খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার ঘের মালিকরা চিংড়ি চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চিংড়ির ঘেরে বিষ প্রয়োগ, লুটসহ নানা কারণে চিংড়ি চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন ঘের মালিকরা। এ রকম চলতে থাকলে এ উপজেলার চিংড়িখাত অচিরেই বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
জানা গেছে, চিংড়িতে অধিক মুনাফা অর্জিত হওয়া এক সময় এ উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে দিনমজুর থেকে শুরু করে ধনাঢ্য ব্যক্তিরা ঘের কেটে চিংড়ি চাষ শুরু করেন। যাদের জমি নেই তারা অন্যের জমি ইজারা নিয়ে চিংড়ি চাষে আগ্রহী হয়ে পুঁজি বিনিয়োগ করতে থাকেন। সাবলম্বী হতে শুরু করেন দিনমজুর পরিবারের সদস্যরা। তবে বর্তমানে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তিদের দ্বারা ঘেরে বিষ দেওয়া ও চিংড়ি চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় চিংড়ি চাষিরা এখন পথে বসার উপক্রম
হয়েছেন।
বর্ষা মৌসুমে এই এলাকায় চিংড়ি ও সাদা মাছ চাষের পাশাপাশি ইরি ও বোরো ধানের চাষ করা হয়। উৎপাদিত মাছ ও ধান থেকে নিজেদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করেন কৃষকরা। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। ২০২১ সালের বন্যায় উপজেলার অনেক ঘের পানিতে ভেসে যায়। এতে ঘের মালিকদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়।
স্থানীয় ঘের মালিকরা জানান, চিংড়ি চাষ শুরু হওয়ার প্রথম দিকে কোনো প্রকার ক্ষতি ছাড়াই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মাছ চাষ করেছেন তারা। প্রতি মৌসুমেই প্রচুর পরিমাণ মুনাফা অর্জন করতেন ঘের মালিকরা। তখন চিংড়ি ঘেরে কোনো নৈশপ্রহরীকে পাহাড়া দেয়া লাগত না। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে প্রতিটি ইউনিয়নে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটে। তারা রাতের আধারে চিংড়ি ঘেরে গিয়ে ঘেরের পানিতে এক প্রকার কীটনাশক ব্যবহার করে সব চিংড়ি লুট করে নিয়ে যায়। আবার অনেকে ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে অন্যের ঘেরে কীটনাশক দিয়ে রেনু পোনাসহ লাখ লাখ টাকার চিংড়ি ধ্বংস করে দেন। এভাবে প্রতি বছরই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চিংড়ি চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ফলে অসংখ্য ঘের মালিক চিংড়ি চাষ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
উপজেলার খর্নিয়া ইউনিয়নের টিপনা এলাকারশিক্ষক শেখ জাহতাব হোসেন জানান, দুর্বৃত্তরা রাতের আধারে আমার ঘেরে বিষ দিয়ে চিংড়ি মাছ চুরি করে নিয়ে যায়।
ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া ইউনিয়নের টিপনা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত ঘের মালিক নূরুল ইসলাম, শেখ নজরুল ইসলাম ও শেখ নাজমুল জানান, চিংড়ি চাষের যোগ্য করে তুলতে আমরা আমাদের ঘেরে লাখ লাখ টাকা খরচ করেছি। চিংড়ির রেনু পোনা কেনা ও খাবার দিয়ে বড় করে তুললেও অনেক টাকা খরচ হয়েছে। দুর্বৃত্তরা রাতের আঁধারে আমাদের ঘেরে বিষ দিয়ে সব চিংড়ি মেরে ফেলে আমাদের সর্বশান্ত করে দিয়েছে।
তারা আরও জানান, ঘের থেকে চিংড়ি চুরি, ঘেরে বিষ দিয়ে চিংড়ি মেরে ফেলাসহ নানা কারণে লাভ তো দূরে থাক আসল টাকাই ঘরে তুলতে পারছে না অনেকে। অনেকে জমি বন্ধক দিয়ে, এমনকি জমি বিক্রি করে মহাজনদের দেনা পরিশোধ করেছেন। এসব কারণে বর্তমানে চাষিরা চিংড়ির পরিবর্তে সাদা মাছের পোনা চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
উপজেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, ডুমুরিয়ায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে ৭ হাজারের মত চিংড়ি ঘের ছিল। কিন্তু বর্তমানে সাড়ে ৪ হাজার ঘেরে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। আড়াই হাজার ঘেরে চিংড়ি মাছের পরিবর্তে সাদা মাছ চাষ হচ্ছে।
এছাড়া অনেক ঘের পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে।
উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সোহেল মো. জিল্লুর রহমান রিগান জানান, যারা চিংড়ি চাষ করেন তাদেরকে আমরা নানা পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। প্রায়ই ঘেরে বিষ প্রয়োগ ও চুরি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কৃষকদের সতর্ক থাকতে হবে।