দেশের ক্রিকেট কাঠামোর খোলনলচে পাল্টে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ ও পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিমের। দেখতে দেখতে সাড়ে চার মাস পার হয়ে গেলেও দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন নেই। জাতীয় দলের অনেক সাবেক ক্রিকেটারই বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। খালেদ মাহমুদ সুজন মনে করেন, বিসিবি সঠিকভাবে চলছে না। গতকাল সিলেটে এক ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, পরিচালকদের মধ্যে লোভ-লালসা দেখতে পাচ্ছেন। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করে কর্মকর্তাদের কলহের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসা ক্রিকেটের জন্য ভালো নয় বলে মনে করেন সুজন।
ফারুক-নাজমুল দু’জনই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) মনোনীত পরিচালক। প্রথম থেকেই ক্ষমতার লড়াই চলছে দু’জনের মধ্যে। সভাপতি ফারুকের আস্থাভাজন হতে পারেননি ফাহিম। বরং বিভিন্ন সময় নিজেদের মধ্যে কথা কাটাকাটির মতো ঘটনা ঘটেছে। দু’দিন আগে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফাহিম সভাপতি ফারুকের বিরুদ্ধে খারাপ আচরণের অভিযোগ তোলেন। শেষে এ নিয়ে ফারুককেও মুখ খুলতে হয়। গতকাল সিলেটে এ প্রসঙ্গ তুলতেই বিসিবির সাবেক পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ‘ক্রিকেট বোর্ডের কার্যক্রম নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। ক্রিকেট সাপোর্টার, ক্রিকেট বোর্ডে ছিলাম এবং সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে আমি বলব, ভুল বোঝাবুঝি। কারণ আমি অত ফলো করি না। কালকের একটি ঘটনা দেখলাম, ফারুক ভাই ও ফাহিম ভাইয়ের দ্বন্দ্ব। এটা ব্যথা দেয়। দুইজনই সাবেক ক্রিকেটার। তাদের কেন ইগো সমস্যা হবে? তারা তো ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্যই এসেছেন। তারা যখন আসছেন, তাদের অনেক প্রতিশ্রুতি আমি দেখেছি। বিশেষ করে ফাহিম ভাই অনেক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করছেন, দেখছেন, অনেক কিছু চিন্তা করছেন। সেগুলো আমি এখন দেখছি না। এখন দেখছি, লোভ-লালসার মতো হয়ে যাচ্ছে, যে আমি অপারেশন্স না পেলে কাজ করব না, পদত্যাগ করব। এটা তো লোভ-লালসা।’
বিসিবির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ১০ সদস্যের। পরিচালকদের সবাই কাজের সুযোগ পাচ্ছেন না। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের জায়গা থেকে স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলেও পুনর্গঠন করা হয়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়া। সেখানে ফাহিমের চাওয়া পূরণ না হওয়ায় ক্ষোভ বাড়তে থাকে। বিশেষ করে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের দায়িত্ব না পাওয়ায় সভাপতির সঙ্গে ফাহিমের দূরত্ব তৈরি হয় বলে অভিযোগ।
খালেদ মাহমুদ বিষয়টিকে দেখেন এভাবে, ‘কেন এই লোভ-লালসা তাদের মধ্যে। ক্রিকেট অপারেশন্স পেতে হবে কেন? আমি অন্য কমিটির চেয়ারম্যান হলে সেখানে সেবা দিতে পারব না কেন? তিনি কি ক্রিকেট অপারেশন্সের মাস্টার? ওনার আগে তো আকরাম ভাই ক্রিকেট অপারেশন্সের মাস্টার। তিনি চাইতে পারেন। কারণ আকরাম ভাই বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক এবং অপারেশন্সের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাহলে তিনি (ফাহিম) কেন বলছেন অপারেশন্স ছাড়া হবেই না। এটা তো ইগোর ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে। ফারুক ভাই ও ফাহিম ভাই আমার মনে হয় ইগোর সমস্যায় ভুগছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখন তাদের এই মনোভাব দেখি, তখন খারাপ লাগে। দুইজন সিনিয়র মানুষ, আমরা যাদের অনেক সম্মান করি। ফারুক ভাই ও ফাহিম ভাই; দুজনই আমাদের সম্মানিত মানুষ এবং ক্রিকেটার। তাদের যখন এমন দেখি ক্রিকেটার হিসেবে লজ্জিত হই। আসলে আমরা ক্রিকেটাররা কি এত বেশি লোভী?’
বিসিবির পরিচালকের শূন্যপদ পূরণ না করার কারণ খুঁজে পান না সুজন, ‘এত অল্প ডিরেক্টর দিয়ে ফারুক ভাইয়ের জন্য বোর্ড চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফারুক ভাই কেন নতুন পরিচালক নিচ্ছেন না? যাদের নিতে চান, তাদের নিয়ে নিলেই পারেন।’ এতদিনেও ওয়ার্কিং কমিটি না হওয়ায় বোর্ডের ব্যর্থতা মনে করেন সুজন।