আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে বেন স্টোকসের একমাত্র সংযোগ এখন টেস্ট ক্রিকেট। সীমিত ওভারের ক্রিকেটের দুই সংস্করণে তার পথচলা থমকে আছে অনেক দিন ধরেই। তবে আবারও তিনি ইংল্যান্ডের রঙিন পোশাক গায়ে ছুটতে পারেন, যদি দলের জন্য তাকে একান্তই জরুরি মনে করেন নতুন কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম।
২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ফিফটি করে দলের শিরোপা জয়ে অবদান রাখার পর এই সংস্করণে দেশের হয়ে আর দেখা যায়নি স্টোকসকে। ওই বছর তিনি ওয়ানডে ক্রিকেট থেকেও অবসর নিয়েছিলেন পিছু না ছাড়া চোটের কারণে বিরক্ত হয়ে। তবে দলের প্রয়োজনে ২০২৩ বিশ্বকাপের আগে ফিরে আসেন অবসর ভেঙে।এক বছর পর ওয়ানডেতে ফিরেই ফিফটি করেন নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। ফেরার পর তৃতীয় ম্যাচে খেলেন ১২৪ বলে ১৮২ রানের ইনিংস। পরে বিশ্বকাপে শুরুর দিকে ততটা ভালো না করলেও শেষ দুই ম্যাচে খেলেন ৮৪ বলে ১০৮ ও ৭৬ বলে ৮৪ রানের ইনিংস।
সেই দুটিই ওয়ানডেতে তার শেষ দুই ইনিংস। বিশ্বকাপের পর আর তাকে দেখা যায়নি দেশের হয়ে রঙিন পোশাকে।তবে সম্প্রতি ইংল্যান্ডের নির্বাচক সাবেক অলরাউন্ডার লুক রাইট বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তারা সবচেয়ে শক্তিশালী দলটিকেই পেতে চান এবং সীমিত ওভারের দলের বাইরে থাকা বেন স্টোকস ও জো রুটকে তারা তখন জোর দিয়েই বিবেচনা করবেন।ইংল্যান্ডের টেস্ট দলের কোচ ম্যাককালাম আগামী বছরের শুরু থেকে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলের কোচের দায়িত্বও নিতে যাচ্ছেন। তার সঙ্গে স্টোকসের সম্পর্কের গভীরতা জানা সবারই।
মঙ্গলবার স্কাই স্পোর্টসে আলোচনায় সীমিত ওভারে ফেরার প্রশ্নে দুয়ার খোলাই রাখলেন স্টোকস।“যদি কোনো ফোনকল পাই এবং বাজ (ম্যাককালাম) বলেন যে, ‘তুমি কি আবার ফিরতে ও খেলতে চাও?’, তাহলে অবশ্যই, অবশ্যই বলব ‘হ্যাঁ।’ তবে যদি ডাক না পাই, তাহলেও হতাশ হব না। কারণ আমাকে ফিরতে না বলা মানে, দলের অন্যরা খুব ভালো করছে। আমি তখন বসে বসে উপভোগ করতে পারব যে অন্যরা মাঠে নেমে সব গুঁড়িয়ে দেবে।”টেস্ট অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে সর্বকালের সেরাদের উচ্চতায় তুলে নিয়েছেন স্টোকস। সীমিত ওভারে দারুণ কিছু পারফরম্যান্স থাকলেও সেখানে অনেকের কাছে সেই আবেদন হয়তো টেস্টের মতো নয়। তবে ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ে তার ছিল উল্লেখযোগ্য অবদান। দুটিরই ফাইনালে তিনি ছিলেন দলের সর্বোচ্চ রান স্কোরার।
সব মিলিয়ে সীমিত ওভারে নিজের পারফরম্যান্সে তৃপ্ত স্টোকস। সাদা বলের ক্রিকেটে ফেরা নিয়ে কোনো ইঙ্গিত এখনও তিনি ম্যাককালামের কাছ থেকে পাননি বলেও নিশ্চিত করলেন ৩৩ বছর বয়সী ক্রিকেটার।“ইংল্যান্ডের হয়ে সাদা বলের ক্রিকেটে অনেক খেলেছি। তা নিয়ে আমি খুবই খুশি ও এই সংস্করণে যা কিছু অর্জন করেছি, তাতে সন্তুষ্ট। সত্যি বলতে, এটা নিয়ে (সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ফেরা) এখনও পর্যন্ত কোনো আলোচনা আমাদের হয়নি। আমার মনে হয়, তিনি আমাকে মনোযোগী হওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন যেখানে আমার মনোযোগী হওয়া উচিত, টেস্ট দলকে ঘিরে।”
শেষ পর্যন্ত নিজের ভবিষ্যৎ যেটাই হোক, ইংল্যান্ডের সাদা বলের দলের সামনের অধ্যায় নিয়ে রোমাঞ্চিত টেস্ট দলের অধিনায়ক। কোচ হিসেবে টেস্ট দলে যেমন বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন ম্যাককালাম, সীমিত ওভারের দুই দলেও তেমন কিছুর ছাপ পড়বে বলেই মনে করেন স্টোকস।“টেস্ট দলে বাজ (ম্যাককালাম) যা বয়ে এনেছে, সাদা বলের দলের জন্যও এখন দারুণ সুযোগ সেই অভিজ্ঞতার স্বাদ নেওয়ার। অবিশ্বাস্য এক কোচ তিনি, যিনি কথা বলেন সর্বোচ্চ নিবেদন নিয়ে এবং এটা দারুণ যে, তিন সংস্করণের দলই এখন খেলার ধরনে একই বার্তা পাবে ও একই দর্শনের অনুসারী হবে।”চোটের কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই মাঠের বাইরে আছেন স্টোকস। তবে আগামী মাসে পাকিস্তানে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজের আগেই পুরোপুরি ফিট হয়ে উঠবেন বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।