ইউক্রেনকে পশ্চিমা দেশগুলোর অস্ত্র সহায়তার জবাবে উত্তর কোরিয়াকে অস্ত্র দিতে পারে রাশিয়া বলে জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
পরমাণু অস্ত্রধারী উত্তর কোরিয়া সফর ও দেশটির নেতা কিম জং উনের সঙ্গে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি সইয়ের একদিন পর বৃহস্পতিবার ভিয়েতনামে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
আজ শুক্রবার দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে জানায়, রুশ প্রেসিডেন্টের এ ঘোষণায় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, পিয়ং ইয়ংকে অস্ত্র সরবরাহ করা হলে তা কোরীয় উপদ্বীপকে অস্থিতিশীল করে তুলবে। তাছাড়া অস্ত্রের ধরনের ওপর নির্ভর করবে– রাশিয়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের খসড়ার লঙ্ঘন করছে কিনা।
এর আগে উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে হওয়া চুক্তি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। তিনি এই চুক্তিকে কোরীয় উপদ্বীপের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ‘গুরুতর হুমকি’ বলে বর্ণনা করেন।
ব্লিংকেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ চুক্তির জবাবে বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে ভেবে দেখবে।
শুক্রবার আল জাজিরা লিখেছে, জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়ন ঘটানোয় পশ্চিমা দেশগুলো উত্তর কোরিয়াকে একঘরে করেছে। এ প্রেক্ষাপটে তারা মস্কো ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ককে উদ্বেগের সঙ্গেই দেখছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে পুতিন হুমকি দেন যে, পশ্চিমাদের প্রতিপক্ষকে রাশিয়া অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে। কারণ, পশ্চিমারা ইউক্রেনকে ব্যয়বহুল অস্ত্র সরবরাহ করছে এবং রাশিয়ার অভ্যন্তরে লক্ষ্যবস্তুতে হামলার অনুমতি দিচ্ছে।
পুতিন কোন কোন দেশকে অস্ত্র সরবরাহ করতে পারেন, এ বিষয়ে তখন কিছু না বললেও এবার তা পরিষ্কার করলেন। তিনি জানালেন, উত্তর কোরিয়া রুশ অস্ত্র পেতে পারে।
গত বুধবার পুতিন ও কিমের মধ্যে সই হওয়া চুক্তিতে আগ্রাসনের শিকার হলে একে অন্যকে তাৎক্ষণিক সামরিক সহায়তার অঙ্গীকার ছিল। পুতিন বলেছিলেন, মস্কো প্রত্যাশা করে যে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে তার সহযোগিতা পশ্চিমের জন্য প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে। তবে ইউক্রেনের যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।
তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের সংঘাতে একে অপরের সক্ষমতা ব্যবহারের সম্ভাবনার বিষয়ে আমরা আলোচনা করিনি। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো কথা হয়নি। এর কোনো প্রয়োজনও নেই।’
তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের দাবি, এরইমধ্যে উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কামানের গোলা ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে, যা মস্কো ও পিয়ংইয়ং অস্বীকার করেছে।
পুতিন বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিলে ‘বড় ভুল’ করবে। এতে মস্কো এমন পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাবে, যা সিউলের জন্য বেদনাদায়ক হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপ বলেছে, পুতিন ও কিমের মধ্যে সই হওয়া পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহের সম্ভাবনা পর্যালোচনা করবে সিউল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক বাজারে দক্ষিণ কোরিয়ার অস্ত্র বিক্রি লাফিয়ে বেড়েছে।
রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সম্প্রতি হওয়া এ নিরাপত্তা চুক্তি কতোটা শক্তিশালী, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। কিছু বিশ্লেষক চুক্তিটিকে দেশগুলোর শীতল যুদ্ধ-যুগের জোটের পূর্ণ পুনরুদ্ধার হিসেবে দেখছেন। অন্যরা বলছেন, চুক্তিটি সারগর্ভের চেয়ে বেশি প্রতীকী।