কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে পুলিশ বাহিনী। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চাপে পড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটি। সরকারের পতনের পরই ঢাকার বিভিন্ন থানায় হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে থানা থেকে পালিয়ে যায় পুলিশ।
এই অবস্থায় নতুন আইজিপি গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যার মধ্যে সব পুলিশ সদস্যকে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদানের আহ্বান জানালেও তাতে তেমনটা সাড়া মেলেনি। পরবর্তীতের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর পুলিশ কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করে।
ঢাকা মহানগরীতে গত শুক্রবার থেকে অর্ধেকের বেশি থানা আবার চালু হলেও এখনো পুরোদমে কাজ করতে পারছে না পুলিশ। কারণ মামলার আলামতসহ অনেক কিছু পুড়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ চালু হওয়া থানায় তেমন কোনো অফিসিয়াল কাজ পারছে না পুলিশ। থানা গোছাতেই ব্যস্ত সময় কাটছে তাদের।
সোমবার (১২ আগস্ট) সরেজমিন কয়েকটি থানা ঘুরে এমন তথ্য জানা গেছে।
গত ৫ আগস্ট (সোমবার) রাতে বিক্ষুব্ধ জনতা মোহাম্মদপুর থানা ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে পুড়ে যায় থানার ভেতরে থাকা ওসি, এডিসি ও এসির কক্ষসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র। সেই সঙ্গে পুড়ে গেছে কম্পিউটার এবং যাবতীয় মালামাল। লুট এবং ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। সেদিন থেকে থানাটিতে কোনো পুলিশ সদস্য বসতে পারেননি। ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল থানার ভেতরে। অবশেষে সেই অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছে। গত শুক্রবার চালু হয়েছে থানার কার্যক্রম।
সোমবার দুপুরে থানাটিতে গিয়ে দেখা যায়, অনেক উৎসুক মানুষ ভিড় করছেন থানাটির সামনে। গেটে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন সেনা সদস্য। তারা পরিচয় ছাড়া কাউকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছেন না। পরিচয় দিয়ে ভেতরে ঢুকতে দেখা যায় থানার ভেতরে পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন মালামাল শিক্ষার্থীরা বের করছেন। থানার বারান্দা হয়ে ওসির রুমে যেতে চোখে পড়ল ডিউটি অফিসারের কক্ষটি। সেটি আর চেনার মতো পরিবেশ নেই। বেঞ্চ চেয়ার টেবিল যাবতীয় কাগজপত্র পড়ে গেছে। ওসির রুমও তছনছ হয়ে গেছে। এমন অবস্থার মধ্যেই ভেতরে দুটি চেয়ার ও একটি ছোট টেবিল বসিয়ে কাগজে কী যেন লিখছে পুলিশ সদস্য।
থানার কার্যক্রম কেমন চলছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘এখনো কাজ শুরু হয়নি। মামলাও হয়নি তেমন। তবে লোকজন আসছে। খোঁজখবর নিচ্ছে কবে থেকে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হবে।’
তারা আরও জানান, ‘থানায় থাকা গুরুত্বপূর্ণ মামলার কপি, কম্পিউটার এবং অনেক জিনিসপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ফলে তারা এখন বসে বসে সময় কাটাচ্ছেন। তবে তাদের থানায় কোনো নিহত ব্যক্তি নেই। এটা তাদের জন্য বড় পাওয়া বলে মনে করেন তারা।’
ওসির রুম থেকে বের হয়ে হাজতখানার দিকে এগোতেই চোখে পড়ে ডিউটি অফিসারের রুম। গত ৪ আগস্টও রুমটি সরগরম ছিল। কিন্তু এখন পুরো অচেনা। সাত থেকে আটজন শিক্ষার্থী সেখানে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছিল। হাজতখানাটি শূন্য। তার পাশে থাকা একটি ছোট কক্ষে একটি প্রিন্টার বসিয়ে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেছে থানা কর্তৃপক্ষ।
কক্ষটিতে ঢুকতেই দেখা যায় কিছু কিছু মানুষের জটলা। তারা থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছেন। তারা চলে যাওয়ার পর কথা বলেন ওসি।
দীপক চন্দ্র সাহা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা এখনো পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারিনি। তবে চেষ্টা করছি সেবা দেওয়ার। কারণ আমাদের কম্পিউটারসহ যাবতীয় জিনিসপত্র পুড়ে গেছে। এখন বসার জায়গাটুকু নেই। তারপরও চেষ্টা করে যাচ্ছি। মাত্র একটি প্রিন্ট দিয়ে কাজ চলছে। তাদের অনেক জিনিসপত্র পুড়ে গেছে।’
শুধু মোহাম্মদপুর থানা নয়, গত শুক্রবার থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের ৪৪ থানার মধ্যেই ২৯টি ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। বাকিগুলো চালুর প্রক্রিয়া এখনো চলমান। তবে অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত থানায় পুলিশ সদস্যরা বসে বসে সময় কাটাচ্ছেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র তাদের কাছে নেই। ফলে মামলার তদন্ত তেমন করতে পারছেন না।
তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রম চালাচ্ছি। লোকজন এসে দুই একটি মামলা সাধারণ ডায়েরি করছে। এখনো অনেকে হয়তো তেমনভাবে জানে না থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে আমাদের সদস্যরা কাজ করছেন।’
মোহাম্মদ মহসিন জানান, তার থানায় ভাঙচুর হলেও তেমন কোনো জিনিস খোয়া যায়নি। এমনকী আহত-নিহতও নেই।
ডিএমপির তেজগাঁও জোনে থাকা থানাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোনো পুলিশ হামলার শিকার হয়নি। বিষয়টি তাদের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন তারা।
রাজধানীর ক্ষতিগ্রস্ত থানাগুলোর কার্যক্রম চালু করতে পুলিশকে সহায়তা করছে সেনাবাহিনী এবং আনসার সদস্যরা। তবে পুলিশ এখনো মাঠ পর্যায়ে জোরালোভাবে কাজ শুরু করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন অনেক সদস্য।