আগামীকাল বা পরশুর মধ্যে অনেক বড় কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানানো হবে বলে জানিয়েছেন নতুন দায়িত্ব নেওয়া সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
তিনি বলেন, আমি খুবই ভাগ্যবান যে আমি একটা গ্রেট টিম পেয়েছি। আমরা কিছু এক্সাইটিং ও ইম্পর্টেন্ট প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি। আপনারা হয়তো আগামীকাল বা পরশুর মধ্যে জানতে পারবেন।
বুধবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, আমি বাইরে থেকে জানতাম যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় একটি ঘুমন্ত মন্ত্রণালয়। ভেতরে তো এসে দেখি এখানে কাজ করার অনেক সুযোগ আছে।
তিনি বলেন, এখানে আমার আসার মূল কারণ হচ্ছে নতুন বাংলাদেশের কী ন্যারেটিভ আমরা নির্মাণ করবো, ন্যারিটিভ কথা দিয়ে নির্মাণ হবে না, নির্মাণ হবে চলচ্চিত্র-থিয়েটার-গান, এসব দিয়ে।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, আমার চোখে কখনো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাজ চোখে পড়েনি। অনুষ্ঠান করতো খুব। একটা ন্যারেটিভ চেঞ্জ করা, মানুষের মাথায় একটা নতুন গল্প তৈরি করা- এটা আমি খুব একটা দেখিনি। আমি এসে দেখলাম যে ব্যাপক সুযোগ আছে।
তিনি বলেন, আমি একটা কথা বলেছি, আইন-কানুনের ব্যাপারটা আপনারা দেখবেন। আমরা কেউ কোনোদিন যেন আইনের বাইরে না যাই। আইনের মধ্যে থেকে আমি যে স্বপ্নগুলো দেখছি, এটা কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, আপনারা আমাকে বলেন। আমি আমার মন্ত্রণালয়ের প্রত্যেকের কাছ থেকে ভালো সমর্থন পাচ্ছি।
আপনি কী কী বিষয় অগ্রাধিকার দেবেন, এ বিষয়ে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, কাল বা পরশুর মধ্যে আপনারা অনেক বড় কিছু জানতে পারবেন।
‘আমার অগ্রাধিকার হচ্ছে, আমরা এমন একটা বাংলাদেশের ন্যারেটিভ তৈরি করতে চাই যে বাংলাদেশে বহু ধর্ম, বহু ভাষা, বহু জাতিগোষ্ঠী এক জায়গায় থাকে। আমাদের একটা সম্প্রীতির কথা বলে এবং আমাদের সম্পর্কে যে নানা উল্টাপাল্টা ন্যারেটিভ তৈরি করা হচ্ছে বাইরে, সেই ন্যারেটিভগুলো স্ট্রংলি কাউন্টার করাটা আমার কাজ।’
সংস্কৃতি উপদেষ্টা আরও বলেন, দ্বিতীয় একটা মেজর কাজ হচ্ছে, গত ১৫ বছর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চাদরে ঢেকে কীভাবে দুঃশাসনকে জায়েজ করা হয়েছে, কীভাবে গুম, খুনকে জায়েজ করা হয়েছে, ব্যাংক লুটকে জায়েজ করা হয়েছে! এখন আর ১০ কোটি টাকার কোনো খেলা নেই, দুর্নীতি সব হাজার কোটি টাকা থেকে শুরু হয়। এই গল্পগুলো শুধু দেশের মানুষ নয়, দেশের বাইরেও তুলে ধরতে হবে। এই দুঃশাসনের ন্যারেটিভ যদি মানুষ জানে, তারা (আওয়ামী লীগ) কী করেছিল, এটাই তো জুলাই স্পিরিট। শহীদেরা তো শহীদ হয়েছে এই কারণে। সবাইকে বলা এটা যেন আর না ঘটে। না ঘটে সেটা বলতে হলে আগে জানাতে হবে কী ঘটেছিল।
গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের কর্মসূচি প্রত্যাহার
বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজীদ সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা জানেন গত ২ অক্টোবর একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় শিল্পকলায় নাটক বন্ধ হয়ে যায়। আমরা ৮ নভেম্বর একটি প্রতিবাদ সভা করি। সেই প্রতিবাদ সভায় কিছু দুষ্কৃতকারী আক্রমণ করে, সেখানে আমাদের কিছু শিল্পী আহত হন।
তিনি বলেন, পরবর্তী সময়ে আমরা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে পেয়েছি। তাকে আমরা জানিয়েছি যে ১৫ নভেম্বর আমরা সারাদেশে সব জেলায় প্রতিবাদ সভা করবো। তিনি আমাদের বললেন- কেন প্রতিবাদ সভা করবেন, আমরা আপনাদের নিরাপত্তা দেব। আমরা আপনাদের পাশে দাঁড়াতে চাই। সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চার বিকাশের জন্য এই মন্ত্রণালয়ের যা করণীয় উনি তা করবেন। আমরা উনার কথায় খুব খুশি হয়েছি।
সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিল্পকলা একাডেমিতে দুষ্কৃতকারীরা আগুন দিয়েছে। উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছেন তিনি এগুলো মেরামত করবেন।
তিনি বলেন, আমাদের যে ১৫ নভেম্বরের কর্মসূচি ছিল, আমরা তার সঙ্গে অত্যন্ত খুশি হয়ে আলোচনা সাপেক্ষে আমরা বলেছি যে, আমরা এটা প্রত্যাহার করে নিয়েছি।
এ সময় সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, যেসব ব্যক্তি উস্কানি এবং নানা রকম কাজকর্ম করছে ফেডারেশন সেসব ব্যক্তির দায়িত্ব নেবে না। ফেডারেশন পরিষ্কার বলেছে, ফেডারেশন বা থিয়েটারগুলোর কাজ শিল্পচর্চা করা, সমাজের দর্পণ হয়ে কাজ করা। উনারা কারও বি-টিম হয়ে খেলার জন্য প্রস্তুত নন এবং রাজি নন।