসাধনী সামগ্রী কিনতে এসেছেন এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রাদিয়া আফরোজ। তিনি বলেন, ‘জামাকাপড় কিনেছি আরও আগে তবে এখনো মেকাপ আইটেম কিছু কেনা হয়নি। আমার প্রতি ঈদেই মেহেদি কেনা হয়। কয়েক রকমের মেহেদি কিনি ঈদের জন্য। আর এবার সাথে ছোটবোনকে এনেছি। ওর পছন্দ মতো রেশমি চুড়ি, আইলাইনার, লিপিস্টিক কিনব।খুলনায় প্রসাধনী কেন্দ্রিক বেশ কয়েকটি মার্কেট রয়েছে। সেখানে ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার বিক্রি হয়ে থাকে।নিউ মার্কেটের বিক্রেতা রাফসান হুসাইন জানান, ‘প্রতিদিন ক্রেতাদের ভীড় বাড়ছে। তরুণীদের পাশাপাশি ফ্যাশনপ্রিয় তরুণরাও ঈদ উপলক্ষে কিনছেন বিভিন্ন ধরনের পারফিউম, চুলের জেল, সেভিং কিট, স্ক্রাব, বডি স্প্রে, শাওয়ার জেল, ফেসপেক, ব্ল্যাক মাস্ক, হোয়াইটিনিং ক্রিম ইত্যাদি। ঈদের দিন মেকআপ করার পাশাপাশি নিজেদের হাত মেহেদীর রঙে সাজাতে এসব প্রসাধনী সামগ্রী কিনছেন শিশু-কিশোরী ও তরুণীরা।’বড় বাজারের চুড়িপট্টিতে আসা সানজিদা ইসলাম বলেন, মেহেদী তো অবশ্যই কিনবো আর সাথে ইমিটিশন জুয়েলারি কেনার ইচ্ছা। সারা বছর তেমন কেনা হয় না, তাই ঈদের এ সময়টাতে বেশি করে কিনে রাখি। ভীড় এড়াতে দুপুরে এসেছি দোকানে তবে এখনো প্রচুর ভীড়। গল্লামারি থেকে আসা ক্রেতা মুমতাহিনা চৌধুরী বলেন, কিছু ইমিটিশন জুয়েলারি কিনতে এসেছি। কারন সোনার গয়না কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠান ছাড়া পরা হয় না। সারা বছর ইমিটিশন জুয়েলারিতেই চলে। ভীড়ভাট্টার কারনে মার্কেটে কম আসি। তবে ঈদের সময়ে না আসলে আবার ভালোলাগে না।ঈদের কেনাকাটায় ক্রেতা আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন শপিং মল ও বিপণি বিতানে মূল্য ছাড়সহ নানা অফার চলছে। তবে, নকল বা নিম্নমানের প্রসাধনীর ক্ষতি থেকে বাঁচতে নির্ভরযোগ্য জায়গা থেকেই এসব প্রসাধণী সামগ্রী কেনার পরামর্শ দোকানদারদের।
এসআর/পিএস