ঋণের ভারে জর্জরিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ লাওস। ফলে দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে দেশটি। বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে হিমশিম খাওয়া লাওসের এ সংকট কাটাতে সহায়তার দাবি করেছে প্রতিবেশী চীন। যদিও বর্তমান বৈদেশিক ঋণের বেশির ভাগই চীনের কাছ থেকে নেওয়া বলে তথ্যে উঠে এসেছে। খবর জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের।
লাওসের সবচেয়ে বড় বৈদেশিক ঋণদাতা দেশ চীন। সাড়ে ১০ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণের অর্ধেকই চীনের কাছ থেকে নেওয়া। গত বছরের শেষ নাগাদ ছোট এই দেশের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার, যা দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১০৮ শতাংশ।
কমিউনিস্ট শাসিত লাওস সম্প্রতি চীনের সঙ্গে একটি উচ্চগতির রেললাইনের মাধ্যমে যুক্ত হয়েছে। ভূবেষ্টিত এই দেশকে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ৬০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে হয়েছে। এই সংযোগ লাওসকে চীনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করলেও দেশটির ঋণের বৃদ্ধি উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
গত বছর লাওসের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ৯৫ কোটি ডলারে পৌঁছায়। তবে এই সময়ে দেশটি ঋণ পরিশোধে অপারগ হয়ে ৬৭ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ স্থগিত করে। বিশ্বব্যাংক অতীতে বলেছে, এ ধরনের পদক্ষেপ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাময়িক স্বস্তি দিয়েছে। তবে এই উদ্যোগ কতটা কাজে দেবে তা দেখার বিষয়।
ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল ওয়ার কলেজের অধ্যাপক ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক গবেষক জাচারি আবুজা বলেন, ঋণ লাওসের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঋণ নিয়ে উৎপাদনশীল কাজে যেতে পারলে তা খারাপ নয়, কিন্তু লাওস ঋণ সে অবস্থায় নেই। জলবিদ্যুতে তাদের ঋণ ধারণক্ষমতার চেয়েও বেশি।
তিনি আরও বলেন, দেশটির রেল লাইন অনেকটা অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে, যদিও এখন ব্যাংককের সাথে সংযোগ তৈরি করেছে। তবে এই খাত থেকে আরও বেশি রিটার্ন আসা উচিত।
লাওসের বৈদেশিক ঋণের এই সমস্যা এমন এক সময়ে সামনে এলো, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন উন্নয়নশীল দেশগুলোতে চীনা প্রভাব রুখতে আলাদা অর্থনৈতিক সহায়তা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। ওয়াশিংটন অধিকাংশ সময়ই চীনা ঋণকে একটি ফাঁদ হিসেবে উপস্থাপন করেছে। অবশ্য এর নজিরও আছে। সম্প্রতি চীনা ঋণের ভারে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মতো দেশ খাবি খেয়েছে।
সর্বশেষ, ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ শূন্য হয়ে যাওয়ার পর দেশটি দেউলিয়া হয়ে যায়। গত মাসে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্র ঘোষণা দেয়, তারা চীনের কাছ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপক্ষীয় ঋণের বিষয়টি চূড়ান্ত করে ফেলেছে। চীনের এক্সিম ব্যাংক এই ঋণ দেবে কলম্বোকে।
অবশ্য চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসব ঋণকে ‘ঋণের ফাঁদ কূটনৈতিক কার্যক্রম’ বলার মার্কিন দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের প্রচেষ্টা মূলত উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে চীনের সহযোগিতার সম্পর্কে বাধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস। তিনি বলেছেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) এসব বলার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অধিকাংশকেই ধোঁকা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
