৪৪ থেকে ৪৭তম পর্যন্ত চারটি পরীক্ষার কার্যক্রম নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। যার মধ্যে চার বছরেও শেষ হয়নি ৪৪তম বিসিএসের কার্যক্রম। ৪৫তম আটকা তিন বছর আর ৪৬তম দুই বছর। জট কমাতে চারটি বিসিএস পরীক্ষার একটি মাস্টার ক্যালেন্ডার প্রকাশ করে পিএসসি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সবকিছু না হওয়ায় মাস্টার ক্যালেন্ডার ব্যর্থ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মাস্টার ক্যালেন্ডার অনুসারে, ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা ৮ মে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেটি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে স্থগিত করা হয়েছে। মাস্টার ক্যালেন্ডারের প্রথম সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ার ফলে আপাত দৃষ্টিতে বলা চলে সেটি ব্যর্থ। বিসিএস জটের ব্যাপারে পিএসসির চেয়ারম্যানসহ কোনো সদস্য কথা বলতে না চাইলেও একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা জট কমাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। দ্রুত পরীক্ষাসহ সবকিছু নেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে শিক্ষার্থীদের কারণে আবারও জট হচ্ছে।
পিএসসির উচিত আগে জট মোটামুটি কমিয়ে একটা ভালো অবস্থায় নিয়ে আসা, তারপর নতুন করে বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা।
শিক্ষার্থীরা জানান, ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন আবার করতে হবে। আগে ৪৪ এর ভাইভা শেষ হবে, তারপর ৪৬ এর লিখিত পরীক্ষা শুরু হবে। এছাড়া অতি দ্রুত কমিশনের বিজ্ঞ সদস্যদের সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০-এ উন্নীত করার দাবিও জানান তারা।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের তিনটি বিসিএসের কার্যক্রম এখনো শেষ হয়নি।
মাস্টার ক্যালেন্ডার সূত্রে জানা যায়, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের তিনটি বিসিএসের কার্যক্রম এখনো শেষ হয়নি। তবে বর্তমান পিএসসির অধীনে শুধু ৪৭তম বিজ্ঞপ্তি দেওয়া এবং এটি দেড় বছরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন তারা।
ক্যালেন্ডার অনুসারে, ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল জুন মাসের মধ্যে প্রকাশ করার কথা ছিল। কিন্তু এটির মৌখিক পরীক্ষা ২০ মে থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত চলবে। ফলে জুন মাসে এটির ফলাফল প্রকাশ হওয়ার সম্ভবনা নেই বললেই চলে।
২০২২ সালের নভেম্বরে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল পিএসসি। এরপর গত বছরের জুনে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে। বর্তমান পিএসসি কর্তৃপক্ষ এই বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র তৃতীয় পরীক্ষকের মাধ্যমে মূল্যায়ন করছে। আগামী জুনের মধ্যে এই বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফলাফলও দিতে পারবেন। আর এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে মৌখিক পরীক্ষা শেষ করার আশা করছেন তারা।
৪৬তম বিসিএসের ফলাফলও আবার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান পিএসসি কর্তপক্ষ। গত বছরের ২৭ নভেম্বর প্রিলিমিনারির ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এই বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা আগামী ৮ মে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও প্রার্থীদের আন্দোলনের ফলে সেটি স্থগিত করা হয়েছে।
৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় গত বছরের নভেম্বরে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এই বিসিএসে ক্যাডার পদে শূন্য পদের সংখ্যা তিন হাজার ৪৮৭। আর নন-ক্যাডার পদের সংখ্যা ২০১। এই বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আগামী ২৭ জুনের পরিবর্তে ৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে। সার্বিকভাবে পিএসসি তার প্রকাশিত ক্যালেন্ডার নিজেই বাস্তবায়ন করতে পারছে না। ফলে এত দ্রুত বিসিএসের জটও ছাড়ছে না।
ভোগান্তিতে প্রার্থীরা, দ্রুত জট কমানোর দাবি
গত এক দশকে বিসিএসের চাকরির আকর্ষণ বেড়েছে বহুগুণ। তবে বিসিএসের লম্বা প্রক্রিয়ার ফলে অনেকে চরম ভোগান্তির শিকার হন। প্রার্থীদের দাবি যেকোনো ভাবে দ্রুত এই প্রক্রিয়া শেষ করা এবং জট কমানোর।
শাহরিয়ার আলম নামের একজন বিসিএস প্রার্থী ঢাকা মেইলকে বলেন, সেই কত আগে ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে। কিন্তু আমরা এখনো ফলাফল পাইনি। সঠিক সময়ে প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ার ফলে আমরা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই। এছাড়া একটা বিসিএস প্রক্রিয়া শেষ না করে আরেকটা শুরু হলে স্বাভাবিকভাবেই প্রার্থীর সংখ্যা বাড়বে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনসহ নানা কারণে বিসিএসের জট কমাতে প্রকাশিত মাস্টার ক্যালেন্ডার বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।
পিএসসি কর্মকর্তা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন প্রার্থী বলেন, পিএসসি শুধু নিয়ম অনুসারে পরীক্ষা নিতে পারে। কিন্তু ফলাফল দিতে পারে না। পিএসসির উচিত আগে জট মোটামুটি কমিয়ে একটা ভালো অবস্থায় নিয়ে আসা, তারপর নতুন করে বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা।
এসব নিয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেমসহ কমিশন সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে গণমাধ্যমে বিসিএসের জটের ব্যাপারে তারা কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা বিসিএসের জট কমাতে একটা মাস্টার ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেছিলাম। আমরা সেটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিসিএসের জট কমাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনসহ নানা কারণে আমরা বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারছি না। এতে জট এত দ্রুত ছাড়ছে না।
ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করেছিলাম। কিন্তু সেটি স্থগিত হয়েছে। এটির জন্য আবার নতুন করে প্রশ্ন তৈরি এবং সেটির জন্য বাজেট করা। সব মিলিয়ে আবার সময় অপচয় হবে। এমন কারণে বিসিএসের জট দ্রুত ছাড়ছে না।