সুন্দরবনে মৌচাষের কাজ শেষ করে মৌচাষিরা এখন নিরাপদে বাড়ি ফিরছেন। বন বিভাগের অনুমোদিত ১৫ দিনের পারমিট নিয়ে তারা সুন্দরবনে প্রবেশ করেছিলেন।
মৌচাষিরা জানিয়েছেন, এ বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় মধুর উৎপাদন কিছুটা কম ছিল। তবে মৌচাষিদের সংখ্যা কম থাকায় প্রত্যেকে ভালো পরিমাণে মধু সংগ্রহ করতে পেরেছেন।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ থেকে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে এবার ঈদের কারণে ৭ এপ্রিল থেকে পারমিট ইস্যু শুরু হয়। এই মৌসুমে সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে ১,৫০,০০০ কেজি মধু এবং ৪,০০০ কেজি মৌমোম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা থেকে প্রায় ৩২ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ডুমুরিয়া এলাকার মৌচাষি বক্কার মালি বলেন, “১৫ দিনের পারমিট প্রায় শেষ, এবং এবার মৌচাষির সংখ্যা কম ছিল, তাই সবাই কিছু না কিছু মধু সংগ্রহ করতে পেরেছেন। আল্লাহর রহমতে আমি মধু সংগ্রহ করে নিরাপদে ফিরেছি।”
তিনি আরও বলেন, “সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি থাকে। প্রতিবার যাওয়ার আগে পরিবার ও প্রতিবেশীদের দোয়া নিয়ে যাই। বাবা-মা ও সন্তানদের রেখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মধু সংগ্রহ করতে হয়।”
তিনি জানান, ১৫ দিনে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মণ মধু সংগ্রহ করেছেন।
গাবুরার হরিশখালি গ্রামের মৌচাষি বিল্লাল সাজনি বলেন, “সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করা নিরাপদ নয়। মধু খুঁজতে গিয়ে বাঘের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।”
তিনি বলেন, “বাঘেরা গভীর জঙ্গলে থাকে, আর মধু সাধারণত ঘন ঝোপে লুকিয়ে থাকে। এ বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় মধুর উৎপাদন কমেছে, তবে নৌকার সংখ্যা কম থাকায় কিছু মধু সংগ্রহ করতে পেরেছি।”
মৌচাষিরা আরও জানান, বাঘ ছাড়াও বনদস্যুরা তাদের জন্য বড় হুমকি। তারা যদি ধরে ফেলে, তাহলে প্রতি নৌকা থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করে।
তারা অভিযোগ করেন, কিছু জেলে মাছ ধরার পারমিট নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে অবৈধভাবে মধুর চাক কেটে নেয়, যা এ বছর মধুর সরবরাহ কমে যাওয়ার একটি কারণ।
নিরাপদে ফিরে আসার পর, মৌচাষিরা বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং ভবিষ্যতে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের নিরাপত্তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।