বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি বৃহৎ অংশ নির্ভর করে কৃষি ও গবাদি পশুর ওপর। গ্রামীণ অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে পরিচিত এই খাতগুলি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান এবং গ্রামীণ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশীয় এগ্রো ফার্ম এবং গবাদি পশুর খামারগুলি শুধু খাদ্য উৎপাদনেই নয়, দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ও বিকাশে সহায়তা করছে।
দেশীয় এগ্রো ফার্মগুলি বর্তমানে অত্যন্ত গুরুত্ব পাচ্ছে। এগ্রো ফার্মের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, ফলমূল, মাছ এবং অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন করা হয়। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এই ফার্মগুলোতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে, দেশের বাজারে কৃষি পণ্যের সহজলভ্যতা বাড়ছে এবং আমদানি নির্ভরতা কমছে। এগ্রো ফার্মগুলোতে স্থানীয় জনগণের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে, যা গ্রামীণ দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়ক।
গবাদি পশু খাত বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান খাত। এই খাতে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। গবাদি পশু থেকে প্রাপ্ত দুধ, মাংস, ডিম ইত্যাদি পণ্য দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, গবাদি পশুর চামড়া ও অন্যান্য উপজাত থেকে বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদন হয়, যা দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক।
তবে, এই খাতগুলি এখনো নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। খাদ্য সঙ্কট, পশুখাদ্যের উচ্চমূল্য, রোগব্যাধি, আধুনিক প্রযুক্তির অভাব এবং সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবে অনেক খামারদার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান, সহজলভ্য ঋণ সুবিধা, আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহ এবং বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এই খাতগুলিকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে।
দেশীয় এগ্রো ফার্ম ও গবাদি পশু খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গ্রামীণ উন্নয়ন সম্ভব। তাই, এ খাতগুলিতে বিনিয়োগ এবং যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। সরকার, বেসরকারি সংস্থা এবং কৃষকদের সমন্বয়ে একটি কার্যকরী নীতি গ্রহণ করলে দেশীয় এগ্রো ফার্ম ও গবাদি পশু খাতের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
অতএব, দেশীয় এগ্রো ফার্ম ও গবাদি পশু খাতকে গুরুত্ব দিয়ে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে আমরা একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারি। এই খাতগুলির উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা শুধু আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করব না, বরং দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতেও নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারব।
লেখক: আলি আবরার, গণমাধ্যমকর্মী