গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রশ্নে গত ১০ মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একেবারে পায়ে পা মিলিয়ে চলেছে ব্রিটেনের রক্ষণশীল সরকার। ক্ষমতার পালাবদলে এখন সেখানে লেবার পার্টির নতুন সরকার এসেছে। এ অবস্থায় গাজা যুদ্ধ ইস্যুতে ব্রিটেন তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্রের কাছ থেকে কিছুটা দূরে সরে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, চলতি সপ্তাহের পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ওপর আপত্তি তুলে নিতে পারেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের রক্ষণশীল সরকার এ আপত্তি জানিয়েছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্রিটিশ সরকারের দুই ব্যক্তি স্পর্শকাতর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত সপ্তাহে ব্রিটেন জানায়, তারা ফিলিস্তিনিদের সহায়তাকারী জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএতে আবারও তহবিল সরবরাহ শুরু করবে। দেশটি এও বলেছে, ‘সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার মান’ নিশ্চিত করতে কাজ করছে সংস্থাটি। জাতিসংঘের এ সংস্থার বিরুদ্ধে ইসরায়েল সরকার নানা অভিযোগ তুলে আসছে। তাদের দাবি, গত ৭ অক্টোবর চালানো হামাসের হামলায় সংস্থাটির সদস্যরাও জড়িত ছিলেন।
যুক্তরাজ্য সরকারের এ দুটি পদক্ষেপকে এক করলে যা দাঁড়ায়, তা হলো– দেশটি গাজায় ইসরায়েলের তীব্র হামলার জন্য নেতানিয়াহুর ওপর চাপ প্রয়োগ করতে আগ্রহী। এতে এটাও স্পষ্ট হয়, সাবেক মানবাধিকার আইনজীবী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে আন্তর্জাতিক আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
গত মে মাসে নেতানিয়াহু ও তাঁর সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালেন্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি নিয়ে আইসিসির কৌঁসুলির চেষ্টাকে ‘আপত্তিকর’ বলে বর্ণনা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কার্যত এ পরোয়ানা অনেকটাই প্রতীকী পদক্ষেপ; তবু যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদ আইসিসির কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে আইন পাসে ভোট দিয়েছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্রিটেনের নতুন সরকার ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের মতো কোনো মূর্ত পদক্ষেপ দিচ্ছে না। সরকারের কর্মকর্তা বলছেন, ইসরায়েল মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে কিনা– সে বিষয়ে তারা আইনি পর্যালোচনা খতিয়ে দেখছেন।
এসব পদক্ষেপ এটাই প্রতীয়মান করে, ‘ইউরোপিয়ান নিউম্যান রাইটস ল’ নামের গ্রন্থের রচয়িতা স্টারমার তার নিজের ধাঁচেই পথ চলছেন, যা জো বাইডেন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ও জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎসের মতো অন্য পশ্চিমা নেতাদের অস্বস্তিতে ফেলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্রিটেনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক লেবার পার্টির মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে; কারণ দলটির অনেক কর্মী-সমর্থক চান, ব্রিটেন যেন অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায়।
লন্ডন ও নিউইয়র্কভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউএস-মিডলইস্ট প্রজেক্টের পরিচালক ড্যানিয়েল ল্যাভি বলেন, স্টারমার বলতেই পারেন– ‘আমি কী করছি, তা দিয়ে আমাকে মূল্যায়ন করুন। এ দুটি প্রাথমিক সিদ্ধান্ত আমি নিলাম। আপনি কীভাবে এগুলোর সমালোচনা করবেন?’
স্টারমার যাঁকে অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দিয়েছেন, সেই রিচার্ড হারমারও একজন মানবাধিকার আইনজীবী ও ঘনিষ্ঠজন। তিনি ইসরায়েল ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী স্টারমারকে পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকবেন। হারমার জন্ম ইহুদি পরিবারে; তিনি ইহুদিবাদী বিভিন্ন বিষয়ে সমর্থনও করেন। তবে ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বর্জনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সাবেক সরকারের আইন পাসের চেষ্টার বিরোধিতা করতে তিনি লেবার পার্টিকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাঁর যুক্তি, এমনটা হলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হবে।
এই হারমার প্রসঙ্গে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের সংবিধান ও মানবাধিকার বিষয়ক অধ্যাপক কোম ও’সিনেইড বলেন, মানবাধিকার আইন ও এর পক্ষে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে তিনি সুপরিচিত বিশেষজ্ঞ।