কোথাও গুজবের জেরে, কোথাও চোর সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে রাজধানী কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়। তার জেরে একের পর এক নিহত হচ্ছেন।
গত তিন দিনে কলকাতা ও রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় গণপিটুনিতে অন্তত ৫ জন নিহত হয়েছেন। শেষ ঘটনা ঘটেছে রোববার, হুগলির তারকেশ্বরে নাইটামাল পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রানাবাঁধে। সেখানে গাড়িচালক ২৩ বছর বয়সি বিশ্বজিৎ মান্নাকে স্থানীয় মানুষ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। তাদের সন্দেহ ছিল, বিশ্বজিৎ গাড়ি চুরি করেছে।
পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় একটি পরিবারের বাবা, ছেলে ও তাদের কিছু বন্ধু মিলে বিশ্বজিৎকে বেধড়ক মারে। মারের চোটে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। পরিবারের সদস্যরা রাত দুইটা নাগাদ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ বাবা-ছেলে বিকাশ সামন্ত ও দেবকান্ত সামন্তকে গ্রেপ্তার করেছে।
চোপড়ার ঘটনা
রাজ্যের উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়ায় একটি ভয়ংকর ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানে এক নারী ও এক পুরুষকে হাত বেঁধে পেটানো হয়। দুজনেই রাস্তায় পড়েছিলেন। চোপড়ার লক্ষ্মীপুর পঞ্চায়েতের দিঘলগাঁও গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে।
এই পেটানোর কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাজিমুল হক নামের এক যুবক। স্থানীয়ভাবে ‘জেসিবি’ নামে পরিচিত তাজিমুল চোপড়ার বিধায়ক হামিদুল রাহমানের ঘনিষ্ঠ। হামিদুল উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা।
পুলিশ তাজিমুলকে গ্রেপ্তার করেছে। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ৫টি মামলাও করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে অন্তত দু’টি জামিনঅযোগ্য। প্রতিটি মামলারই বাদি পুলিশ।
বিরোধী দলগুলি ও গ্রামবাসীদের দাবি, তাজিমুল ওই গ্রামের তৃণমূল কোর কমিটির প্রধান এবং বিধায়কের ঘনিষ্ঠ। তার জোরেই গ্রামে তার শাসন চলতো।
ওই নারী ও পুরুষের বিরুদ্ধে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ ছিল। সেটা নিয়েই চলছিল জেসিবি’র ইনসাফ সভা। একজন লুকিয়ে ভিডিও করেছেন। তিনি এখন গ্রামছাড়া বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের টেলিভিশন চ্যানেল টিভি ৯।
বিধায়ক হামিদুল জানিয়েছেন, ”ওই নারী স্বামীকে ছাড়া অসামাজিক কাজ করেছিল। তাই গ্রামে সালিশি সভা বসেছিল। গ্রামবাসীরা একটু ভুল করেছে। কিন্তু ওই নারী বা তার স্বামী কোনো অভিযোগ করেনি। সমাজকে খারাপ করছিল বলে একটা সালিসি সভা বসেছিল।”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা টুইট করে বলেছেন, ”পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভয়ংকর ভিডিও সামনে এসেছে। তৃণমূল বিধায়ক আবার এটাকে সমর্থন করেছেন।”
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ”বিধায়কের কথা শুনে মনে হচ্ছে, ভারতের মধ্যে আলাদা কোনো দেশ আছে, যেখানে ওদের আইন চলে। এ সব তো মেনে নেয়া যায় না।”
পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের মতে, ”ওটা শুধু সালিসি সভা ছিল না। জেসিবি নামে গুণ্ডার মাধ্যমে বিচারের বুলডোজার চালানো হয়েছে। পুলিশের সাহায্যে তৃণমূলের এটাই নিয়ম।”
তৃণমূলের নেতা কুণাল ঘোষ বলেছেন, ”চোপড়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। পুলিশকে ধন্যবাদ, দাদাগিরি করা ওই জানোয়ারকে গ্রেপ্তার করার জন্য। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যারা বসে দেখছিল, তারাও সমান দোষী।”
পাণ্ডুয়ার ঘটনা
পাণ্ডুয়ায় মনসা পুজোয় মাইক বাজানো নিয়ে গণ্ডগোলের জেরে এক যুবককে রাস্তায় ফেলে বাঁশ দিয়ে পেটানো হয়। তার রক্তবমি শুরু হয় এবং একদিনের মাথায় ওই যুবকের মৃত্যু হয়।
অভিযোগ, ওই যুবক মাইক বাজানো নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। মাইক বাজানো নিয়ে প্রতিবাদের জেরে তাকে বেধড়ক মারা হয়।
ঝাড়গ্রামে যা হয়েছে
ঝাড়গ্রামে চুরির সন্দেহে বেধড়ক মারের ফলে একজন যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বন্ধু অক্ষয়ের সঙ্গে সৌরভ সাউ স্কুটারে করে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেসময় তারা নির্মাণ সামগ্রী চুরি করেছে, এই অভিযোগে ব্যাপক পেটানো হয়। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সৌরভ পরে মারা যান।
কলকাতার ঘটনা
রাজধানীর বৌবাজারের ছাত্রাবাসে ইরশাদ নামে এক যুবককে মোবাইল চোর সন্দেহে পিটিয়ে মারা হয়েছে। তিনি চাঁদনী চক এলাকায় একটি দোকানে কাজ করতেন। তাকে ছাত্রাবাসে ধরে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারা হয়।
তিনি যেখানে কাজ করতেন, সেই মালিককে ফোন করেন। তিনি পুলিশে খবর দেন। কিন্তু ইরশাদকে বাঁচানো যায়নি।
সল্ট লেকেও সম্প্রতি মোবাইল চোর সন্দেহে একজনকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। তার আগে শিশুচুরির অভিযোগে উত্তর ২৪ পরগনার বিরাটিতে দুই নারীকে মারধর করা হয়েছে।
এসএমডব্লিউ
পশ্চিমবঙ্গে গণপিটুনিতে তিনদিনে নিহত ৫
কোথাও গুজবের জেরে, কোথাও চোর সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে রাজধানী কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা। তার জেরে একের পর এক নিহত হচ্ছেন।
গত তিন দিনে কলকাতা ও রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় গণপিটুনিতে অন্তত ৫ জন নিহত হয়েছেন। শেষ ঘটনা ঘটেছে রোববার, হুগলির তারকেশ্বরে নাইটামাল পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রানাবাঁধে। সেখানে গাড়িচালক ২৩ বছর বয়সি বিশ্বজিৎ মান্নাকে স্থানীয় মানুষ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। তাদের সন্দেহ ছিল, বিশ্বজিৎ গাড়ি চুরি করেছে।
পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় একটি পরিবারের বাবা, ছেলে ও তাদের কিছু বন্ধু মিলে বিশ্বজিৎকে বেধড়ক মারে। মারের চোটে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। পরিবারের সদস্যরা রাত দুইটা নাগাদ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ বাবা-ছেলে বিকাশ সামন্ত ও দেবকান্ত সামন্তকে গ্রেপ্তার করেছে।
চোপড়ার ঘটনা
রাজ্যের উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়ায় একটি ভয়ংকর ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানে এক নারী ও এক পুরুষকে হাত বেঁধে পেটানো হয়। দুজনেই রাস্তায় পড়েছিলেন। চোপড়ার লক্ষ্মীপুর পঞ্চায়েতের দিঘলগাঁও গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে।
এই পেটানোর কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাজিমুল হক নামের এক যুবক। স্থানীয়ভাবে ‘জেসিবি’ নামে পরিচিত তাজিমুল চোপড়ার বিধায়ক হামিদুল রাহমানের ঘনিষ্ঠ। হামিদুল উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা।
পুলিশ তাজিমুলকে গ্রেপ্তার করেছে। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ৫টি মামলাও করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে অন্তত দু’টি জামিনঅযোগ্য। প্রতিটি মামলারই বাদি পুলিশ।
বিরোধী দলগুলি ও গ্রামবাসীদের দাবি, তাজিমুল ওই গ্রামের তৃণমূল কোর কমিটির প্রধান এবং বিধায়কের ঘনিষ্ঠ। তার জোরেই গ্রামে তার শাসন চলতো।
ওই নারী ও পুরুষের বিরুদ্ধে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ ছিল। সেটা নিয়েই চলছিল জেসিবি’র ইনসাফ সভা। একজন লুকিয়ে ভিডিও করেছেন। তিনি এখন গ্রামছাড়া বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের টেলিভিশন চ্যানেল টিভি ৯।
বিধায়ক হামিদুল জানিয়েছেন, ”ওই নারী স্বামীকে ছাড়া অসামাজিক কাজ করেছিল। তাই গ্রামে সালিশি সভা বসেছিল। গ্রামবাসীরা একটু ভুল করেছে। কিন্তু ওই নারী বা তার স্বামী কোনো অভিযোগ করেনি। সমাজকে খারাপ করছিল বলে একটা সালিসি সভা বসেছিল।”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা টুইট করে বলেছেন, ”পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভয়ংকর ভিডিও সামনে এসেছে। তৃণমূল বিধায়ক আবার এটাকে সমর্থন করেছেন।”
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ”বিধায়কের কথা শুনে মনে হচ্ছে, ভারতের মধ্যে আলাদা কোনো দেশ আছে, যেখানে ওদের আইন চলে। এ সব তো মেনে নেয়া যায় না।”
পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের মতে, ”ওটা শুধু সালিসি সভা ছিল না। জেসিবি নামে গুণ্ডার মাধ্যমে বিচারের বুলডোজার চালানো হয়েছে। পুলিশের সাহায্যে তৃণমূলের এটাই নিয়ম।”
তৃণমূলের নেতা কুণাল ঘোষ বলেছেন, ”চোপড়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। পুলিশকে ধন্যবাদ, দাদাগিরি করা ওই জানোয়ারকে গ্রেপ্তার করার জন্য। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যারা বসে দেখছিল, তারাও সমান দোষী।”
পাণ্ডুয়ার ঘটনা
পাণ্ডুয়ায় মনসা পুজোয় মাইক বাজানো নিয়ে গণ্ডগোলের জেরে এক যুবককে রাস্তায় ফেলে বাঁশ দিয়ে পেটানো হয়। তার রক্তবমি শুরু হয় এবং একদিনের মাথায় ওই যুবকের মৃত্যু হয়।
অভিযোগ, ওই যুবক মাইক বাজানো নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। মাইক বাজানো নিয়ে প্রতিবাদের জেরে তাকে বেধড়ক মারা হয়।
ঝাড়গ্রামে যা হয়েছে
ঝাড়গ্রামে চুরির সন্দেহে বেধড়ক মারের ফলে একজন যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বন্ধু অক্ষয়ের সঙ্গে সৌরভ সাউ স্কুটারে করে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেসময় তারা নির্মাণ সামগ্রী চুরি করেছে, এই অভিযোগে ব্যাপক পেটানো হয়। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সৌরভ পরে মারা যান।
কলকাতার ঘটনা
রাজধানীর বৌবাজারের ছাত্রাবাসে ইরশাদ নামে এক যুবককে মোবাইল চোর সন্দেহে পিটিয়ে মারা হয়েছে। তিনি চাঁদনী চক এলাকায় একটি দোকানে কাজ করতেন। তাকে ছাত্রাবাসে ধরে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারা হয়।
তিনি যেখানে কাজ করতেন, সেই মালিককে ফোন করেন। তিনি পুলিশে খবর দেন। কিন্তু ইরশাদকে বাঁচানো যায়নি।
সল্ট লেকেও সম্প্রতি মোবাইল চোর সন্দেহে একজনকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। তার আগে শিশুচুরির অভিযোগে উত্তর ২৪ পরগনার বিরাটিতে দুই নারীকে মারধর করা হয়েছে।