কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে গলায় জুতার মালা দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে হেনস্থা করার ঘটনায় দুই দিন অতিবাহিত হলেও এ ঘটনায় মামলা হয়নি। মামলার বাদী ভুক্তভোগী পরিবার হবে নাকি পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে এ দোটানায় রয়েছে পুলিশ। তবে মঙ্গলবার সকালে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আক্তারুজ্জামান সমকালকে বলেছেন, আজকের মধ্যে মামলা দায়ের করার বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে।
ভিডিও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠেছে। ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশ আসার পর থেকেই পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিম মাঠে অভিযান চালাচ্ছে। তবে এখনো জড়িতদের কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
গত রোববার ওই ঘটনার পরই এলাকা ছাড়েন আব্দুল হাই কানু। গতকাল রাতে তার পরিবার জানিয়েছে, তিনি বর্তমানে ফেনীতে অবস্থান করছেন।
এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে এরই মধ্যে ৭-৮ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে আগেই জড়িতরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
স্থানীয় সূত্র বলছে, মুক্তিযোদ্ধা কানু ছিলেন উপজেলা কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তার সঙ্গে স্থানীয় সাবেক এমপি ও রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হকের ছিল দলীয় বিরোধ। এলাকায় ২০১৬ সালে যুবলীগ নেতা রানা হত্যা মামলায় তিনি (কানু) ও তার ছেলে বিপ্লব ছিলেন চার্জশিটভুক্ত আসামি। এ মামলায় কানু গ্রেপ্তারও হন।
স্থানীয় একাধিক সূত্র বলছে, এলাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে প্রবাসী আবুল হাসেমের পরিবারের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। ঘটনার পুরো নেতৃত্ব দেন জামায়াত সমর্থক সেই আবুল হাসেম।
ঘটনার পর থেকে জামায়াত ঘটনার সঙ্গে দলের কারও সম্পৃক্ততার বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও সোমবার ঘটনায় জড়িত থাকায় দুই সমর্থককে বহিষ্কারের কথা জানায়। এরা হচ্ছেন- চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কুলিয়ারা গ্রামের মৃত আবদুল বারেকের ছেলে প্রবাসী আবুল হাসেম ও মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে মু. অহিদুর রহমান।
ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে তারা ঘটনায় নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। জামায়াতে ইসলামী কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা শাখা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দুইজনকে বহিষ্কারের কথা নিশ্চিত করেছে।
এদিকে ওই মুক্তিযোদ্ধার ছেলে স্থানীয় বাতিসা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া আজ সকালে সমকালকে বলেন, প্রশাসন বলেছিল তারা বাদী হয়ে মামলা করবে। আমরা মামলা করবো কীভাবে, জীবন নিয়েই এখন শঙ্কিত আছি। বাড়িতে গেলে কে নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিবে। বাড়ি ঘর থেকেও কেন ফেনীতে ভাড়া বাসায় থাকতে হচ্ছে। তবুও আমি আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলছি। আসামিদের তালিকা চূড়ান্ত করা আছে। আজকের মধ্যে হয়তো মামলার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
আজ চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) এটিএম আক্তারুজ্জামান সমকালকে বলেন, ঘটনার পর ভিডিও ফুটেজ দেখে এরই মধ্যে ৭-৮ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। কিন্তু গণমাধ্যমে জানানোর মতো কোনো অগ্রগতি এখনো নেই। আমরা বসে নেই। গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। মামলা দায়েরের বিষয়টি হয়তো আজই চূড়ান্ত হতে পারে।
আগে গত রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে চৌদ্দগ্রামের নিজ এলাকা কুলিয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ওই মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করা হয়।