খুলনা জেলার তেরখাদায় গৃহবধূকে হত্যার পর কলাবাগানে ফেলে রাখার ঘটনায় খুলনা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব মোঃ হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে তেরখাদা থানা পুলিশের একটি চৌকস দল তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে গত ২৩/০৩/২০২৫ তারিখ নড়াইল জেলার কালিয়া থানা এলাকা থেকে ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো:
১। রনিচ সরদার (৪০), পিতা-মৃত রহিম সরদার
২। আছুরা বেগম (৩০), স্বামী-আনিচ সরদার
৩। আকছির সরদার (৫৫), পিতা-মৃত রশিদ সরদার
উল্লেখ্য, গত ২৩/০৩/২০২৫ তারিখ সকালে খুলনা জেলার তেরখাদা থানাধীন বিজয়নগর গ্রামের একটি কলাবাগানে অজ্ঞাতনামা এক মহিলার মৃতদেহ পড়ে আছে মর্মে সংবাদ পেয়ে তেরখাদা থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় এবং অজ্ঞাতনামা মৃতদেহটি হেফাজতে নেয়। এ সংবাদের প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার খুলনাসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তপূর্বক গ্রেফতারসহ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন।
তেরখাদা থানা সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে ভিকটিম মোসাঃ সাকিরন বেগমের (৪৫) স্বামী মারা গেলে তিনি তার তিন সন্তানকে নিয়ে খুলনার সোনাডাঙ্গা থানাধীন বয়রায় তার ভাইয়ের বাসায় চলে আসেন। খুলনায় থাকার সময়ে ২০১৭ সালে আনিচ সরদারের সাথে ভিকটিমের পরিচয় হয় এবং তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সম্পর্কের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে আনিচ সরদারের সাথে ভিকটিম মোসাঃ সাকিরন বেগম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
বিবাহের পর আনিচ সরদার ভিকটিমকে সৌদি আরবে পাঠানোর প্রলোভন দেখায়। ভিকটিম তার কথায় রাজি হয়ে গচ্ছিত টাকা দিয়ে ২০১৯ সালে সৌদি আরবে যান এবং সেখানে থাকা অবস্থায় আনিচ সরদারকে বিভিন্ন সময়ে সর্বমোট তিন লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালে দেশে ফিরে তিনি জানতে পারেন, আনিচ সরদার গ্রেফতারকৃত আছুরা বেগমকে বিয়ে করেছেন। ভিকটিম আনিচ সরদারের কাছে স্ত্রীর মর্যাদা দাবি করলে আনিচ সরদারসহ গ্রেফতারকৃতরা তাকে অস্বীকার করে এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।
বিষয়টি ভিকটিম তার ভাইসহ স্থানীয় লোকজনদের জানালে, তাদের মধ্যস্থতায় আনিচ সরদার গত ১৪/০২/২০২৪ তারিখ ভিকটিমকে তিন লক্ষ টাকা ফেরত দেবে মর্মে অঙ্গীকার করে। এর প্রেক্ষিতে, ২২/০৩/২০২৫ তারিখ বিকালে ভিকটিম মোসাঃ সাকিরন বেগম টাকা নেওয়ার জন্য নড়াইল জেলার কালিয়া থানায় আনিচ সরদারের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন।
একই তারিখ রাতে ভিকটিমের মেয়ে তানজিলা আক্তারকে আনিচ সরদার ফোন করে জানায় যে, তার মা টাকা চাইতে ও স্ত্রীর মর্যাদা দাবি করতে তার কাছে এসেছেন। এর ফলে আনিচের ভাই, মা, স্ত্রী ও শ্বশুরসহ সকলে মিলে মারধর করে ভিকটিমকে অজ্ঞান করে রেখেছে। তাকে এসে না নিয়ে গেলে তারা ভিকটিমকে খুন করে ফেলবে। এরপর থেকে ভিকটিমের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায় এবং ২৩/০৩/২০২৫ তারিখ সকালে খুলনা জেলার তেরখাদা থানাধীন বিজয়নগর গ্রামের একটি কলাবাগানে ভিকটিমের মৃতদেহের সন্ধান পাওয়া যায়।
এই ঘটনায় তেরখাদা থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়েছে এবং গ্রেফতারকৃতদের বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।