নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রধানসহ কমিশনার নিয়োগে সরকার আকস্মিক যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তাকে ইতিবাচক বললেও প্রস্তাবিত আইনে নাগরিক সমাজ ও অংশীজনদের সুপারিশ আমলে নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি না করায় হতাশা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সংস্থাটি বলেছে, ওই নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও অযোগ্যতার যে মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে গড়পড়তা সাধারণ কিছু মানদণ্ডের বাইরে তাঁদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিরূপণে সুনির্দিষ্ট বিধান নেই। এর ফলে এই আইনের পেছনে যে সাংবিধানিক চেতনা অন্তর্নিহিত এবং এটি নিয়ে জনগণের যে প্রত্যাশা তা পূরণ হবে না।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা অবাক হয়ে লক্ষ করছি, স্বাধীনতার ৫০ বছর পর সাংবিধানিক অতিগুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এমন একটি আইন যেনতেনভাবে পাসের একটি প্রক্রিয়া চলছে; যেখানে বিভিন্ন সময় নাগরিক সমাজ এবং অংশীজনদের পক্ষ থেকে দেওয়া সুপারিশমালার বেশির ভাগই আমলে নেওয়া হয়নি।
নির্ভরযোগ্য অনানুষ্ঠানিক সূত্রে প্রাপ্ত খসড়াটিতে বিশেষ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা নির্ধারণে যে তিনটি ধারা প্রস্তাব করা হয়েছে, সেখানে তাঁদের সততা, ন্যায়পরায়ণতা, নিরপেক্ষতা, বস্তুনিষ্ঠতা, সৎসাহস ও গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে কোনো ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ’
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘খসড়ায় নারী সদস্য অন্তর্ভুক্তির কোনো বিধানও রাখা হয়নি। এমনকি অযোগ্যতা নির্ধারণে যে প্রস্তাব করা হয়েছে, সেখানে দুই বছরের কম যেকোনো মেয়াদে ফৌজদারি অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত হলেও কমিশনার হওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে! এ ছাড়া সুনির্দিষ্টভাবে তাঁদের দলনিরপেক্ষতা তথা রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা কিংবা ঋণখেলাপি, দুর্নীতিতে সংশ্লিষ্টতা ইত্যাদি নিরূপণ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই! এমনকি গুরুতর অসংগতির পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের অপসারণেও সুনির্দিষ্ট কোনো বিধান নেই, যা হতাশাজনক। ’
অনুসন্ধান কমিটিতে যে দুজন নাগরিক প্রতিনিধির বিধান রাখা হয়েছে, তাঁদের যোগ্যতার মাপকাঠি কী হবে, কমিটির কর্মপদ্ধতি কিরূপ হবে, কমিটি প্রস্তাবিত নামগুলো প্রকাশ করা হবে কি না—এসব প্রশ্ন তুলে নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘খসড়া আইন অনুযায়ী অনুসন্ধান কমিটি প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে দুজন ব্যক্তির নাম রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করার কথা বলা হলেও, সেই নামগুলো নিয়োগ চূড়ান্ত হওয়ার আগেই প্রকাশ করার কোনো বিধান রাখা হয়নি। অন্যদিকে অনুসন্ধান কমিটিতে প্রস্তাবিত দুজন নাগরিক প্রতিনিধির যোগ্যতার বিবরণ যেমন নেই, তেমনি কোনো নারী সদস্য রাখার বিধানও অন্তর্ভুক্ত নয়। এসব সমাধান না করেই এ আইন চূড়ান্ত হলে, এ আইনের পেছনে যে সাংবিধানিক চেতনা অন্তর্নিহিত এবং এটি নিয়ে জনগণের যে প্রত্যাশা, তার বাস্তবায়ন অসম্ভব হবে। ’
পূর্ণাঙ্গ যাচাই-বাছাইসহ নাগরিক সমাজ তথা সব অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করে, খসড়া আইনটি চূড়ান্ত করার দাবি জানান ইফতেখারুজ্জামান। অন্যথায় এই আইনের সুফল যেমন অধরা থাকবে, তেমনি এর গ্রহণযোগ্যতা ও কার্যকারিতা নিয়েও নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে না বলে মত দেন তিনি।
পিএসএন/এমআই