দেয়ালে ফাঁকা গর্ত, ছাদ থেকে ঝরে পড়ছে সিমেন্টের পলেস্তারা, সিলিং ফ্যানের একটি পাখা নেই আর মেঝেতে বাসন ও অন্যান্য গৃহস্থালী জিনিসপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখায় অবস্থিত পুঞ্চ জেলার একটি ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির দৃশ্য এটি। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে দুই দেশের গোলাগুলিতে এ ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে।
বাড়িটির মালিক মেহতাব দীন। পেশায় তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। বিবিসিকে এই ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমরা একটি ছোট ব্যবসা করি। সবকিছু ফেলে কোথাও যেতেও পারি না। এই বাড়িটি আমাদের স্বপ্ন, এটি ছাড়া আমরা কীভাবে বাঁচব? আমরা এখন কোথায় যাব?’
৪৮ বছর বয়সী মেহতাব দীনের চোখে-মুখে হতাশা। ভয়ার্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে ছিলাম। এমন সময় তীব্র বিস্ফোরণ হয়। আমরা সবাই মেঝেতে পড়ে যাই। আমার বুকে কাঁচের টুকরো আঘাত করে।’
মঙ্গলবার রাতের ওই হামলায় আহত হওয়ার পর স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নেন মেহতাব। চিকিৎসা শেষে পুঞ্চের বাড়িতে ফিরে দেখেন- তার প্রতিবেশীরা নিরাপদ এলাকায় পালিয়ে গেছেন।
বিবিসির সাংবাদিক বলেন, ‘আমি মেহতাব দীনকে জিজ্ঞাসা করি- তিনিও চলে যেতে চান কিনা।’ উত্তরে মেহতাব দীন জানান, তিনি তার বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাবেন না। আপাতত দেয়ালের গর্তগুলো বিছানার চাদর দিয়ে ঢেকে দেবেন। পরে মেরামত করার জন্য কাউকে পেলে সেগুলো ঠিকঠাক করাবেন।
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর মধ্যে একটি পুঞ্চ। আন্তঃসীমান্ত গোলাগুলিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। স্থানীয়রা বিবিসিকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতে গোলাগুলি শুরুর পর পুঞ্চ এলাকায় বসবাসকারী প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বেশিরভাগই নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে চলে গেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, বুধবার ভোরে ইসলামাবাদে ভারত ধারাবাহিক বিমান হামলা চালানোর পর পাকিস্তান থেকে কামানের গোলাবর্ষণ তীব্র হয়েছে।
তবে ভারতের অভিযোগ, গত ১৪ দিনে পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর মারাত্মক হামলার পর থেকে পাকিস্তান বারবার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। সীমান্তে ভারতীয় স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে ১৬ জনকে হত্যা করেছে। যদিও ইসলামাবাদ এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।