নির্মাতা কোম্পানিটি বলছে, ‘বাড়িতেই বিষন্নতার চিকিৎসা করা যায়, এমন প্রথম ও একমাত্র মেডিকাল অনুমোদিত ব্যবস্থা’ এটি, যা বিভিন্ন থেরাপি বা ওষুধের সঙ্গেও ব্যবহার করা যাবে।
যুক্তরাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা ‘এনএইচএস’-এর সফল পরীক্ষার পর বহুল ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে ডিপ্রেশন বা বিষন্নতার চিকিৎসা করতে পারে, এমন এক ইলেকট্রিক হেডসেটের।
তবে, এ ডিভাইসের দীর্ঘমেয়াদী সুবিধাগুলো এখনও অজানা।
এনএইচএস-এর পরীক্ষায় উঠে এসেছে, বিষন্নতার লক্ষণ কমিয়ে আনার কার্যকর সমাধান হতে পারে এ বিদ্যুচ্চালিত হেডসেটটি। এমনকি যুক্তরাজ্যের সরকারি সেবাগুলোর মধ্যে ডিভাইসটি বিস্তৃত পরিসরে ব্যবহারের পরামর্শও দিয়েছে সংস্থাটি।
ডিভাইসটি বানিয়েছে সুইডিশ কোম্পানি ‘ফ্লো নিউরোসায়েন্স’, যা বিষন্নতায় ভোগা রোগীদেরকে ছয় সপ্তাহের জন্য দৈনিক আধা ঘণ্টা করে পরতে দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। আর একে বিষন্নতা চিকিৎসার ‘ব্যবহারবান্ধব উপায়’ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ।
গবেষণায় দেখা গেছে, এটি আসলে ‘বিষন্নতা চিকিৎসার কার্যকর উপায়’ হিসাবে কাজ করেছে, যেখানে ‘ট্রান্সক্র্যানিয়াল ডাইরেক্ট কারেন্ট স্টিমুলেশন’ বা ‘টিডিসিএস’ নামে পরিচিত এক ব্রেইন স্টিমুলেশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।
ডিভাইসটি মস্তিষ্কের সামনের অংশে সরাসরি দুর্বল বৈদ্যুতিক তরঙ্গ সরবরাহ করার মাধ্যমে মস্তিষ্কে আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো জায়গাগুলোকে প্রাণবন্ত করে তোলে।
গবেষকরা দেখেছেন, ছয় সপ্তাহের এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৫৮ শতাংশের বেশি রোগী নিজের মানসিক অবস্থায় উন্নতি দেখেছেন, যেখানে এক তৃতীয়াংশ রোগীর বিষন্নতার লক্ষণও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
ফ্লো নিউরোসায়েন্স বলছে, ‘বাড়িতেই বিষন্নতার চিকিৎসা করা যায়, এমন প্রথম ও একমাত্র মেডিকাল অনুমোদিত ব্যবস্থা’ এটি, যা বিভিন্ন থেরাপি বা ওষুধের সঙ্গেও ব্যবহার করা যাবে।
ডিভাইসটির পরীক্ষা হয়েছিল ‘নর্থহ্যাম্পটনশায়ার এনএইচএস ফাউন্ডেশনস ট্রাস্ট’-এর রোগীদের ওপর। তবে, কেউ চাইলে ব্যক্তিগতভাবেও এটি কিনতে পারেন, যার জন্য গুনতে হবে ৩৯৯ পাউন্ড (৫০৭ ডলার)।
পরীক্ষায় অংশ নেওয়া রোগীদের একজন ছিলেন জেমস মেইনার্ড, যিনি হেডসেটটি ব্যবহার করার আগে বিষন্নতায় ভুগছিলেন।
“আমি মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কোনো লক্ষ্য ছিল না। আর দৈনন্দিন জীবন আমি অনেক দুশ্চিন্তার মধ্যে কাটাতাম,” স্কাই নিউজকে বলেন মেইনার্ড।
“কাজে যাওয়া, শিশুদের কাছ থেকে বাড়িতে ফেরা, পারলে ঘুমাতে যাওয়া, এটাই আমার দৈনিক রুটিন ছিল।”
তবে কয়েক সপ্তাহ ডিভাইসটি দৈনিক ৩০ মিনিট করে পরে দেখার পর, নিজের বিষন্নতার লক্ষণ অনেকাংশেই কমে এসেছে বলে দাবি করেন তিনি।
“আমার ঘুম আগের চেয়ে কিছুটা ভালো হয়েছে। এমনকি আমার স্ত্রীও বলেছেন, আমি আগের চেয়ে সুখি। এমনকি বিরক্তি ছাড়াই ঘুম থেকে উঠছিলাম আমি। তাই নির্দিধায় বলা যায়, এটা কিছুটা কাজে লেগেছে।”
এ পরীক্ষায় নেতৃত্ব দেওয়া একজন হলেন ড. আজহার জাফর, যিনি স্কাই নিউজকে বলেছেন, ডিভাইসটি ব্যবহারের পর অনেক রোগীই জানিয়েছেন, এতে করে তাদের ওষুধ নেওয়ার প্রবণতাও কমে গেছে।
“এটা নতুন এক বিকল্প। কারণ বেশ কয়েক বছর ধরেই আমাদের একমাত্র উপায় ছিল মেডিকেশন বা আচরণগত থেরাপি। তবে, এই পদ্ধতি বিষন্নতার নিরাময়ের নতুন এক চিকিৎসা ব্যবস্থা হিসেবে যোগ হল।”