মুঠোফোনে কথা বলা সময় কলড্রপ হলে মোবাইলফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোকে গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তবে কেবল অননেট অর্থাৎ একই কোম্পানির নম্বরের মধ্যে কল কেটে গেলেই এই ক্ষতিপূরণ পাবেন গ্রাহক। এ নির্দেশনা ১ অক্টোবর হতে কার্যকর হবে।
মোবাইলফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রন সংস্থা—বিটিআরসি। বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
বিটিআরসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রথম ও দ্বিতীয় কলড্রপের ক্ষেত্রে প্রতিটি কলড্রপের জন্য ৩০ সেকেন্ড বা ৩টি পালস (এক পালস ১০ সেকেন্ড) ক্ষতিপূরণ গ্রাহককে দিতে হবে। আর তৃতীয় হতে সপ্তম কলড্রপের ক্ষেত্রে প্রতিটি কলড্রপের জন্য ৪০ সেকেন্ড বা ৪টি পালস পাবে গ্রাহক।
সংবাদ সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং ডাক ও টেলিযোযোগ সচিব মো. খলিলুর রহমান।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘অপারেটররা তাদের নেটওয়ার্ক উন্নয়নে মনোযোগ দিলে সেবার মান ভালো করলে ক্ষতিপূরণ দিতে হয় না। প্রথম ও দ্বিতীয় কলড্রপে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ফলে এখন সব গ্রাহকরাই কলড্রপ হলেই ক্ষতিপূরণ পাবে।’
সম্মেলনে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্রসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এতদিন কলড্রপের জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ দিতো না অপারেটর সংস্থাগুলো। বিশ্লেষণে জানা যায়, গ্রাহকের কলড্রপের ক্ষেত্রে ৬৫ শতাংশই ছিলো প্রথম কলড্রপ।
নতুন নির্দেশনায়, কলড্রপ নিয়ে সব মোবাইল ফোন অপারেটরদের জন্য অভিন্ন ইউএসএসডি কোড ১২১৭৬৫# ডায়াল করে একজন গ্রাহক জানতে পারবেন তার আগের দিন, সপ্তাহ বা মাসিক অননেট কলড্রপের পরিমাণ কতো।
এরসঙ্গে আগের কিছু নির্দেশনাও থাকছে। যেমন, কলড্রপের ফলে পাওয়া কল মিনিট পরবর্তী দিনের প্রথম কল হতে ব্যবহারযোগ্য হবে। ফেরত পাওয়া মিনিট পুরোপুরি ব্যবহার শেষ হওয়ার আগে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট হতে কোনো টাকা কাটা যাবে না।
এছাড়া কলড্রপের জন্য ফেরত দেয়া টকটাইমের বিষয়ে গ্রাহককে এসএমএস করে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার মধ্যে জানাতে হবে মোবাইলফোন অপারেটরদের।
অফনেট কলড্রপের ক্ষতিপূরণের কী হবে ?
অফনেট কলড্রপের ক্ষতিপূরণও যেন গ্রাহক পেতে পারে সেজন্য কাজ করছে বিটিআরসি।
অফনেট কলড্রপের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ চলে যাওয়া, এনটিটিএন ফাইবার কাটায় নেটওয়ার্ক কাটা, ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক মানসম্মত না হওয়া, যন্ত্রপাতি অচল হওয়া, আইসিএক্স সুইচ ক্যাপাসিটিসহ বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
বিটিআরসি বলছে, অফনেট কলড্রপর ক্ষেত্রে প্রেরণকারী ও গ্রহণকারী যেকোনো অপারেটরের কারিগরী সীমাবদ্ধতার কারণে কলড্রপ হতে পারে। নানা অংশীজন থাকায় অফনেট কলড্রপের মূল কারণ বের করা এখন জটিল।
তবে বিটিআরসি ‘টেলিকম মনিটরিং সিস্টেম’ বা টিএমএস প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যেখানে অফনেট কলড্রপের কারণ সনাক্ত করা সহজ হবে এবং দায়ী প্রেরক ও গ্রাহক অপারেটরকে দায়বদ্ধতায় আনতে পারবে।
কলড্রপের বর্তমান পরিস্থিতি :
চলতি বছরের মে মাসজুড়ে কলড্রপের পরিসংখ্যান বলছে, ওই ৩১ দিনে গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংকের মোট অননেট কলড্রপ হয়েছে ৭ কোটি ৯৯ লাখ ৬৬ হাজার ৩৩২টি। যেখানে প্রথম কলড্রপ ৫ কোটি ১৪ লাখ ৪৬ হাজার ৩৪৭ টি, দ্বিতীয় কলড্রপ ১ কোটি ৪৭ লাখ ৩০ হাজার ১৭৮ টি, তৃতীয় ৫৬ লাখ ৬৮ হাজার ৫৬৬টি, চতুর্থ ২৭ লাখ ৪২ হাজার ৭৫৬টি, ৫ম ১৫ লাখ ৪১ হাজার ১৬০ টি, ৬ষ্ঠ ৯ লাখ ৫০ হাজার ৩১০ টি এবং ৭ম ১০ লাখ ২৬ হাজার।
এর বাইরে ৮ম হতে আরও কলড্রপের পরিমাণ ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৮৯২ টি।
পিএসএন/এমঅাই


