‘প্রতিযোগিতায় বিশ্বাসী নই, নিজের কাজেই মন দিতে চাই’—সব ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির শিল্পীরাই এমন কথা বলে থাকেন। কিন্তু খুব গোপনে অদৃশ্য একটি প্রতিযোগিতা তাদের তাড়া করে বেড়ায়। চাইলেও এই প্রতিযোগিতা থেকে ঠিক বেরিয়ে আসা যায় না! তবে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির পরিধির উপর নির্ভর করে এই প্রতিযোগিতার ধরন।
ভারতীয় বাংলা সিনেমায় নিয়মিত অভিনয় করছেন বাংলাদেশি বেশ কজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী। ‘আবর্ত’ সিনেমার মাধ্যমে জয়া আহসানের টলিউড যাত্রা শুরু। তারপর ‘রাজকাহিনী’, ‘বিসর্জন’, ‘বিজয়া’, ‘কণ্ঠ’, ‘বিনিসুতোয়’সহ আরো বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন জয়া। আরো কয়েকটি সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
সৃজিত মুখার্জি নির্মিত ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি’ ওয়েব সিরিজের মাধ্যমে ওপার বাংলায় পা রেখেছেন আজমেরী হক বাঁধন। মুক্তির পর এটি দারুণ প্রশংসিত হয়েছে। এখন তাকে নিয়ে টলিউডের অনেক পরিচালকই কাজ করার কথা ভাবছেন। রাজর্ষি দে পরিচালিত ‘মায়া’ সিনেমার মাধ্যমে টলিউড যাত্রা শুরু করেন রাফিয়াথ রশীদ মিথিলা। এরপর রিঙ্গো ব্যানার্জির ‘অ্যা রিভার ইন হেভন’ সিনেমায় নাম লেখান তিনি। কিছুদিন আগে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন অরুণাভ খাসনবিশ পরিচালিত ‘নীতিশাস্ত্র’ সিনেমায়। কলকাতায় মিথিলার এটি তৃতীয় মিশন।
কলকাতার সিনেমায় এই তিন নায়িকা যে ধরনের সিনেমায় অভিনয় করছেন, এ ধরনের চরিত্রে আগে দেখা যেত পাওলি দাম, স্বস্তিকা মুখার্জি, রাইমা সেনকে। মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমার চাহিদা কমে যাওয়ায় শুভশ্রী, শ্রাবন্তী, মিমি চক্রবর্তী, নুসরাত জাহানও অন্য ধারার সিনেমার দিকে ঝুঁকেছেন। ফলে অল্প পরিসরে প্রতিযোগিতা একটু বেশি। এ নিয়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে ওপার বাংলার অভিনেত্রীদের মধ্যে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নায়িকা ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—‘এমন অনেক চরিত্রই বাংলাদেশি অভিনেত্রীদের দেওয়া হয়, যেটা এখানকার যে কেউ করতে পারত।’ তবে এই প্রতিযোগিতার দৌড়ে নামতে নারাজ জয়া আহসান। এর আগে এই অভিনেত্রী বলেছিলেন—‘সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকা তো ভালো! আমার মতে শিল্পের কোনো সীমারেখা থাকা উচিত নয়।’
এ বিষয়ে নিজ যোগ্যতাকে প্রধান্য দিয়েছেন মিথিলা। তার ভাষায়—‘কেউ কারো কাজ, জায়গা কেড়ে নিতে পারেন না। সবাই নিজ যোগ্যতায় কাজ পাচ্ছেন। আমি বৈবাহিক সূত্রে কলকাতায় থাকছি, তাই এখন কলকাতায় কাজ করছি। আর এখানে আমি মাত্র কাজ শুরু করেছি, আমাকে বোধহয় কারো প্রতিযোগী হিসেবে দেখাটা ঠিক হবে না।
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়সহ অনেকে বাংলাদেশের সিনেমায় কাজ করেছেন। বাংলাদেশের ‘কমান্ডো’ সিনেমায় কাজ করেছেন দেব। আবার এ পারে এসে একাধিক নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন বাংলাদেশের নুসরাত ফারিয়া। অভিনেতারা অন্য ইন্ডাস্ট্রিতে গিয়ে কাজ করবেন এটাই স্বাভাবিক। পাওলি, স্বস্তিকা যেমন বলিউডে নিয়মিত কাজ করছেন। বড় ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সুযোগও বেশি। এ পার বাংলার অভিনেতারা বাংলাদেশের সিনেমায় কাজ করলেও, তা সংখ্যায় কম। এ বিষয়ে টলিউডের এক অভিনেত্রী বলেন—‘কলকাতায় বাংলাদেশের শিল্পীরা যতটা সুযোগ পান, সেই তুলনায় বাংলাদেশে আমাদের কাজের সুযোগ বেশ কম।’
বাংলাদেশি অভিনেত্রীরা টলিউডে কাজ করায় সেখানকার অনেকের মধ্যে ক্ষোভ তৈরির খবরটি শুনেছেন বাঁধন। কিন্তু এই চর্চা একজন অভিনেত্রীর উপর বাড়তি চাপ তৈরি করে বলে মনে করেন তিনি। এ বিষয়ে বাঁধন বলেন—‘অনেকে বলছেন, বাংলাদেশের অভিনেত্রীরা এসে কাজ করায় টলিউডের কিছু অভিনেত্রীর মনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। আসলে আমাদের সমাজ এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে দেয়। বিশেষ করে নারীদের উপরেই চাপটা বেশি তৈরি হয়। আমাদের কেন এই চাপ নিতে হবে? এগুলো এড়িয়ে ভালো দিকগুলো নিয়ে ভাবলে, সকলেরই কল্যাণ হবে। সকলে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাবেন। কথাটা কলকাতা-বাংলাদেশ সব ইন্ডাস্ট্রির নিরিখেই বলছি।’