কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেবেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) দুপুরে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে মিরপুর, পল্লবী, বাড্ডা ও মুগদা নির্বাচনী এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা জানান তিনি।
দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বিরাজ করলেও বিএনপি-জামায়াত ঘাপটি মেরে বসে থেকে আরও খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে বলে এ সময় নেতাকর্মীদের সতর্ক করেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, সম্প্রতি আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। যারা আহত হয়েছেন তাদের প্রতিও আমাদের সহানুভূতি জ্ঞাপন করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করেছেন। তদন্ত কমিশন কাজ শুরু করেছে।
এসব ঘটনায় সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতা নজিরবিহীন তাণ্ডবে আমাদের দেশ, আমাদের মাতৃভূমি আক্রান্ত হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের ত্যাগ-সংগ্রাম ও লড়াইয়ের ফলে যে বিজয়ী বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ সাধীনতার সার্বভৌমত্ব আক্রান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে শেখ হাসিনার মেগা প্রজেক্ট পদ্মা সেতু, ঢাকা এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেলসহ বাংলাদেশের মেগা প্রজেক্টগুলো আজ আক্রান্ত। বিদেশিরাও পরিদর্শন করে স্তম্ভিত হয়েছেন, এ রকম ধংসযজ্ঞ কী করে সম্ভব তা বলেছেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এ থেকে এটাই প্রমাণিত ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করে বিএনপি-জামায়াত তাদের সেই চিরপরিচিত আগুন সন্ত্রাস নিয়ে মাঠে নেমেছে। অর্জনগুলোকে ধংস করতে পাঁয়তারা করছে।
তারেক রহমানের নির্দেশে দেশে ধংসযজ্ঞ হয়েছে দাবি করে কাদের বলেন, লন্ডনে পলাতক, খুনি জিয়ার পুত্র তারেক রহমান অর্থ এবং নির্দেশে সারাদেশ থেকে নাশকতা মামলার আসামি, সন্ত্রাসীদের ঢাকায় জড়ো করেছে এবং তারাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এসব নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের এবং হত্যাযজ্ঞের দায় তাদের। যারা সারি সারি লাশের ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতা দখলের দুঃস্বপ্নে বিভোর।
‘এই আন্দোলন তারেকের নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন। এই আন্দোলনে যতক্ষণ শিক্ষার্থীরা ছিল, ততক্ষণ কোনো সহিংসতা বাংলাদেশে হয়নি, পুলিশও সহনশীল ভূমিকা পালন করেছে। সব পক্ষ ধৈর্য ধারণ করেছে। এই অন্দোলন বিএনপি-জামায়াতের সশস্ত্র ক্যাডাররা টর্গেট করে হামলা চালিয়েছে। এটা পুরোপুরি পরিকল্পিত, কোথায় কোথায় আক্রমণ করবে এটা তারা আগে থেকে নীলনকশা তৈরি করেছে এবং তার মহরা দিয়েছে মাসের পর মাস।’ বলেন সেতুমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদের সেই ২০১৩/১৪/১৫ সালের অগ্নি সন্ত্রাসীদের ঢাকায় এনে তাণ্ডব চালিয়েছে। এই আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। তারেক জিয়ার নির্দেশে বিএনপি-জামায়াতের সশস্ত্র ক্যাডাররাই এই হামলা চালিয়েছে। এটা নিয়ে আর কারও কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, কিছুদিন আগে ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির কমিটিতে পদায়ন হয়েছে। এই হামলা পরিচালনার জন্য তাদের পদায়ন করেছে। পরিকল্পিতভাবে তাদের পদায়ন করা হয়েছে, কোথায় কে আক্রমণ করবে, কারা সহযোগিতা করবে, সব নীলনকশা আগে থেকে করে রেখেছে। মির্জা ফখরুল মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবারও উসকানি দিচ্ছে। কেউ আগুন নিয়ে খেলবে না। তারেক রহমানকে লন্ডন থেকে এনে ক্ষমতায় বসানোর নীলনকশা আজ জাতির সামনে স্পষ্ট হয়ে গেছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের জনগণ দেশের শান্তি-স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী, উন্নয়নবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে আওয়ামী লীগ প্রস্তুত।
তিনি বলেন, আমরা দেশবাসীকে কোনো ধরনের গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। গুজব একটি সন্ত্রাস, মাদকের মতো। গুজব আপনার সন্তানকে সর্বনাশের দিকে ঠেলে দিতে পারে। কাজেই এই গুজব প্রতিরোধ করতে হবে। যেকোনো পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সব সংসদ সদস্য, নেতৃবৃন্দ, দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
কাদের বলেন, সেনাবাহিনী অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করছে, কারফিউতে সেনাবাহিনী কোথাও পরিস্থিতি শান্ত করতে একটা গুলি ছুড়েছে এমন নজির আমাদের কাছে নেই।
আরও বড় ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হতে পারে বলে সতর্ক করে কাদের বলেন, পরিস্থিতি আজ শান্তিপূর্ণ, এটাই কিন্তু শেষ নয়। তারা কিন্তু ঘাপটি মেরে বসে আছে। এরা ঘাপটি মেরে বসে আছে আরও খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। মির্জা ফখরুল কী করে বলতে পারে বিএনপি আগুন সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না। এই মিথ্যাচারের জন্য নোবেল পুরস্কার থাকলে সেটা মির্জা ফখরুলকে দেওয়া হতো।
তিনি বলেন, বিএনপি আগুন সন্ত্রাস করে না, ১৩ সালে কে করেছে? ১৪ সালে কে করেছে? ১৫ সালে কে করেছে? বিএনপি সেই পুরোনো দিনের চেহারা আবারও তুলে ধরেছে। তারা নির্বাচন চায় না, গণতন্ত্র চায় না, তারা ক্ষমতায় যেতে চায় সন্ত্রাসী কায়দায়, চোরাগোপ্তা পথে অগ্নিসন্ত্রাস করে তাণ্ডব চালিয়ে তারা ক্ষমতায় যেতে চায়। শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্রের পথ বিএনপি-জামায়োতের পথ নয়। তাদের পথ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে রক্তের ওপর দিয়ে ক্ষমতা দখল করতে চায় তারা। রক্তের স্রোতের মধ্যে তারা ক্ষমতা চায়।
সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুস সবুর, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।