ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার যেখানে খুন হন, সেই সঞ্জীভা গার্ডেনের সেপটিক ট্যাংক থেকে মরদেহের কিছু খণ্ডিত অংশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ।
ডিবিপ্রধান হারুন বলেন, উদ্ধার খণ্ডিত অংশগুলো সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মরদেহের অংশ কি না, ডিএনএ টেস্টের পর বলা যাবে।
মঙ্গলবার (২৮ মে) কলকাতার গোয়েন্দা পুলিশকে সংসদ সদস্য আনারের দেহাংশের খোঁজে সঞ্জীভা গার্ডেনের ফ্ল্যাটের কমোড, স্যুয়ারেজ লাইন ভেঙে সার্চ করার অনুরোধ জানান ডিবির হারুন। পাশাপাশি হাতিশালা লেকও সার্চের অনুরোধ করা হয়।
তবে এই দেহাংশ যে আনোয়ারুল আজিম আনারের তা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি কলকাতায় যাওয়া ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের ডিসি মো. আব্দুল আহাদ বলেন, আমরা কলকাতা স্থানীয় সাংবাদিক ও গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পেরেছি, সঞ্জীবা গার্ডেন্সের সেপটিক ট্যাংক থেকে একটি মরদেহের অংশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সেটি সংসদ সদস্য আনারের কি না তা আমরা এখনও নিশ্চিত নই। তাছাড়া কলকাতা সিআইডি বা পুলিশ আমাদের এখনও অফিসিয়ালি নিশ্চিত করেনি।
জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ওই সেফটিক ট্যাংক থেকে প্রায় ৪ কেজি ওজনের দেহাংশের মাংস উদ্ধার করেছে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, যে মাংসের টুকরো পাওয়া গেছে, তার ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। তারপর নিশ্চিত হওয়া যাবে সেটি এমপি আনারের দেহাংশ কি না।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আবাসনের সুয়ারেজ সিস্টেমের কর্মী সিদ্ধেশ্বর মন্ডল জানান, একটি কাঁচের জারে নুন মিশ্রিত পানিতে মাংসগুলি রাখা হয়েছে। মাংসের টুকরোগুলো অনেকটা পাকোড়ার মতো। এই মাংসের অংশগুলি ঘাতক কসাই জিহাদ হাওলাদার ওয়াশরুমের কমোডে ফেলে দিয়েছিল বলে আগেই নিশ্চিত হয়েছে সিআইডি।
ডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আজ সকাল বেলা হারুন স্যার কলকাতার সিআইডিকে অনুরোধ করেন সঞ্জীবা গার্ডেনের সেফটি ট্যাংক ভেঙে তল্লাশি চালানোর জন্য। স্যারের অনুরোধে সিআইডি তল্লাশি করে আশানুরূপ ফলাফল পায়।
এর আগে, লাশের সন্ধানে ভারতে যাওয়া ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদ এমপির দেহাংশ পেতে সঞ্জীবা গার্ডেনের সেপটিক ট্যাংকসহ আরও কয়েক জায়গায় তল্লাশির জন্য সিআইডিকে অনুরোধ করেছিলেন। খুনের ‘মূলহোতা’ তথা নিহতের বাল্যবন্ধু আখতারুজ্জামানসহ চার জনের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারি করেছে সিআইডি।
মঙ্গলবার নিউ টাউনের একটি শপিং মলে গিয়েছিলেন হারুন অর রশীদ। হারুন আশাবাদী ছিলেন, এমপি আনোয়ারুলের দেহাংশ মিলবেই। সিআইডি খোঁজ চালাচ্ছে। পাশাপাশি, তিনি সিআইডিকে অনুরোধ করেছিলেন, নিউ টাউনের ঘটনাস্থলের পাশে যে হ্রদ রয়েছে, সেখানেও তল্লাশি চালানো হোক। ফ্ল্যাটের যে ঘরে খুন করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, তার লাগোয়া শৌচালয়ের বর্জ্য যেখানে জমা হয়, সেখানেও খোঁজ করার অনুরোধ করেছিলেন হারুন।
হারুন ধারণা করেছিলেন, কমোডের মাধ্যমে দেহাংশ ফেলে দেওয়া হতে পারে। হাতিশালার পাশে কাঠের সেতুতেও তল্লাশি চালানোর আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনে এমপি আনারকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ অন্তত ৮০ টুকরা করে ছোট ছোট শপিংব্যাগে ভরা হয়।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শিমুল ভূইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূইয়া ওরফে আমানুল্যা সাইদ, তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমানকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশ পুলিশ। পরে এই তিনজনকে ৮ দিনের এবং কলকাতায় গ্রেপ্তার হওয়া কসাই জিহাদকে ১২ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।