দুয়ারে নতুন বছরের ঠকঠক। নতুন গল্পের অপেক্ষা। নতুন বছর কারও জন্য পুরোনো ছন্দ ধরে রেখে ছুটে চলার। কেউ খুঁজবেন অতীত ভুলে নতুন শুরুর মন্ত্র। গত হতে যাওয়া বছরে ফুটবলের মঞ্চে কেউ উৎসব-উচ্ছ্বাসে মেতেছেন। কেউ সাক্ষী হয়েছেন ইতিহাসের। আবার কারও কানে বেজেছে পতনের হাহাকার। কারও পায়ের ছন্দ থেমেছে। কেউ ছেড়েছেন পৃথিবীর মায়া। এসব ভুলে পঞ্জিকাবর্ষ পাল্টানোর অপেক্ষা। তার আগে ২০২৪-এর পুরোনো পঞ্জিকার পাতায় চোখ বোলানোর পালা। ফিরে দেখার প্রথম পর্বে থাকছে বিশ্ব ফুটবলের উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, তুলে ধরেছেন সুমন মেহেদী
মেসিদের টানা শিরোপা
ক্লাব পর্যায়ে একের পর এক শিরোপা, খ্যাতি অর্জন করা লিওনেল মেসি জাতীয় দলের জার্সিতে দীর্ঘদিন শিরোপাহীন ছিলেন। কোপা আমেরিকা জিতে কাতার বিশ্বকাপে পা রেখেছিল তাঁর দল। কাতার বিশ্বকাপ জয়ের পর ২০২৪ সালের কোপা আমেরিকাও জিতেছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। সব মিলিয়ে টানা তিন শিরোপা জয়ের আনন্দে ভেসেছে আলবেসেলেস্তেরা। যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত আসরে কলম্বিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে এ বছর কোপা জেতে লিওনেল স্কালোনির দল। এটাই মেসি-ডি মারিয়া-ওতামেন্দি প্রজন্মের শেষ শিরোপা মনে করা হচ্ছে।
লা রোজাদের হাতে শিরোপা
জাভি-ইনিয়েস্তাদের স্পেন বিশ্ব ফুটবলে কর্তৃত্ব করেছে। তারা একটি বিশ্বকাপ ও দুই ইউরোর শিরোপা জিতেছিলেন চার বছরের ব্যবধানে। ওই স্পেনের পতন জাভি-ইনিয়েস্তারা থাকতেই হয়েছে। দীর্ঘ এক যুগ পর লা রোজারা বড় শিরোপার স্বাদ পেয়েছে। এ বছর তারা ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে ঘরে তুলেছে শিরোপা। দলের এই শিরোপা উৎসবে উচ্চারিত নাম ছিলেন বার্সার ১৭ বছরের তরুণ লামিনে ইয়ামাল, যাকে নতুন মেসি বলা হচ্ছে। ভালো খেলেছেন নিকো উইলিয়ামস ও দানি অলমোর মতো তরুণরা। আবার রদ্রি ও মোরাতোর মতো অভিজ্ঞদের ছায়াও ছিল। ক্লাব ও জাতীয় দলে অসাধারণ মৌসুম পার করে ব্যালন ডি’অর জিতেছেন মিডফিল্ডার রদ্রি।
হারিয়েছে যাদের
ফ্রানৎস বেকেনবাওয়ার: ৭ জানুয়ারি অর্থাৎ, জাগালোর মৃত্যুর দু’দিন পর ৭৮ বছর বয়সে মারা যান জার্মান কিংবদন্তি ফ্রানৎস বেকেনবাওয়ার। তিনিও ওয়েস্ট জার্মানিকে খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে একটি করে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন। দুই ভূমিকায় বায়ার্ন মিউনিখেও সমান সাফল্য পেয়েছেন তিনি।
মারিও জাগালো: বছরের শুরুতে ফুটবল বিশ্ব হারিয়েছে ব্রাজিলের কিংবদন্তি মারিও জাগালোকে। ব্রাজিলের পাঁচ শিরোপার চারটির সঙ্গে মিশে আছে তাঁর নাম। ফুটবলার হিসেবে জাগালো ১৯৫৮ ও ১৯৬২ বিশ্বকাপ জিতেছেন। কোচ হিসেবে জিতেছেন ১৯৭০ বিশ্বকাপ। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের কোঅর্ডিনেটর ছিলেন তিনি। ৯২ বছরে পৃথিবীর মায়া ছেড়েছেন জাগালো।
ইয়ামাল-উইর্টজের আগমন
ফুটবলে ২০২৪-এর সবচেয়ে বড় আবিষ্কার লামিনে ইয়ামাল। স্পেনের ১৭ বছরের তরুণে মুগ্ধ হতে হয়েছে অনেককে। তরুণ বয়সেই দেশকে ইউরো জিতিয়েছেন তিনি। তবে আগমনী বার্তা দিয়েছিলেন বার্সার জার্সিতে। আরও দেড় বছর আগে ক্লাবে অভিষেক হলেও মুগ্ধতার বছর এটিই। তাঁর মতো গত মৌসুমে আগমনী বার্তা দিয়েছেন জার্মানির ২১ বছর বয়সী বায়ার লেবারকুসেন মিডফিল্ডার ফ্লোরিয়ান উইর্টজ। বুন্দেসলিগায় চার বছর ধরে খেললেও গত মৌসুম আর চলতি মৌসুম দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন ফুটবলের পরবর্তী বড় কিছু হতে যাচ্ছেন তিনিও।
এমবাপ্পে মাদ্রিদে
রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়া নিয়ে বহু জল ঘোলা করেছেন এমবাপ্পে। অবশেষে এ বছর মাদ্রিদে পা রাখেন তিনি। তাও আবার ফ্রি এজেন্টে। তাঁর মতো তরুণ তারকাকে ফ্রিতে কিনে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছে লস ব্লাঙ্কোসরা। দল বদলের বাজারে খুব আলোচিত নাম ছিলেন নাইজেরিয়ার নাপোলি স্ট্রাইকার ভিক্টর ওসিমহেন। দেড়শ মিলিয়নের তারকা ক্লাবের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান। এদিকে বন্ধ হয়ে যায় ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের দল বদলের দরজা। তাঁকে তাই তুরস্কের গ্যালাতাসারেতে ধারে পাঠিয়ে দিয়েছে নাপোলি।
বুট থাকল তোলা
ইনজুরির কাছে হেরে অবসরে গেছেন ৩১ বছরের রাফায়েল ভারানে ও ৩৩ বছরের থিয়াগো আলকানতারা। রিয়াল ভিন্ন অন্য জার্সি পরবেন না, তাই ৩৪ বছরেই বুট জোড়া তুলে রেখেছেন টনি ক্রুস। লিগে খেললেও ডি মারিয়া জাতীয় দলের বিমান ছেড়ে দিয়েছেন। ৪১ বছরে অবসরে গেছেন পর্তুগালের ডিফেন্ডার পেপে। ফুটবল পায়ে দেখা যাবে না ইতালির লিওনার্দো বনুচ্চি ও ইংল্যান্ডের জো হার্টকে।
জাবির উত্থান-পেপের পতন
লেবারকুসেনকে বলা হতো, নেভার কুসেন। ১১৯ বছরের ইতিহাসে শিরোপা জিততে না পারায় ওই নাম। স্পেনের বিশ্বকাপজয়ী মিডফিল্ডার জাবি আলোনসো কোচের দায়িত্ব নিয়ে ওই লেবারকুসেনকে লিগ শিরোপা জিতিয়েছেন।
ভেঙেছেন বায়ার্ন মিউনিখের কর্তৃত্ব। জাভির অন্যতম গুরু পেপ গার্দিওলা। ম্যানচেস্টার সিটিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়েছেন তিনি। ট্রেবলও জিতিয়েছেন। ২০২৪ এর প্রথমার্ধও ভালো কেটেছে তাঁর। কিন্তু শেষার্ধে যেন পতনের হাহাকার।