করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কা সামলে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে আন্তর্জাতিক তেলের বাজার। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় অপরিশোধিত তেলের দামও ফিরে আসছে আগের অবস্থানে। তবে তেলের দাম বাড়াতে উৎপাদন কমানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিশ্বের প্রধান তেল রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাস, শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করছে ভারত। একই অবস্থান চীনেরও। সেক্ষেত্রে তেলের দাম কমানোর লড়াইয়ে ভারত চীনাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
গত সপ্তাহে ভারত সরকারের নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, দেশটি তার কৌশলগত পেট্রোলিয়াম মজুতের (স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ বা এসপিআর) অর্ধেকটা বেসরকারি খাতে বিক্রি করে দেয়ার চিন্তা করছে। এসপিআরের ধারণক্ষমতা বাড়াতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণ উৎসাহিত করতে এই পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। ভারতের কৌশলগত পেট্রোলিয়াম মজুতের পরিমাণ বর্তমানে ৩ কোটি ৬৫ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল।
গত বছর ওপেক প্লাস উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকেই এর তীব্র সমালোচনা করে আসছে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল আমদানিকারক ভারত। দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিকবার বলেছেন, তারা তেলের দাম বাড়াতে কৃত্রিম উৎপাদন সংকট তৈরি সমর্থন করেন না। তেলের চড়া দাম ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে তাদের।
রয়টার্সের কলামিস্ট ক্লাইড রাসেলের মতে, ভারত সম্ভবত এসপিআরের অর্ধেকটা বেসরকারি খাতে দিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করছে কৌশলগত মজুত বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় তহবিল জোগাড়ের জন্য। তবে, ভারতীয় তেল পরিশোধনকারীদের কাছে কম দামে তেল পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যও থাকতে পারে এতে।
গত সপ্তাহে খবর এসেছে, বিশ্বের শীর্ষ অপরিশোধিত তেল আমদানিকারক চীনও তার কৌশলগত মজুত ছেড়ে দিচ্ছে। দেশটি তার এসপিআর থেকে দুই কোটি ব্যারেলেরও বেশি তেল ছেড়ে দেয়ার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু করেছে। সাম্প্রতিক তেলের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে চীনারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো আরও বলা হয়েছে, চীনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যেও কৌশলগত পেট্রোলিয়াম মজুত ছেড়ে দেয়া হতে পারে। বাজার ও বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এনার্জি ইন্টেলিজেন্সকে জানিয়েছে, চীন ২ কোটি ২০ লাখ থেকে ২ কোটি ৯০ লাখ ব্যারেল অথবা ৩০ লাখ থেকে ৪০ লাখ টন অপরিশোধিত তেল বাজারে ছাড়তে পারে।