রাশিয়ার ১৮ কূটনীতিককে গত শনিবার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল চেক প্রজাতন্ত্র। এ ঘটনায় পুতিন সরকার যে চুপ থাকবে না তা অনুমিতই ছিল। পাল্টা জবাব হিসেবে রুশ কর্তৃপক্ষ চেক প্রজাতন্ত্রের ২০ কূটনীতিককে দেশত্যাগ করতে বলেছে, তা-ও আবার মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে।
চেক গোয়েন্দাদের দাবি, বহিষ্কৃত রুশ কূটনীতিকরা রুশ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য। তারা ২০১৪ সালে চেক প্রজাতন্ত্রের একটি গোলাবারুদ ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
তবে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চেক সরকারের এই পদক্ষেপকে ‘অভূতপূর্ব’ এবং ‘শত্রুতাপূর্ণ কাণ্ড’ বলে উল্লেখ করেছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, রাশিয়ার ওপর সম্প্রতি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করার অভিপ্রায়ে এক্ষেত্রে চেক কর্তৃপক্ষ তাদের প্রভুদেরও ছাড়িয়ে গেছে।
হঠাৎ কেন এমন বিবাদ?
২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর মধ্য ইউরোপের দেশ চেক প্রজাতন্ত্রের ভারবেটিস অঞ্চলে জঙ্গলের মধ্যে গোলাবারুদের একটি ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে তছনছ হয়ে যায় গোটা স্থাপনাটি। আশপাশের ভবনগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে খালি করে দেয়া হয় স্থানীয় স্কুলগুলো। দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান উদ্ধারকারীরা। তবে ডিপোর দুই কর্মীর দেহাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায় প্রায় এক মাস পরে
বিস্ফোরণটিকে প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনা বলেই মনে করা হচ্ছিল। তবে চেক কর্তৃপক্ষের তদন্তে বেরিয়ে আসে চমকজাগানিয়া কিছু তথ্য। ওই বিস্ফোরণকাণ্ডের জন্য তারা আঙুল তুলেছে রাশিয়ার জিআরইউ গোয়েন্দা সংস্থার একটি ইউনিটের দিকে।
বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত দুই সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে চেক পুলিশ। তারা হলেন অ্যালেক্সান্দার মিশকিন এবং আনাতোলি চেপিগভ। এ দুজনই যুক্তরাজ্যের ‘সালিসবুরি বিষকাণ্ডে’ জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০১৮ সালে সালিসবুরিতে রাশিয়ার এক সাবেক ‘ডাবল এজেন্ট’ সার্জেই স্ক্রিপাল এবং কার কন্য ইউলিয়াকে বিষ দিয়ে হত্যা করা হয়। এর কয়েক মাস পরে পারফিউম বোতলের মধ্যে বিষাক্ত নভিচক প্রয়োগে হত্যার শিকার হন ডন স্টুরগেস নামে স্থানীয় এক নারী।
বেলিংকাট নামে একটি ব্রিটিশ অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যমের তদন্তে বেরিয়ে আসে, সালিসবুরি বিষকাণ্ডে জড়িত সন্দেহভাজন রুসলান বশিরভ নামধারী আসলে আনাতোলি চেপিগভ এবং আলেক্সান্দার পেত্রভ নামধারী ব্যক্তি আসলে আলেক্সান্দার মিশকিন। আর তারা দুজনই জিআরইউ সদস্য।
যুক্তরাজ্যের সালিসবুরি বিষকাণ্ডে সন্দেহভাজনদের সঙ্গে ভারবেটিস বিস্ফোরণে জড়িত সন্দেহভাজনদের ছবি মিলিয়ে দেখে চেক পুলিশ। সেখানেই পাওয়া যায় রহস্যের সন্ধান।
সূত্রটি এসেছিল সেই ডিপো পরিচালনাকারী আইমেক্স গ্রুপের একটি ইমেইল থেকে, যেখানে সন্দেহভাজনদের পাসপোর্টের ছবি পাওয়া যায়।
বলা হচ্ছে, ইমেইলটি পাঠানো হয়েছিল তাজিকিস্তানের ন্যাশনাল গার্ডের কাছ থেকে। এতে অনুরোধ জানানো হয়েছিল, দুই ব্যক্তিকে যেন স্থাপনাটি পরিদর্শনের অনুমতি দেয়া হয়। ইমেইলের সঙ্গে যোগ করা ছিল তাদের পাসপোর্টের স্ক্যান কপিও। তাতে নাম-পরিচয় বলা ছিল তাজিকিস্তানের রুসলাম তাবারভ এবং মলদোভিয়ান নাগরিক নিকোলাজ পোপা।
পাসপোর্টের সেই ছবির সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে সালিবুরি বিষকাণ্ডে অভিযুক্ত দুজনের ছবির।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এ দুই ব্যক্তি ২০১৪ সালের ১৩ অক্টোবর ডিপোর কাছাকাছি অস্ট্রাভা এলাকায় একটি আবাসন ভাড়া করেছিলেন। সেখানে তাদের ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত থাকার কথা ছিল।
কিন্তু গোলাবারুদের ডিপোতে বিস্ফোরণটি ঘটে ১৬ অক্টোবর, আর সেদিনই ওই দুইজন ভিয়েনা চলে যান মস্কোগামী ফ্লাইট ধরতে। অবশ্য ডিপোটি কীভাবে উড়িয়ে দেয়া হলো, তা এখনও জানতে পারেনি চেক কর্তৃপক্ষ।
চেক প্রজাতন্ত্র তাদের অভিযোগ ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মিত্রদের কাছে তুলে ধরবে। সোমবারই ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগ জানিয়েছে, এ বিষয়ে তারা চেক প্রজাতন্ত্রের পাশে রয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ, ইউক্রেনকে হয়রানি এবং গত বছর সাইবার হামলার অভিযোগে চলতি সপ্তাহে রাশিয়ার ১০ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। জবাবে একই সংখ্যক মার্কিন কূটনীতিককে দেশ ছাড়তে বলেছে রাশিয়াও।