ফেনীতে ভয়াবহ বন্যায় পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলা ছাড়ও নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শহরের অধিকাংশ এলাকার বাসা বাড়িতে পানি ঢুকেছে। শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়ক, একাডেমী সড়ক ও ক্যাডেট কলেজের সামনের সড়কে বুক পরিমাণ পানি রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে উদ্ধার কাজ চলছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় উদ্ধার কার্যক্রম সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন করছে।তবে অভিযোগ রয়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক লোকজন আটকা পড়েছে যাদের কাছে গত তিনদিনে উদ্ধারকারী দল পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উদ্ধারকারীরা কোথাও রাস্তা ধরে বুক পরিমাণ পানি দিয়ে হেঁটে কোথাও নৌকায় করে যতটুকু পেয়েছে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করতে না পারায় পানিবন্দি রয়েছেন অনেকে।
পরশুরাম দুর্গাপুর এলাকার মোহাম্মদ লিখন জানান, তার ভাতিজার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। গত তিনদিন ধরে ঘরে আটকা পড়ে রয়েছেন। তার ডেলিভারির তারিখ পার হয়ে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে ডেলিভারি হতে পারে। ফেনী জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী সব নাম্বারে ফোন করেও যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেনি। ফলে বাড়িতে আটকা পড়ে রয়েছে।বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। দোকানপাট বন্ধ থাকার কারণে এ সকল এলাকায় অনেকেই খাবার সংগ্রহ করতে পারেনি। তাদের খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে অনেকে কষ্ট করছেন বলে জানা গেছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো যথেষ্ট পরিমাণ খাওয়ার রয়েছে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী রয়েছে বলে জানালেও সঠিক যোগাযোগ রক্ষা করতে না পারায় কোথাও একাধিকবার খাদ্য সামগ্রী ও অন্যান্য সহযোগিতা পেলেও কোথাও একবারও না পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে সঠিকভাবে যেন সকলের সুযোগ-সুবিধা পায় এবং কোন রকম বেঁচে থাকার ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ।দিনভর সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার টহল দিতে দেখা গেলেও উদ্ধার কার্যক্রমের বিষয়ে আমাদের কিছু জানায়নি। স্থানীয় লোকজন বলেন, ত্রাণ সরবরাহসহ সকল উদ্ধার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে তদারকি করতে।
বুয়েটের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত হোসেন রনি ফেনীর ফুলগাজীতে উদ্ধার কার্যক্রম করার জন্য তার সহকর্মীদের নিয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যাওয়ার জন্য এসে বোট নিয়ে রওনা দেয় মাঝপথে বোটের ইঞ্জিন নষ্ট হওয়ার কারণে আটকা পড়ে যায়। পরবর্তীতে অন্যের সহযোগিতা করে তাদেরকে উদ্ধার করতে হয়েছে। পরবর্তীতে তারা অন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট ত্রাণ কার্যক্রম চালাতে এলাকায় যায়।ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ সরবরাহ করতে আসা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো আগের থেকে ওইসব এলাকার বিষয়ে না জেনে যাওয়ার ঠিক না বলছেন অনেকেই। কারণ পানিতে নদী-নালা-খাল-বিল সমতল ভূমি সব একরকম হয়ে গেছে। কোন জায়গা দিয়ে নদী রয়েছে কোথায় খাল রয়েছে এটা বুঝার সুবিধা নেই। অপরিচিত কোন ব্যক্তি বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহযোগিতা করতে গেলে বিপদগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। সেক্ষেত্রে চেনা-জানা লোক অথবা এলাকার বিষয়টি জেনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যাওয়াটা ভাল মনে করছেন অনেকে।
ফেনী শহরের ডাক্তার পাড়া এলাকায় দেখা যায় ছোট শিশুকে বাঁচানোর জন্য তাদের বড় পাতিলের মধ্যে রেখে পানি দিয়ে টেনে টেনে তাদের স্বজনরা নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন।সব মিলিয়ে বৃদ্ধ শিশু বাচ্চা বৃদ্ধ তাদেরকে নিরাপদ স্থানে নেয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো সবাই চেষ্টা করছেন বলে কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন।ঢাকা-চট্টগ্রাম বিভিন্ন এলাকা থেকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সহযোগিতা করার জন্য অনেকেই এসেছেন। কিন্তু পানির স্রোতের কারণে আবার অন্যদিকে পর্যাপ্ত বোট অথবা নৌকা না থাকার কারণে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছাতে পারছেন না। এতে তারা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছেন। ত্রাণ সব সময় পর্যাপ্ত থাকলেও পৌঁছানোর ব্যবস্থা না থাকার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী এবং বিশুদ্ধ পানি সহ সংশ্লিষ্ট নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছাতে পারছেন না। ফলে ওই এলাকার মানুষ আটকা পড়ে কষ্ট করছে, অন্যদিকে না খেয়েও কষ্ট করতে হচ্ছে।