এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েল ও হামাস যোদ্ধাদের লড়াইয়ে গাজার ‘অর্থনীতি পুরোপুরি বিধ্বস্ত’ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় উপত্যকাটির অর্থনীতি যুদ্ধ-পূর্বাবস্থায় ফিরতে ৩৫০ বছর লাগবে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। চলমান যুদ্ধে গাজার অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয়ে এক প্রতিবেদন তৈরি করেছে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন শাখা (আঙ্কটাড)। এ প্রতিবেদনেই বিশ্ব সংস্থা ওই সতর্কবার্তা দিয়েছে। খবর আলজাজিরা, বিবিসি ও নিউইয়র্ক টাইমসের।
জাতিসংঘ বলেছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার জের ধরে গাজায় দেশটির শুরু করা যুদ্ধে উপত্যকাটির অর্থনীতি ও অবকাঠামো বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গত মাসে ওই প্রতিবেদন পেশ করা হয়। এতে বলা হয়, যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই গাজার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল দুর্বল। সেখানে জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও পানির তীব্র ঘাটতি এবং উল্লেখযোগ্যভাবে প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধতার মধ্যে ন্যূনতম মানবিক স্বাস্থ্য ও খাদ্য সহায়তা চলমান ছিল। এর বাইরে এ উপত্যকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুরোদমে ভেঙে পড়েছে।
জাতিসংঘ বলেছে, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে গাজার ৯৬ শতাংশ নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গেছে, কৃষি উৎপাদন নেমে গেছে ৯৩ শতাংশ, সামগ্রিক উৎপাদন কমেছে ৯২ শতাংশ, সেবা খাতের উৎপাদন কমেছে ৭৬ শতাংশ। এ ছাড়া বেকারত্বের হার পৌঁছেছে ৮১ দশমিক ৭ শতাংশে। ইসরায়েলের সামরিক অভিযান চলতে থাকায় গাজার এ পরিস্থিতি এখনও বিদ্যমান আছে কিংবা আরও খারাপ হয়েছে বলে মনে করে জাতিসংঘ।
এদিকে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে গত ৪৮ ঘণ্টায় হিজবুল্লাহর তিন নেতাসহ প্রায় ৭০ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। ইরানসমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীটির প্রয়াত নেতা নাসরাল্লাহর সম্ভাব্য উত্তরসূরি হাসেম সাফিদ্দিনের মৃত্যু নিশ্চিত করে বিবৃতি দেওয়ার এক দিন পর বুধবার এই দাবি করল ইসরায়েল। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা এ মাসের শুরুতেই হিজবুল্লাহর শীর্ষ কর্মকর্তা সাফিদ্দিনকে হত্যা করেছে। সাফিদ্দিন ছিলেন হিজবুল্লাহর নির্বাহী কাউন্সিলের প্রধান।
আইডিএফের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সাফিদ্দিন ও হিজবুল্লাহর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হুসেইন আলি হাজিমা ৪ অক্টোবর বৈরুতে নিহত হন। দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী টায়ারের বাসিন্দাদের শহরের উত্তর দিকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশনা জারি করেছে ইসরায়েল।
অন্যদিকে, ইসরায়েল গাজাসহ হামাসের সামরিক শাখাকে ধ্বংস করেছে। গোষ্ঠীটির শীর্ষ কমান্ডাররা বেশির ভাগই মারা গেছেন এবং তাদের অনেক আস্তানা ও মজুত দখল বা ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু হামাস এখনও উপত্যকাটির উত্তরে ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। গত রোববার উত্তর গাজায় ইসরায়েলের এক কর্নেলকে হত্যা করেছে হামাস। এ ঘটনাটি স্পষ্ট করে, কীভাবে এই গোষ্ঠীর সামরিক শাখা এখনও শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে। যদিও প্রচলিত সেনাবাহিনী হিসেবে কাজ করতে অক্ষম তারা। তবুও যোদ্ধা, যুদ্ধাস্ত্রসহ একটি শক্তিশালী গেরিলা বাহিনী রয়েছে গোষ্ঠীটির, যা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে এখনও মোকাবিলা করতে সক্ষম।