উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে বড় ক্ষেপণাস্ত্রের পাশে দাঁড়িয়ে দেশটির শীর্ষ নেতা কিম জং উন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বৈরি নীতি ও দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বিকাশের পাল্টায় তার দেশের অস্ত্র কর্মসূচি অব্যাহত রাখা জরুরি।
যুদ্ধ শুরু করতে নয়, পিয়ংইয়ং কেবল আত্মরক্ষার জন্যই সামরিক বাহিনীর কলেবর বাড়াচ্ছে, কিম সোমবার এক অস্ত্র প্রদর্শনীতে এ মন্তব্যও করেন বলে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ-র মঙ্গলবারের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
পিয়ংইয়ংয়ে অনুষ্ঠিত এ ‘আত্মরক্ষামূলক ২০২১’ প্রদর্শনীতে দেওয়া বক্তব্যে কিম দক্ষিণ কোরিয়ার সমরাস্ত্র নির্মাণের কথা উল্লেখ করে জানান, উত্তর কোরিয়া তার প্রতিবেশীর সঙ্গে লড়াই করতে চায় না।
“আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করার কথা আলোচনা করছি না, বরং আক্ষরিক অর্থে যুদ্ধকে প্রতিরোধ করতে এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যুদ্ধ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছি,” বলেন তিনি।
উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন দলের পত্রিকা রোডং সিনমুনে প্রকাশিত ছবিতে কিমকে একগাদা অত্যাধুনিক অস্ত্রের পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখা গেছে, এসব অস্ত্রের মধ্যে ছিল হোয়াসং-১৬, যেটি পিয়ংইয়ংয়ের সবচেয়ে বড় আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র।
২০২০ সালের অক্টোবরে এক কুচকাওয়াজে এটি উন্মোচন করা হলেও এখন পর্যন্ত এর কোনো পরীক্ষার খবর পাওয়া যায়নি।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের ফুটেজে হাস্যজ্জ্বল কিমকে ঊর্ধ্বাঙ্গ উন্মুক্ত সৈনিকদের হাত দিয়ে সহকর্মীর বুকে রাখা ইট ভাঙা ও শক্তি দেখাতে শরীরজুড়ে মোড়ানো শেকল ছিড়ে ফেলা দেখে করতালি দিতে দেখা গেছে।
আকাশে রঙবেরঙের ধোঁয়া ছাড়া জঙ্গিবিমানকে স্যালুট করেন তিনি, তাকে প্রদর্শনীতে রাখা ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর আশপাশে ঘোরাঘুরি করতেও দেখা গেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো উত্তরের প্রদর্শনীতে যেসব অস্ত্র দেখা গেছে, সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য হচ্ছে কোরীয় উপদ্বীপের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ। টেকসই কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য ওয়াশিংটন পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে শর্তহীন আলোচনায় বসতে আগ্রহী বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পিয়ংইয়ং বলেছে, ওয়াশিংটন যতক্ষণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার মতো নীতি বজায় রাখবে, ততক্ষণ তাদের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী নয় তারা।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দুই কোরিয়াকেই স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রসহ বিভিন্ন সমরাস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে দেখা গেছে। দক্ষিণ কোরিয়া প্রথমবার সাবমেরিন থেকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, বিমানবাহী রণতরী বানানোর পরিকল্পনা করছে, কিনেছে আমেরিকার বানানো এফ-৩৫ স্টেলথ জঙ্গিবিমান।
দক্ষিণ কোরিয়াও সম্প্রতি তাদের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির গতি বাড়িয়েছে। দেশটি তাদের প্রধান পারমাণবিক চুল্লির বিস্তৃতির কাজও শুরু করেছে বলে অনুমান করছেন বিশ্লেষকরা। এই চুল্লি পরমাণু বোমার জ্বালানি বানাতে ব্যবহৃত হয়।
এর মধ্যেই গত সপ্তাহে দুই কোরিয়া তাদের মধ্যে যোগাযোগের হটলাইন ফের চালু করেছে; কয়েকমাস আগে পিয়ংইয়ং এই হটলাইন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল।
দুই কোরিয়ার মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে সিউলের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে পিয়ংইয়ং; কয়েকদিন আগেই তারা অস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে দক্ষিণের দ্বিচারী আচরণের সমালোচনা করেছিল।
কিম বলেছেন, সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করতে সিউলের ‘অনিয়ন্ত্রিত ও বিপজ্জনক’ চেষ্টা কোরীয় উপদ্বীপের সামরিক ভারসাম্য নষ্ট করে দিচ্ছে, সামরিক অস্থিতিশীলতা ও বিপদ বাড়াচ্ছে।
“আমাদের হুমকি মোকাবেলার অযৌক্তিক অজুহাতে দক্ষিণ কোরিয়া বিভিন্ন সময় খোলামেলাভাবেই সামরিক শক্তিতে আমাদের ছাড়িয়ে যাওয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করেছে,” বলেছেন তিনি।