পোষা প্রাণীর কাণ্ড-কারখানা, নাচের টিকটক বা মজার কোনো দৃশ্য- সময় কাটাতে এই ধরনের ভিডিওগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে আনন্দ দেয়।
তবে গবেষণা বলছে, দ্রুত একটা পর একটা ভিডিও দেখা বা টেনে টেনে দেখার কারণে একঘেয়েমি অবস্থাকে আরও বাজে করে তোলে।এই তথ্য জানিয়ে সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে গবেষণার প্রধান ‘ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টো’র মনোবিজ্ঞান বিভাগের পোস্টডক্টরাল ফেলো ডা. কেইটি ট্যাম আরও বলেন, “এভাবে দেখার ফলে বিষয়টার সাথে সম্পৃক্ততা তৈরি হয় না, তৃপ্তি আসে না এবং গুরুত্ব পায় না।”
বর্তমানে বিনোদনের মাধ্যম আঙ্গুলের ডগায় থাকলেও বিরক্তিকর একঘেয়ে-ভাব সহজে দূর করা যাচ্ছে না। আর বিষয়টা উদ্বেগজনক।ট্যাম ব্যাখ্যা করেন, “কারণ একঘেয়ে অনুভূতি মানসিক স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং ব্যবহারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলার সাথে সম্পৃক্ত। এরফলে দেখা দিতে পারে বিষণ্নতার লক্ষণ, শিক্ষার্থীদের বাজে ফলাফল এমনকি ধ্বংসাত্মক আচরণ।”
প্রত্যাশা বনাম একঘেয়েমির বাস্তবতা দ্রুত টেনে দেখা বা এক ভিডিও থেকে অন্য ভিডিও দেখার প্রভাবে একঘেয়েমির উদয় হওয়ার বিষয়টা উদঘাটন করতে গবেষকরা দুই পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ চালান।‘জার্নাল অফ এক্সপেরিমেন্টাল সাইকোলাজি: জেনারেল’য়ে প্রকাশিত এই গবেষণায় প্রায় ১২শ’জন অংশ নেন।প্রথম পর্যায়ে অংশগ্রহণকারীদের দুই রকম অভিজ্ঞতা দেওয়া হয়। একটি হল- কোনো রকম পরিবর্তন বা টেনে দেখার অবস্থা ছাড়া ১০ মিনিট ভিডিও অবলোকন করা। আরেকটি হল পাঁচ মিনিট দীর্ঘ সাতটি ভিডিও ১০ মিনিটের মধ্যে পরিবর্তন করে দেখা।দ্বিতীয় পর্যায়ে, প্রথমে একবার টানা ১০ মিনিটের ভিডিও দেখা। তারপর ৫০ মিনিটের একটি ভিডিও ‘ফাস্ট ফরওয়ার্ড’ বা ‘রিওয়াইন্ড’ করে অবলোকন করা।
অংশগ্রহণকারীরা প্রথমে আন্দাজ করেছিলেন যে, একটা থেকে অন্য ভিডিওতে যাওয়া বা টেনে দেখার ফলে একঘেয়েমি দূর হবে।তবে পরে তারা জানায়- একটানা যে ভিডিওগুলো দেখেছে সেগুলো তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে বেশি। আর সেসব তাদের কাছে অর্থবহ সন্তুষ্টি দিয়েছে।“একঘেয়েমি আমাদের মনোযোগের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত”- মন্তব্য করেন ট্যাম।তার কথায়, “কীভাবে সম্পৃক্ত হতে চাই আর কোন ভাবে সম্পৃক্ত হই- এই শূন্যস্থান থেকেই আমাদের মাঝে বিরক্তি বা একঘেয়ে অনুভূতির জন্ম নেয়।”“যখন একের পর এক ভিডিও পরিবর্তন করে দেখা হয়, তখন কোনো একটি ভিডিওর সাথে সম্পৃক্ততা তৈরি হয় না। ফলে আরও আকর্ষণীয় ভিডিও খুঁজতেই থাকে।”- বলেন ট্যাম।একঘেয়েমির ভালো খারাপ“এই ধরনের গবেষণার থেকে কী লাভ অর্জন হল সেটার বোঝার আগে ‘একঘেয়েমি’ সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। না হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে নেতিবাচক চিন্তার প্রকাশ ঘটতে পারে”- একই প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘মিডিয়া সাইকোলজি রিসার্চ সেন্টার’য়ের ডা. পামেলা রাটলেজ।
এই গবেষণার সাথে যুক্ত না থেকেও তিনি বলেন, “রাগ বা দুঃখের মতোই একঘেয়েমি হল অসুখী আবেগ। আর এই অনুভূতিকে বেশিরভাগ সময় ভুল বোঝা হয়।”যখন কেউ অলসতা বা উদ্দেশ্যহীনতার অভাবে একঘেয়ে বোধ করে তখন ইতিবাচক বা নেতিবাচক- দুই ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।নেতিবাচক অনুভূতি থেকে অনেকে সময় নিজেকে পরিবর্তন করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অনুভূতি জাগায়, যেটা স্বাস্থ্যকর।রাটলেজ বলেন, “যদি প্রেরণার উৎস হিসেবে একঘেয়েমি’কে দেখা হয় তবে প্রতিক্রিয়া হবে ভিন্ন। তখন হতাশা বোধ হবে কম।”সম্পৃক্ত থাকার পন্থা নিজের অভিপ্রায় বা ইচ্ছাশক্তি হল একঘেয়ে চক্র থেকে বের হওয়ার চাবিকাঠি।
ট্যাম বলেন, “স্কিপ’ বা ‘ফরওয়ার্ড’ করার আগে কোনো ভিডিও দেখতে গিয়ে সময় নিন। মনোযোগের কারণ খুঁজে বের করা চেষ্টা করুন। যেমনটি করা হয় সিনেমা হলে। হুটহাট ভিডিও সরিয়ে না দিয়ে একভাবে দেখতে পারলে সাধারণত আনন্দ পাওয়া যায়।”“এছাড়াও মাথায় রাখতে হবে কোন বিষয়টা এড়াতে চাচ্ছেন, কারণ এই ইন্টারনেট দুনিয়াতে নানান ধরনের কনটেন্ট রয়েছে। যেগুলো সব আপনার রুচিতে কুলাবে না”- মন্তব্য করেন তিনি।একঘেয়ে বা বিরক্ত হলে নিজেকে দোষীভাবার কিছু নেই। বরং এই অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে ভালোবোধ করানোর চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।এছাড়াও বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহারে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন, ডা. রাটলেজ।তার কথায়, “মনমেজাজে দিকে নজর দিন। খুঁজে বের করুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোন বিষয়গুলো নিজের মধ্যে ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিড়াল বা কুকুরের মজার ভিডিও মনের প্রভাবের কারণে বিরক্তিকর লাগতে পারে।”