
যেদিন হয় না, সেদিন যেন কোনো কিছুই হয় না। তানজিদ তামিমের এলবিডব্লিউ নিয়ে প্রশ্ন আর সন্দেহ মনে জাগতেই পারে। রিশাদ হোসেন ব্যাট হাতে আগে আসতে পারলে কিছুটা হলেও আশা বাংলাদেশ দেখতে পারত। মনের ভেতর আরও অনেক পরিস্থিতিই তৈরি করে আক্ষেপে পুড়তে পারেন দেশের ক্রিকেট ভক্তরা।
তবে সবচেয়ে বড় সত্য, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আরেকবার ভারতের কাছে হার নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ। তাতে সুপার এইট থেকে বাংলাদেশের বিদায়ের মঞ্চটাও অনেকটা প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে। অ্যান্টিগায় সুপার এইটে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ হেরেছে ৫০ রানের বড় ব্যবধানে। ভারতের করা ১৯৬ রানের বিপরীতে বাংলাদেশের ব্যাটাররা মিলে তুলতে পেরেছেন ১৪৬ রান।
এমন হারের পর সুপার এইট থেকে সেমিফাইনালে যেতে বাংলাদেশের স্বপ্নটা টিকে আছে অনেক যদি/কিন্তু আর গাণিতিক মারপ্যাঁচের ওপর ভিত্তি করে। সেটাও অনেক দূরের পথ। ভারত ম্যাচে হারের চেয়েও বেশি নজরে পড়বে বাংলাদেশের দৃষ্টিকটু ব্যাটিং, অধিনায়ক শান্তর পরিকল্পনার অভাব এবং নিজেদের অগোছালো বোলিংয়ের দিকে। দেশে টিভিসেটের সামনে বসে থাকা কোটি সমর্থকদের প্রাপ্তি তাই নেহাতই হতাশা।
১৯৭ রানের বিপরীতে যেমন ব্যাটিং দরকার ছিল, তার ছিটেফোঁটাও দেখা গেল না বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসে। শুরুর দশ ওভারে টাইগারদের ব্যাটিং লাইনআপ তুলতে পারে মোটে ৬৭ রান। টপ অর্ডারের সকলেই ছিলেন সাবধানী ধাচে। সেটাতেই যেন আটকাল টাইগারদের ব্যাটিং ইউনিট। পরের ১০ ওভারের রানরেটের সেই চাপ আর নিতে পারেনি বাংলাদেশ।
রানতাড়া করতে নেমে কোনো পর্যায়েই ভারতের বোলিং লাইনআপের ওপর সে অর্থে চাপ ফেলতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটাররা। পাওয়ারপ্লেতে ভারতের ৫৩ রানের বিপরীতে বাংলাদেশ করেছে মোটে ৪২। পরের চার ওভারে নাজমুল শান্ত এবং তানজিদ তামিম ব্যাট করেছেন ৬.২৫ রানরেটে। এরইমাঝে অবশ্য উইকেটের পতনটাও দেখতে হয়েছে। কুলদীপ যাদব ফিরিয়েছেন জুনিয়র তামিম আর তাওহিদ হৃদয়কে।
যেখানে দরকার ছিল বাউন্ডারির। সেখানে সাবধানী খেলতে চেয়ে বাউন্ডারি ছাড়াই ২৩ বল পার করেছে শান্ত-তামিমের জুটি। এরইমাঝে কুলদীপের গুগলিতে ফিরেছেন জুনিয়র তামিম। বেশ অনেকটা সময় ধরেই ভুগছিলেন তিনি। তাকে আউট করে কিছুটা যেন যন্ত্রণা থেকেই মুক্তি দিয়েছেন। তবে বড় ভরসা হয়ে ক্রিজে আসা তাওহিদ হৃদয় করেছেন হতাশ।
কুলদীপের দিনের দ্বিতীয় শিকার হয়েছেন তিনি। এবারও একটা এলবিডব্লিউ দেখতে হলো বাংলাদেশকে। সাকিব আল হাসান এসেছেন। একটা চার এবং একটা ছক্কা এসেছিল তার ব্যাট থেকে। কিন্তু অফফর্মটা সহসা কাটছে না সাকিবের। ৬ বলে ১১ করে রোহিত শর্মাকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন সাবেক অধিনায়ক।এবারও উইকেটশিকারী সেই কুলদীপ। চার ওভারে ১৯ রানে ৩ উইকেট শিকার করে বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্নটাই ফিকে করে দিয়েছেন এই চায়নাম্যান বোলার।
চার-ছয়ের পসরা সাজিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৯৭ রানের বিশাল এক টার্গেট দাঁড় করিয়েছে ভারত। কখনো রোহিত শর্মা আর বিরাট কোহলি, কখনো রিশাভ পান্ত, কখনোবা শিভাম দুবে। টাইগারদের ওপর চড়াও হতে ছাড়েননি কোনো ব্যাটারই। ২০ ওভারে তারা আদায় করেছেন ১৩ ছক্কা এবং ১২ চার। তাতেই নির্ধারিত ওভার শেষে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ১৯৬ রান।
বাংলাদেশ এদিন নেমেছিল সহ-অধিনায়ক তাসকিন আহমেদকে বাদ রেখে। তার বদলে যুক্ত হয়েছিলেন ব্যাট জাকের আলী অনিক। এক বোলার কম নিয়ে খেলার সিদ্ধান্তটা আপাতত বুমেরাং হয়েই এসেছে বাংলাদেশের জন্য। তানজিম সাকিব এবং শেখ মাহেদি হাসান ছাড়া বাকিরা সকলেই ছিলেন খরুচে। শেষ বলে চার মেরে ফিফটি পূর্ণ করেছেন হার্দিক পান্ডিয়া। ভারতের আজকের সর্বোচ্চ স্কোরার তিনিই।
শুরুটা করেছিলেন রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি। শুরুতেই সাকিব আল হাসানকে টার্গেট করে খেলেছিলেন দুজনে। কাজেও এসেছিল। কিন্তু সাকিবও পালটা আঘাত করেছিলেন। নিজের প্রথম ওভারে ১৫ রান দেয়ার পর দ্বিতীয় ওভার করতে এসেও শুরুতে হজম করেছেন এক ছয় এবং এক চার। এরপরই কিছুটা লেন্থ কমিয়ে বল করেছেন রোহিতকে। মিড অফে ক্যাচ দেন ভারতীয় অধিনায়ক। তাতে প্রথম বোলার হিসেবে বিশ্বকাপে ৫০ উইকেট পূরণ করেন সাকিব ।
তানজিমকে সামনে এসে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে গেছেন কোহলি। কিছুটা ধীরগতির ওই বলেই থেমেছে রানে ফেরা কোহলির আজকের ইনিংস। ২৮ বলে ৩৭ রান করেছেন। দলকে বড় রানের ভিতটাও গড়ে দিয়েছেন। নবম ওভারে দ্বিতীয় উইকেটের দেখা পাওয়া বাংলাদেশকে পরের উইকেট পেতে অপেক্ষা করতে হলো কেবল দুই বল।
প্রথম বলেই হুক করে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন সূর্যকুমার যাদব। পরের বলে কট বিহাইন্ড! শর্ট লেংথের বলে আউটসাইড এজ হওয়া বল চলে যায় লিটনের হাতে। কিছুটা নীরব ছিল বাংলাদেশের সবাই। কেবল আত্মবিশ্বাসী ছিলেন লিটন। আম্পায়ার সংকেত দিতেই উল্লাসে মাতে বাংলাদেশ। এরপর মুস্তাফিজের ওভারে ১৪ আর রিশাদের ওভারে ১৩ রান এলে ভারতের স্কোর রীতিমত হাতের বাইরে যেতে থাকে।
যদিও ১৩ রান খরচের সেই ওভারেই রিশাদ পেয়েছিলেন পান্তের উইকেট। ১২ ওভার শেষে রান ৪ উইকেটে ১১০। নাজমুল শান্ত এরপর প্রতি ওভারেই বলার পরিবর্তন করেছেন। বলাই বাহুল্য সেটা কাজেই আসেনি কোনোক্রমে। মাঝের ৮ ওভারে ভারত নিয়েছে ৮১ রান। আর শেষের ৪ ওভারে তাদের ঝুলিতে জমা হয় ৬২ রান।
শিভাম দুবে ও হার্দিক পান্ডিয়ার ৩৪ বলে ৫৩ রানের জুটিই শেষ পর্যন্ত ভারতকে এগিয়ে নেয়। রিশাদ দুবেকে ফিরিয়ে দিলেও আজ ছিলেন খরুচে। মুস্তাফিজ নিজের চার ওভারে দিয়েছেন ৪৮ রান। সাকিবের ৩ ওভারে আসে ৩৭ রান। দুই উইকেট পাওয়া তানজিম সাকিব ছিলেন ইকোনমিক্যাল। দুই উইকেট পেতে খরচ করেছেন ৩২ রান।