গাজীপুরের টঙ্গীতে হা-মীম গ্রুপের পোশাক কারখানায় ঈদের ছুটি বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। এসময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আটজন পুলিশ সদস্য ও অন্তত ১৮ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন।
আহত শ্রমিকদের প্রথমে টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে গুরুতর আহত ১৩ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে ৯ জন ছররা গুলিতে মারাত্মক জখম হয়েছেন।
সোমবার (১০ মে) বেলা ১১টার দিকে টঙ্গীর মিলগেট এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, কারখানা কর্তৃপক্ষ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী তিনদিনের ঈদের ছুটি ঘোষণা করলেও শ্রমিকরা ১০ দিনের ছুটির দাবিতে এ বিক্ষোভ করে।
আহত শ্রমিকরা হলেন- হাসান মিয়া (২৬), রাজীবুল ইসলাম (২৬), মামুন মিয়া (২৭), রবি (২১), লতিফ (১৯), ইমরান (১৯), রুবেল (২৪) , রুবেল(২২), রনি (২২), এহসানুল হক (৩৫), রাজিবুল (২৬), কলি বেগম (২৪), নিজাম উদ্দিন (৩০), সমলা (২৫), ইয়াসিন (২০), হাসিনা (৪০), সাব্বির (২২), সাবিনা (২৫), রিনা বেগম (২০)। আহত বাকিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন- ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) জালাল হাওলাদার, এএসপি এস আলম, সিটিএসবির এসআই রুবেল, এসআই কামাল হোসেন, পুলিশের এসআই লিটন, কনস্টেবল এনামুল হোসেন। বাকি দুইজন পুলিশ সদস্যের নাম জানা যায়নি।
গাজীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ও শ্রমিকরা জানান, ঈদে ১০ দিন ছুটির দাবিতে সোমবার বেলা ১১টার দিকি কারখানা শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ করে। পরবর্তীতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে কারখানার শ্রমিকরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশও শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট ছুড়ে।
এসময় দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আটজন পুলিশ সদস্য ও ১৮ জন শ্রমিক আহত হন। পরে শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।
আহত শ্রমিক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এক পোশাক শ্রমিক অফিসকক্ষে গিয়ে মালিক পক্ষের সঙ্গে ঈদের ছুটির বিষয়ে কথা বলেন। তিনি আমাদের পক্ষ থেকে ১০ দিনের ছুটি চান। মালিকপক্ষ থেকে সাতদিনের ছুটি মঞ্জুর করা হয়। এ নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়। এরপর তিনি বের হলে পুলিশ এসে তার মাথায় আঘাত করে। এতে তার মাথা ফেটে রক্তাক্ত হয়।
তিনি জানান, পরে শ্রমিকরা জড়ো হয়ে তাকে আঘাতের কারণ জানতে চান। এসময় কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন। আহতদের স্থানীয় একটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দুপুর সোয়া ১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। তাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলির চিহ্ন রয়েছে।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জালাল হাওলাদার জানান, শ্রমিকরা সরকারি নির্দেশ অমান্য করে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও মহাসড়ক অবরোধ করে। পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে গেলে শ্রমিকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পুলিশ তাদের সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। এসময় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও শ্রমিক আহত হন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, টঙ্গী মিলগেট এলাকায় গুলিবিদ্ধ ৯ শ্রমিক ঢাকা মেডিকেলের ইমারজেন্সিতে চিকিৎসাধীন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবগত করা হয়েছে। এদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।