হরিধান ঝিনাইদহ বা সারা বাংলাদেশের মধ্যে আলোচিত ও চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী জাতের নাম। একটি ব্র্যান্ড। হরিধান নিঃসন্তান হরিপদ কাপালীর সন্তান। যে ধান আবিস্কারে হরিপদ কাপালীকে তুলে ধরা হয়েছে স্উুচ্চতায়। বিশে^র বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীর নামের পাশে জাত কৃষক হরিপদ কাপালীর নাম উঠেছে। পাঠ্যসূচিতে উঠে এসেছে হরিপদ কাপালীর হরিধান আবিস্কারের তথ্য।
অথচ সেই হরি ধানের আজ বীজ সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে। অধিক ফলনশীল ও খরা সহিষ্ণু এই ধান এখন আর কৃষকের উন্মাদনার কারণ হয় না। হরিধান নিয়ে তারা আর ভাবেন না। তাদের মাথায় কেবলই বিদেশি বীজ কোম্পানির উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষের ভাবনা। কৃষকের এই ভাবনা থেকে সময়ের ব্যবধানে হরি ধান মাঠ থেকে হারিয়ে গেছে। এখন আর মাঠে মাঠে দেখা মেলে না হরি ধানের সোনালী ক্ষেত।
হরিধানের চাল মোটা হলেও ভাত সুস্বাদু। এই ধানের গাছ পুষ্ট ও লম্বা হওয়ায় বিচালির দাম অন্যান্য জাতের তুলনায় বেশি। এছাড়া কম সারে অধিক ফলন ফলে। এতো গুণ বা বৈশিষ্ট থাকার পরও ঝিনাইদহ জেলাতে হরিধান চাষ সম্প্রসারণ করা যায়নি। হরিধানের উদ্ভাবক প্রয়াত কৃষক হরিপদ কাপালি জেলা পর্যায়ের নানা পুরস্কার পেলেও এখনো জাত হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি পায়নি হরিধান। এদিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা রতনপুর, মধুহাটি, মামুনশিয়া ও ধোপাবিলা গ্রামে কিছু কৃষক হরি ধান চাষ করছেন। তবে এই ধানের আবাদ সম্প্রসারিত না হওয়ার কারণে হরিধান ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে।
কৃষক শরিফুল ইসলাম জানান, বিদেশি বীজ কোম্পানির বাজার নিয়ন্ত্রণের কারণে সিন্ডিকেটের সাথে পাল্লা দিয়ে বাজারে টিকতে পারেনি হরিধান। যার ফলে আমাদের এলাকার উদ্ভাবিত হরিধানের বীজ হারানোর পথে।
হরিপদ কাপালীর পালিত পুত্র রূপকুমার জানান, হরি ধানের জাতটি বীজকেন্দ্রিক বাজারজাতের কৌশলের কাছে টিকতে পারেনি। উচ্চফলনশীল জাতটি সুকৌশলে একটি মহল বাজার থেকে উঠিয়ে দিয়েছে। প্রথম দিকে এ ধানে কোনো রোগবালাই ধরেনি। কিন্তু জমিতে একই ফসল বারবার চাষ করলে উৎপাদন কমে যায়। সে কারণেই হয়তো কৃষকরা হরিধান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
এ বিষয়ে হরি হরিপদ কাপলীর উদ্ভাবনা নিয়ে প্রথম সংবাদ প্রচারকারী সিনিয়র সাংবাদিক আসিফ কাজল জানান, পত্রিকায় প্রথম এই খবরটি প্রকাশ হলে দেশে হৈচৈ পড়ে যায়। এরপর দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ব মিডিয়া লুফে নেয় হরিপদ কাপালীর উদ্ভাবনার খবরটি। তিনি আরো জানান, কৃষকের মাঝে হরিধান চাষ প্রায় হারিয়ে গেছে। তার কারণ হলো বর্তমান কৃষকদের প্রলুব্ধ করা হচ্ছে বিদেশি হাইব্রিড জাতের ধান বীজের প্রতি। এ কারণে এখন আর কেউ হরিধান চাষ করছেন না।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার নূরে-নবী জানান, আমি এখানে এসে নিজে কখনো হরিধান দেখিনি। তবে পত্র-পত্রিকা মারফত জেনেছি। বর্তমানে যদি এই ধান চাষে কৃষক লাভবান হন ও সরকারিভাবে এটার সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ করা হয় তাহলে অবশ্যই আমরা এগিয়ে নেবো। এ বিষয়ে কৃষকরা শতভাগ সহয়তা পাবেন।