পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতার গদি হারায় ইমরান সরকার। এরপর থেকেই শাহবাজ সরকারের ওপর নানা অভিযোগ তুলে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়ে জনসভা করে আসছেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রধান। সমর্থকরাও দলে দলে সভাস্থলে যোগ দিয়ে সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছেন। যদিও তখত ছাড়তে নারাজ শাহবাজ সরকার। দলের হয়ে ইমরান সরকারের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তো বটেই, ইতোমধ্যে সাফ জানিয়েও দিয়েছেন- আগাম নির্বাচন হচ্ছে না।
তবে সে যাই হোক, নিজের দাবিতে অনড় ইমরান খান। রীতিমতো জনসভাও করে যাচ্ছেন। আগামীকাল শনিবারও (১৭ সেপ্টেম্বর) পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের চারসাদ্দা এলাকায় সমাবেশ করবেন সাবেক এই ক্রিকেটার। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই এক ভিডিও বার্তায় পাকিস্তানের ‘প্রকৃত স্বাধীনতায়’ বিশ্বাসীদের জনসভায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে পিটিআই মহাসচিব আসাদ উমর বলেছেন, যে জাতি জীবনে দাসত্ব না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ইমরান খান সে জাতির প্রকৃত স্বাধীনতা পেতে সংগ্রাম করছেন। জাতি যেকোনো মূল্যে দাসত্ব মেনে নেবে না।
এদিকে, শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এক টুইটে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের উদ্ধৃতি দিয়ে ক্ষমতাসীন শাহবাজ সরকারের তীব্র নিন্দা করেছেন ইমরান খান। তাতে তিনি লিখেছেন, আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনগুলো বলছে, এই আমদানি করা সরকার ভেঙে পড়া অর্থনীতি চাঙা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
অবশ্য, এর আগেও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এক লাইভে পাক সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ইমরান খান বলেছেন, বর্তমান সরকার দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে গেছে। তার ভাষায়, যদি জোট সরকার আমাদের দেয়ালের সঙ্গে ঠেসে ধরে তাহলে জনগণকে ডাক দেওয়া ছাড়া আমাদের হাতে বিকল্প থাকবে না।
পিটিআই প্রধান আরও বলেছেন, দেশের অর্থনীতি ক্রমশ নিম্নমুখী। এতে জনগণের দুর্ভোগ বাড়ছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় দেশ যদি অব্যাহতভাবে ভুগতে থাকে তাহলে পাকিস্তানকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা খুব কঠিন হবে। এ সময় তিনি শিগগিরই নতুন নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে, শুক্রবার অপর একটি টুইটে ইমরান খান পিটিআই এবং বর্তমান সরকারের আমলের বিভিন্ন পণ্যের দামের তুলনা করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, আমরা কী রেখে গিয়েছিলাম আর কীভাবে আমদানিকৃত সরকার শাসন পরিবর্তনের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অর্থনীতিতে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে।
যদিও সবকিছু উপেক্ষা করেই পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ক্ষমতা ধরে রাখতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে অর্থনীতি সচল রাখতেও চেষ্টা করছেন। এ লক্ষ্যে শুক্রবার বন্যা পরিস্থিতি ও পাকিস্তানের অর্থনীতি নিয়ে চীনের প্রধানমন্ত্রী শি জিনপিংয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আলোচনাও করেছেন।
এতে বিশ্ব রাজনৈতিকদের ভাষ্য, ইমরান খান জনগণকে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করতে পারলে নতুন মোড় নিতে পারে পাকিস্তানের রাজনীতি। তবে বরাবরের মতোই শাহবাজ শরীফ তখত ধরে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবেন। সব মিলিয়ে পাকিস্তানের পরবর্তী অবস্থা নির্ভর করছে ইমরান খানের ঘোষিত জনসভাগুলো এবং শাহবাজ শরীফের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টার ওপর।
উল্লেখ্য, অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে দেশটির প্রধান নির্বাহী হিসেবে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রধান ইমরান খানের মেয়াদের ‘অপ্রীতিকর সমাপ্তির’ দুই দিন পর গত ১১ এপ্রিল পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শাহবাজ শরীফ। এর পরপরই পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অনুগত ১০০টিরও বেশি আইনপ্রণেতা পদত্যাগ করেন। সেই সঙ্গে তারা নতুন, ‘পশ্চিমা-বান্ধব’ শাহবাজ শরীফকে ‘মাথাব্যথা’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন।
ক্ষমতাচ্যুতের পর বিভিন্ন সময়ে পিটিআই প্রধানসহ অন্যরা শাহবাজ সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলছেন। সঙ্গে চলমান ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলা নিয়েও বর্তমান পাক সরকারকে বিরোধী দলের নানা সমালোচনায় পড়তে হচ্ছে। কারণ, নজিরবিহীন এই বন্যায় ইতোমধ্যেই পাকিস্তানে মৃতের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজারে পৌঁছেছে। দেশটির বেশিরভাগ অংশ বর্তমানে পানির নিচে রয়েছে। যদিও শাহবাজ সরকারের পক্ষ থেকে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত লক্ষাধিক মানুষের জন্য ত্রাণ তৎপরতা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে বন্যার্তদের বেশিরভাগই খাবারের জন্য হাহাকার করছেন। সঙ্গে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব তো আছেই।
তথ্যসূত্র: এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, ডন, এআরওয়াই নিউজ।


