সারাবিশ্বে সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগে মাইক্রোব্লগিং সাইট বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু পরিবর্তনশীল বিকাশে কোনো কিছুই বেশিদিন টিকে থাকে না। সংবাদ সংস্থার এখন বাজেট বরাদ্দে ডিজিটালমুখী মনোভাব দৃশ্যমান। পাঠকেরও অঢেল সময় নেই। সুতরাং অল্প কথায় ও সহজে পাঠযোগ্য কনটেন্টকেন্দ্রিক বার্তালাপে নতুন সম্ভাবনা ব্লুস্কাই। লিখেছেন সাব্বিন হাসান
সবাই কেন এক্স ছাড়ছেন– এমন প্রশ্ন আসাটা খুব স্বাভাবিক আর যৌক্তিক। অনেকে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের এক্স ছেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে মার্কিন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক্সের মালিক ইলন মাস্কের প্রত্যক্ষ সমর্থন ও রাজনৈতিক মেরূকরণকে চিহ্নিত করছেন। অধিকাংশের বক্তব্য, ছেড়ে যাওয়ার কয়েকটি কারণের অন্যতম হলো প্ল্যাটফর্মে নেতিবাচক কনটেন্টের আধিপত্য বেড়ে যাওয়া। অন্যদিকে, প্রায়ই বিরক্তিকর কনটেন্ট দৃশ্যমান হয়, যার মধ্যে কট্টর ডানপন্থিদের বর্ণবাদী ও ষড়যন্ত্রমূলক প্রচারণা অন্যতম। সারাবিশ্বে কোটি কোটি ভক্ত এখন দলে দলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’ ছাড়ছেন। প্রতি সপ্তাহেই কয়েক লাখ ‘এক্স’ভক্ত যুক্ত হচ্ছেন সময়ের আলোচিত মাইক্রোব্লগিং ‘ব্লুস্কাই’ ক্যানভাসে।
গল্পটা পেছনের…
ব্লুস্কাই মূলত টুইটার প্রকল্পের অংশ ছিল। ২০১৯ সালে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জ্যাক ডরসির তত্ত্বাবধানে টুইটার উন্নয়ন করা হয়। সপ্তাহান্তে এখন ১০ লাখের বেশি নতুন গ্রাহক যুক্ত হচ্ছেন ব্লুস্কাই ক্যানভাসে। চলতি সপ্তাহে অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরের শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে অ্যাপটি। গ্রাহক কমে যাওয়ার ঘটনা এক্সের জন্য নতুন নয়। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের অক্টোবরে ইলন মাস্ক টুইটারের মালিকানা কিনলে বহু গ্রাহক এক্স ছেড়ে চলে যান।
বলতে গেলে রীতিমতো পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্লুস্কাই ভক্তের সংখ্যা। পরিসংখ্যান বলছে, সর্বশেষ সপ্তাহের ব্যবধানে নিবন্ধনের সংখ্যা দেড় কোটি থেকে দুই কোটি ছাড়িয়েছে। যদি আপনি তাদের মধ্যে হন, তাহলে রপ্ত করতে হবে কয়েকটি কৌশল।
নতুন প্ল্যাটফর্মে অভ্যস্ত ও পরিচিত হতে বেশ কিছুটা সময় লাগে। নতুন ডিসেন্ট্রালাইজড সোশ্যাল মিডিয়ার মাইক্রোব্লগিং এক্স বা অন্য সব প্ল্যাটফর্ম থেকে কতটুকু আলাদা, তা জানা সময়ের প্রয়োজন।
ইনস্টল করার পর
ই-মেইল ভেরিফিকেশনের পরে লগইন করে প্রথম ইন্টারফেস অনেকাংশে এক্স প্ল্যাটফর্মের মতোই দৃশ্যত। ফিড স্ক্রল করে লাইক, কমেন্ট, রি-পোস্ট– এসব কাজ প্রায় হুবহু। নিচের অংশে চারটি ট্যাব দৃশ্যমান হবে। যার হোম ট্যাবে লগইন করলেই প্রবেশ হয়ে যাবে। ঠিক তার পাশের সবকটি ট্যাবে অন্য ইউজারদের খোঁজা, ডিএম-চেকিং, নিজের প্রোফাইল দেখার মতো কাজ সেরে নেওয়া যাবে অনায়াসে।
নিজস্ব ফিড
ইচ্ছা করলেই নির্দিষ্ট শব্দ বাদ দিতে পারেন নিজের ফিডে আসা সব পোস্ট থেকে। সেটিংস অপশনে গিয়ে ‘মডারেশন’ অংশে ক্লিক করলে পাবেন মিউটেড ওয়ার্ড অ্যান্ড ট্যাগ অপশন। সেখানে যুক্ত করতে পারেন অপছন্দের ব্যক্তির নাম বা শব্দ। সুনির্দিষ্ট কত সময়ের জন্য দেখতে চান না, সেটাও চাইলে উল্লেখ করতে পারেন। ব্যস, তার পর থেকে ওই শব্দ লেখা পোস্ট হিডেন থাকবে নিজস্ব ফিডে। তবে সেই পোস্ট করা প্রোফাইলের বাকি পোস্ট কিন্তু দেখা যাবে।
থাকবে না সীমাবদ্ধতা
মাইক্রোব্লগিং সাইটের বিধিমতে, ৩০০ শব্দের সীমানায় নিজের পোস্টের বক্তব্য অনেক সময় শেষ নাও হতে পারে। তার জন্য ব্লুস্কাই দেবে বিশেষ সুবিধা। আগ্রহীরা পোস্ট টাইপ করার সময়ই পাবেন ‘+’ বাটন চিহ্ন। অসমাপ্ত লেখা প্লাস বাটনে ক্লিক করে লিখতে থাকুন। লেখা শেষ হলে ক্লিক করুন ‘পোস্ট অল’। লিখে ফেলা সবটুকু পোস্ট হবে একই থ্রেডের ভেতরে, আরেকটি বাড়তি থ্রেডের প্রয়োজন হবে না।
কারা উত্তর দেবে
নতুন এ প্ল্যাটফর্মে ফলো না করা মানুষও যে কারও পোস্টে অনায়াসে মন্তব্য করতে পারবেন। ঠিক একইভাবে কোনো ব্যক্তিগত পোস্টে চাইলে কেউ রিপ্লাই করতে পারবে না– এমন সুবিধা দেবে। যখন কোনো পোস্ট করবেন, তখন ‘রিপ্লাই কন্ট্রোল’ অপশনে যেতে হবে। নিজের পোস্টের গুরুত্ব বুঝে ফলোয়ার্স, এভরিওয়ান, নো-ওয়ান– তিন অপশনের যে কোনোটি নির্বাচন করে পোস্ট করতে হবে।
নিয়ন্ত্রণে কী
সামাজিক যোগাযোগে অন্যের পোস্ট থেকে উদ্ধৃত করে কয়েক রকম পোস্ট হতে দেখা যায়। যার মধ্যে ট্রল করা, অন্যের পোস্ট কপি-পেস্ট বা অন্যকে সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে হেয় করার মতো অভিযোগ শোনা যায় প্রায়ই। অনাকাঙ্ক্ষিত এসব অভিযোগ থেকে সুরক্ষা পেতে পোস্টের সেটিংসে ‘কোট পোস্ট অ্যানাবেল’– এ অপশন পাওয়া যাবে, যা বন্ধ রাখলে আপনার পোস্ট উদ্ধৃত করার পথটি অবরুদ্ধ থাকবে।
সেলফ লেবেলিং
নিজস্ব পোস্ট কোন ধাঁচের হবে, তা নিজেই লেবেল করে দেওয়ার সুবিধা পাবেন। পোস্ট করার সময়ে দৃশ্যমান হবে লেবেল অপশন। যারা যে ধরনের পোস্ট দেখতে চান, ঠিক তেমনটাই দৃশ্যমান হবে ফিডে। অচেনা বা আপত্তিকর কোনো ভিডিও বা পোস্টে সেই লেবেল দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তা বাদ হয়ে যাবে। ওই লেবেলের পোস্ট যারা দেখেন না, তাদের ফিডে এসব এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।