প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগে সিনেটর হিসেবে প্রথম কংগ্রেসে প্রবেশ করেছিলেন জো বাইডেন। তবে এবার যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভাষণ দেয়ার জন্য কংগ্রেসে ঢুকলেন তিনি। বুধবার এ ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, বর্ণবাদ, কর পদ্ধতি প্রভৃতি বিষয় নিয়ে বাইডেন কথা বলেছেন। বুধবার রাতে দেয়া এ ভাষণের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো-
‘ম্যাডাম ভাইস প্রেসিডেন্ট, ম্যাডাম স্পিকার’
ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও পার্লামেন্টের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে এভাবেই সম্বোধন করে বক্তব্য শুরু করেন বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দু’জন নারী কংগ্রেসে প্রেসিডেন্টের বক্তৃতা দেয়ার সময় পেছনে বসেছিলেন।
বাইডেন সম্ভাষণ জানান, ‘ম্যাডাম ভাইস প্রেসিডেন্ট, ম্যাডাম স্পিকার।’
তিনি বলা শুরু করেন, ‘এই মঞ্চ থেকে এই শব্দগুলো কোনো প্রেসিডেন্ট এর আগে বলেননি- কোনো প্রেসিডেন্ট এই শব্দগুলো বলেননি, এটিই সময়ের ব্যাপার!’
‘মিথ্যার বদলে সত্য’
ভাষণের শুরুতে পূর্বসুরী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একহাত নেন বাইডেন। তিনি বলেন, ‘সংকটে থাকাকালীন একটি জাতি আমি উত্তরাধীকার সূত্রে পেয়েছি।’ যুক্তরাষ্ট্রকে ‘আগুনে জ্বলতে থাকা বাড়ি’ হিসেবে বর্ণনা করেন বাইডেন।
তিনি বলেন, ‘এখন একশ দিন পর, আমি জাতিকে জানাতে পারি, আমেরিকা আবার আগাতে শুরু করেছে।’
বাইডেন বলেন, ‘আমেরিকা আবার নতুন করে জেগে উঠছে। ভীতির বদলে আশা, মিথ্যার বদলে সত্য, অন্ধকারের বদলে আলো পছন্দ করেছে। একশ দিনের উদ্ধার ও নবায়ণকরণে আমেরিকা এখন ওড়ার জন্য প্রস্তুত। আমরা আবার কাজ করছি। আবার স্বপ্ন দেখছি। আবার আবিষ্কার করছি। বিশ্বকে আবার নেতৃত্ব দিচ্ছি।
‘পদ্ধতিগত বর্ণবাদের শেকড় উপড়ে ফেলুন’
মিনেয়াপলিসে ২০২০ সালে জর্জ ফ্লয়েডের নিহত হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদী উত্তেজনা বেড়ে চলছে।
পুলিশ কর্মকর্তার হাতে ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনা উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, ‘আমরা সবাই বিচারের হাঁটু কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকার গলার ওপর দেখেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দ্বিমত পোষণ করতে পারব না যে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখন দেশের ভেতরে সবচেয়ে মারাত্মক যে সন্ত্রাসী হুমকি দেখতে পাচ্ছে তা হলো, শ্বেতাঙ্গ আধিপদ্যবাদী সন্ত্রাস।’
তবে তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনগণের মধ্যে আস্থা অর্জনে, আমাদের অপরাধ বিষয়ক বিচার ব্যবস্থায় পদ্ধতিগত বর্ণবাদের শেকড় উপরে ফেলতে কাজ করে যেতে হবে।’
ধনীদের ‘তাদের ন্যায্য অংশ প্রদান করতে হবে’
বাইডেনের ভাষণের বড় অংশ জুড়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অবকাঠামো ও সামাজিক প্রকল্প ঢেলে সাজানোর জন্য তার বিশাল বাজেটের পরিকল্পনার পক্ষে কথা বলা। এই পরিকল্পনা মূলত দাঁড়িয়ে আছে ধনীদের ওপর কর বৃদ্ধির ওপরে। প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেন, এটিই ন্যায়বিচার।
তিনি বলেন, ‘কর্পোরেট আমেরিকা এবং ধনী এক শতাংশ আমেরিকানদের ন্যায্য অংশ প্রদানের সময় এসেছে। শুধু তাদের ন্যায্য অংশ প্রদান।
প্রচুর কোম্পানি সুইজারল্যান্ড, বারমুডা, কেম্যান দ্বীপপুঞ্জের করের আশ্রয়স্থলের মাধ্যমে কর দেয়া এড়িয়ে যায়। তারা কর ফাঁকি ও কর ছাড়ের মাধ্যমে সুবিধা নেয়। এর ফলে বিদেশে কর্মক্ষেত্র তৈরি হয় এবং বিদেশে মুনাফা স্থানান্তরিত হয়। এটা ঠিক না।’
যেসব মিলিয়নিয়ার ও বিলিয়নিয়ার কর ফাঁকি দেবে তাদেরকে সরকার দমন করবে বলেও উল্লেখ করেন বাইডেন। তিনি বলেন, ‘দেখুন, আমি কাউকে শাস্তি দিতে চাই না- কিন্তু এই দেশের মধ্যবিত্তদের ওপর আমি করের বোঝা চাপাতে চাইনা।’
বাইডেন বলেন, ‘যা আমি প্রস্তাব করেছি তা ন্যায্য।’
‘আমাদের প্রমাণ করতে হবে গণতন্ত্র এখনও কার্যকর’
বাইডেন তার ভাষণ শেষ করেন গত ৬ জানুয়ারিতে ট্রাম্প সমর্থকদের দ্বারা ইউএস ক্যাপিটলে হামলার ঘটনাকে স্মরণ করে।
এসব কর্মকাণ্ড কাটিয়ে উঠে গণতন্ত্র আবার দাঁড়াতে সক্ষম তা প্রমাণ করতে তিনি আইনপ্রণেতাদের প্রতি অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, ‘গৃহযুদ্ধের পর এই দাঙ্গা আমাদের গণতন্ত্রের ওপর সবচেয়ে জঘন্য আক্রমণ।’
বাইডেন বলেন, ‘আমাদের গণতন্ত্র কি আমাদের জনগণের সবচেয়ে চূড়ান্ত প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে পারে? আমাদের গণতন্ত্র কি মিথ্যা, ক্রোধ, ঘৃণা এবং ভয়কে কাটিয়ে উঠতে পারে যা আমাদের বিভক্ত করে দিয়েছে? আমেরিকার বিরোধীরা – বিশ্বের স্বৈরশাসকরা বাজি ধরেছেন যে এটি সম্ভব নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা বিশ্বাস করে যে আমরা প্রচণ্ড রাগ, বিভাজন এবং ক্রোধে পরিপূর্ণ। আমেরিকান গণতন্ত্রের সূর্য অস্ত যাচ্ছে তার প্রমাণ হিসেবে তারা ক্যাপিটলে হামলার ছবিগুলোর দিকে তাকায়।’
‘তারা ভুল। আমাদের প্রমাণ করতে হবে যে তারা ভুল। আমাদের প্রমাণ করতে হবে গণতন্ত্র এখনও কার্যকর,’ বলেন বাইডেন।