ডলারের বিপরীতে জাপানি মুদ্রা ইয়েনের দর পড়েই চলেছে। বৃহস্পতিবার জাপানি এ মুদ্রার দর কমে প্রতি ডলার হয় ১৫০ ইয়েন, যা ১৯৯০ সালের পর প্রথম ঘটল। গত ফেব্রুয়ারি মাসেও প্রতি ডলার ১১৫ ইয়েনে পাওয়া যেত। যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর মুদ্রানীতির বিপরীতে জাপানের শিথিল মুদ্রানীতির ফলেই এই দরপতন হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
চার দশকে সর্বোচ্চ হওয়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ এ বছর পাঁচবার সুদের হার বাড়িয়েছে। অথচ ব্যাংক অব জাপান সনাতনি কৌশল শিথিল মুদ্রানীতিতেই অবস্থান করছে। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্ অর্থনৈতিক দেশটি টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে থাকতে চায়। গতকাল জাপানি মুদ্রার দাম কমে হয় প্রতি ডলার ১৫০.৮ ইয়েন।
• যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর মুদ্রানীতির বিপরীতে জাপানের শিথিল মুদ্রানীতির ফলেই এই দরপতন হচ্ছে
• আমদানির জন্য জাপানকে আগের চেয়ে অনেক বেশি মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইয়েনের দাম আরো পড়বে। দুই দেশ দুই ধরনের মুদ্রানীতি অনুসরণ করার কারণেই এ সমস্যা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে বছরের শুরুতে যেখানে নীতি সুদহার ছিল শূন্য শতাংশ, এখন তা ৩ থেকে ৩.২৫ শতাংশে উঠে এসেছে। এমনকি চলতি বছর তা ৪.৪ শতাংশও হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সুদহারের ক্রমাগত বৃদ্ধিতে সম্প্রতি মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে নতুন করে দুই দশকে সর্বোচ্চ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পথ ধরে ইউরোপসহ অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার বাড়াচ্ছে।
এ অবস্থায় স্থানীয় মুদ্রার দর ধরে রাখতে জাপান গত সেপ্টেম্বরে ২.৮ ট্রিলিয়ন ইয়েনের ডলার বাজারে ছেড়েছে। আশা করা হচ্ছে, আরো প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার বাজারে বিক্রি করা হবে। এর বিপরীতে কেনা হবে ইয়েন। জাপানের অর্থমন্ত্রী শুনিচি শুজুকি মুদ্রাবাজারের এ অস্থিরতা নিয়ে গতকাল বলেন, এটি একেবারে সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বাজার স্থিতিশীল করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি সতর্ক করে দেন।
জাপানের অর্থনীতির অবস্থা ইউরোপের দেশগুলোর মতো শোচনীয় নয়। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, খাদ্যপণ্য ও সারের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়া জাপানকেও বিপাকে ফেলেছে। জাপানে জ্বালানির যে চাহিদা, তার প্রায় সবটুকুই আমদানি করা হয়। সারের জন্যও জাপান আমদানির ওপর নির্ভরশীল। পাশাপাশি দেশটির খাদ্য চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ আসে বিদেশ থেকে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দাম বেড়ে যাওয়ায় এসব পণ্য আমদানির জন্য জাপানকে আগের চেয়ে অনেক বেশি মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে বাণিজ্যিক ভারসাম্য হারাচ্ছে দেশটি। অর্থনীতির সার্বিক এই প্রতিকূল অবস্থা ইয়েনের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। এর বাইরে জাপানের মুদ্রা কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাও ইয়েনের পতনের জন্য দায়ী বলে উল্লেখ করা হয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যমে।
জাপানের অর্থনীতির আরেক সহায়ক শক্তি হিসেবে দেখা হয় পর্যটনশিল্পকে। করোনাভাইরাস-পরবর্তী সময়ে এই শিল্প আবার দাঁড় করাতে চাইছে জাপান সরকার। তাদের ধারণা, দুর্বল ইয়েনের সুযোগ নিয়ে বিদেশি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটকরা জাপান ভ্রমণে আগের চেয়ে বেশি আকৃষ্ট হবে এবং তা অর্থনীতিকে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে।
পিএসএন/এমঅাই


