বিগত সরকারের আমলে আটকে দেয়া হয়েছে অনেক সিনেমা। বাদ যায়নি ওয়েব সিরিজ। সেন্সর বোর্ডে আটকে থাকা সিনেমা নিয়ে নির্মাতারা প্রতিবাদ করলেও কোনো সুরাহা হয়নি বিগত সরকাড়ের আমলে। তবে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বদলে গেছে প্রেক্ষাপট। শুধু অমীমাংসিত নয়, আরো যেসব চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে আটকে আছে- সবগুলোরই মুক্তি চাইছেন সিনেমা সংশ্লিষ্টরা। এমনকি সেন্সর প্রথারই বিলুপ্ত করার জোর দাবি জানাতে জোটবদ্ধ হয়েছেন অন্য নির্মাতারাও।
অন্যদিকে, দীর্ঘদিন আটকে থাকা সিনেমা নিয়ে সুখবর দিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। রোববার (১৮ আগস্ট) সকালে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তথ্য উপদেষ্টা। সেখানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। সেন্সর বোর্ড প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি। সাংবাদিকরা তথ্য উপদেষ্টাকে সেন্সর বোর্ড এবং আটকে থাকা সিনেমা গুলো প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সেন্সর বোর্ডের কারণে যে-সব ছবি আসেনি সেগুলো নিয়ে আমরা দ্রুতই বসব। এছাড়াও সেন্সর বোর্ডকে দ্রুততার সঙ্গে পুনর্গঠন করব। সেন্সর বোর্ড না থাকার যে দাবি, সেটিও আমরা আলোচনা করে যৌক্তিকতা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব।
সেন্সর নিয়ে নতুন সিদ্ধান্তের আসার কথা জানান উপদেষ্টা। এতে আশার আলো দেখছেন অনেক নির্মাতারা। এ তালিকায় আছেন দেশে জনপ্রিয় নির্মাতা রায়হান রাফী। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনের জন্য নির্মিত রায়হান রাফীর ওয়েব ফিল্ম ‘অমীমাংসিত’ প্রদর্শনের উপযোগী নয় বলে জানিয়েছিল চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড। ওয়েব কনটেন্টের ওপর সেন্সর বোর্ডের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু থেকে হচ্ছিলো সমালোচনা। সাম্প্রতিক সেন্সর বোর্ড থেকে মুক্তির অনুমতি না পাওয়া সিনেমার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘অমীমাংসিত’। চলতি বছরের এপ্রিলে ওয়েব ফিল্মটি আটকে দেয়া হয়। সে সময়ে অনেক নির্মাতা এবং কলাকুশলীরা প্রতিবাদ জানালেও মেলেনি সমাধান। তবে সেন্সর বোর্ড নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন ভাবনায় ফের ‘অমীমাংসিত’ নিয়ে ভাবছেন রায়হান রাফী।
রায়হান রাফীর ফেসবুক পোস্ট।
রায়হান রাফী এরই মধ্যে ‘অমীমাংসিত’ নিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন। রোববার (১৮ আগস্ট) রাফী তার ফেসবুক থেকে ‘অমীমাংসিত’র প্রচারণামূলক একটি ভিডিও পোস্ট করেন। শহীদুল আলম সাচ্চুকে দেখা যায়। পোস্টটি শেয়ার করে ক্যাপশনে
‘রায়হান রাফী লিখেছেন, জনগণকে আর বোকা ভাবা যাবে না! অমীমাংসিত আসছে…আসতেই হবে…’। এ থেকেই রাফী ভক্তরা ওয়েব ফিল্মি মুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
‘অমীমাংসিত’ মুক্তি দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চ্যানেল 24 অনলাইনকে রায়হান রাফী বলেন, শিগগির ‘অমীমাংসিত’ আবার সেন্সরে দেব। আমরা সবাই চাই, দ্রুত ‘অমীমাংসিত’ রিলিজ হোক। যেহেতু আইনগতভাবে আটকে রাখা হয়েছে, আমরা আইনগতভাবে সমাধান করবো। আশা করছি, দ্রুত সবকিছু সমাধান হবে। যদিও ওটিটিতে সেন্সরের নিয়ম নেই। তবুও আমাদের সেন্সর করতে বলা হয়েছিল। আমরা সেন্সর করেও ফেলেছিলাম। পরে হঠাৎ তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছিল, আমরা ‘অমীমাংসিত’ দর্শকদের দেখাতে পারবো না। আমরা পুনরায় তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে আবেদন করতে যাচ্ছি। আমরা তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে চাইবো, ‘অমীমাংসিত’ যেন ছেড়ে দেওয়া হয়।
গুঞ্জন রয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির খুনের ঘটনা অবলম্বনে ‘অমীমাংসিত’ নির্মিত হয়েছে। রায়হান রাফী বলেন, একটি কাল্পনিক কাহিনি নিয়ে সিনেমাটি নির্মাণ করেছি এবং সেই কেসটি ‘অমীমাংসিত’। বাংলাদেশে এমন অনেক কেস আটকে আছে। এখন গল্প যদি বাস্তবের সঙ্গে কিছুটা মিলে গেলেই তা দেখানো যাবে না, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি ‘অমীমাংসিত’র প্রথম টিজার প্রকাশ করা হয়েছিল। সেটা দেখে অধিকাংশ দর্শক আঁচ করেছিলেন, এটি আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ড ঘিরে নির্মিত। যদিও এই বিষয়ে রাফী বা আইস্ক্রিনের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি। উল্লেখ্য, ওয়েব ফিল্মে মুখ্য দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ ও তানজিকা আমিন।