আফগানিস্তান থেকে নিজেদের লোকজন সরিয়ে নিতে বিশাল এক সামরিক প্লেন পাঠিয়েছিল জার্মানি। কয়েকশ মানুষ পরিবহনের ক্ষমতা থাকলেও সেটি কাবুল বিমানবন্দর ছেড়েছে মাত্র সাতজন নিয়ে। মঙ্গলবার রয়টার্স, আনাদোলু এজেন্সিসহ বেশ কিছু গণমাধ্যম এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পর আফগানিস্তানে সবচেয়ে বেশি সেনা পাঠিয়েছিল জার্মানি। সেখানে তালেবান ক্ষমতা দখলের পরিপ্রেক্ষিতে জার্মান-আফগান দ্বৈত নাগরিকত্ব সম্পন্ন লোকজন, মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবীসহ বিদেশি সেনাদের সহায়তা করা কয়েক হাজার আফগানকে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় দেশটি।
গত সোমবার রাতে জার্মানির একটি এ৪০০এম প্লেন কাবুল বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ব্রিটিশ বিমান বাহিনীর তথ্যমতে, এই মডেলের একটি প্লেনে গাড়ি, হেলিকপ্টারসহ সুসজ্জিত ১১৬ জন সেনা পরিবহনের সুবিধা রয়েছে। তবে খালি অবস্থায় সেটি দুই শতাধিক মানুষ পরিবহন করতে পারে বলে জানিয়েছে আনাদোলু এজেন্সি।
জার্মান দৈনিক বিল্ডের বরাতে আনাদোলু জানিয়েছে, সোমবার রাতে কাবুলে অবতরণ করা প্লেনটিতে শুধু জার্মান দূতাবাসের তালিকাভুক্ত কিছু লোক ওঠার কথা ছিল। তবে তাদের মধ্যে মাত্র সাতজন সময়মতো বিমানবন্দরে পৌঁছাতে সক্ষম হন। ফলে তাদের নিয়েই ফিরে আসে জার্মান প্লেনটি।
তবে এ ঘটনায় তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে। জার্মানির বহু বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ এমন সিদ্ধান্তের জন্য জার্মান কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেছেন।
জার্মান বৈদেশিক নীতি বিশেষজ্ঞ ড্যানিয়েলা শর্জার একটি মার্কিন প্লেনে ছয় শতাধিক আফগানকে ওঠানোর ঘটনা উল্লেখ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্লেনে ৬৪০ জন, আর জার্মানি এ৪০০এম প্লেনে ফেরাল মাত্র সাতজনকে। মাত্র সাতজন!
প্রখ্যাত সাংবাদিক হাসনাইন কাজিম অভিযোগ করেছেন, জার্মান আমলাতন্ত্রের কারণে বহু আফগান নাগরিকের জীবন শঙ্কার মধ্যে পড়েছে।
বিরোধী দলীয় জার্মান সংসদ সদস্য টোবিয়াস লিন্ডার বলেছেন, বিশাল ঝুঁকি নিয়ে কাবুলে নেমেছিল এ৪০০এম প্লেন। সেটি মাত্র সাতজনকে নিয়ে ফিরে আসা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
এর আগে, গত রোববার তালেবান কাবুল দখল করতেই আতঙ্কিত আফগান নাগরিকরা দেশ ছাড়তে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। তবে সোমবার তারা অনেকটা বেপরোয়া আচরণ করেছেন। সেদিন কাবুল বিমানবন্দরের দেয়াল টপকে রানওয়েতে ভিড় করেন কয়েক হাজার মানুষ। সেখানে প্লেনে উঠতে তাদের প্রাণান্ত চেষ্টা ধরা পড়েছে গণমাধ্যমের ক্যামেরায়। অনেকে প্লেনের চাকা বা পাখা ধরে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করেছেন।
ওইদিন বিমানবন্দরের ‘বিশৃঙ্খলায়’ অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এদের মধ্যে কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন একটি উড়ন্ত মার্কিন প্লেন থেকে পড়ে। এছাড়া প্লেনের চাকায় মানুষের দেহাবশেষ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন এক পাইলট।