ইউক্রেনের যুদ্ধকৌশলে রণাঙ্গনে ধরাশায়ী রুশ সেনারা। ৬ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া কিয়েভের পালটা অভিযানের পর থেকেই বিপাকে পড়েছে রাশিয়া। কুরস্কে হামলার পর যুদ্ধক্ষেত্রে অপ্রস্তুত মনে হচ্ছে মস্কোকে। একের পর এক বাড়ছে রুশ সেনাদের নিহতের সংখ্যা। ধ্বংস হচ্ছে দেশটির বহু সামরিক সরঞ্জাম। সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বহু নাগরিককে। ইউক্রেনের পালটা আক্রমণে শনিবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১,২৩০ জনের বেশি রুশ সেনার হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও ধ্বংস হয়েছে পাঁচটি ট্যাংক ও ৫৮টি আর্টিলারি সিস্টেম। শনিবার ইউক্রেনের সশস্ত্রবাহিনী ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে ১৭ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত রুশ বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে এ তথ্য তুলে ধরেছেন।
ইউক্রেনের এই পালটা আক্রমণে পশ্চিমাদের হাত আছে বলে দাবি করছে রাশিয়া। ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রসহ কিয়েভের মিত্রদের পরিকল্পনা অনুযায়ী এই হামলা শুরু হয়। শুক্রবার এই অভিযোগ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একজন প্রভাবশালী মিত্র। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রও একই ধরনের অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হামলার বিষয়ে ইউক্রেন কোনো আভাস দেয়নি। এই ঘটনায় ওয়াশিংটন জড়িত নয় বলেও দাবি করা হয়। যদিও রুশ ভূখণ্ডে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত অস্ত্র ব্যবহার করার তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে ইউক্রেনকে জবাব দিতে সীমান্তবর্তী অঞ্চল কুরস্কে কিয়েভের ২২০ জন সেনা হত্যার দাবি করেছে রাশিয়া। শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ইউক্রেনের সেনাদের প্রতিহত করার জন্য রাশিয়া কিয়েভের ১৯টি সাঁজোয়া যান ধ্বংস করেছে। এদিকে, রুশ নিয়ন্ত্রিত দোনেৎস্কের একটি শপিংমলে ইউক্রেনীয় সেনাদের হামলায় নিহত হয়েছেন সাতজন। আবার রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে অভিযান চালানোর মধ্যে সেম নদীর ওপর কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতু ধ্বংস করার দাবি করেছে ইউক্রেন। ক্রেমলিন ওই সেতু ব্যবহার করে সেনা সরবরাহ করে আসছিল, এটি ধ্বংস হওয়ায় সেই কাজ ব্যাহত হতে পারে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
রুশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্লুশকোভো শহরের কাছে অভিযানের ফলে স্থানীয় জেলার কিছু অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তাদের সেনারা কুরস্কে অবস্থান শক্তিশালী করছে। দখল করা অঞ্চলগুলোকে ‘বিনিময় তহবিল’ হিসাবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, এসবের সঙ্গে ইউক্রেনে মস্কোর দখল করা অঞ্চল বিনিময় করা যেতে পারে। উল্লেখ্য, চলতি মাসের ৬ তারিখ রুশ সীমানায় অনুপ্রবেশ করে হামলা চালায় ইউক্রেন।
দুই দেশের মধ্যে প্রায় আড়াই বছর ধরে চলা যুদ্ধে এই প্রথম প্রতিপক্ষের সীমানায় অনুপ্রবেশ করল ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। এছাড়া, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পর রাশিয়ায় বহিঃশত্রু আক্রমণের সবচেয়ে বড় ঘটনা এটি। হামলার ১১ দিন পরও রুশ ভূখণ্ডে অবস্থান করছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। কিয়েভের দাবি, এখন পর্যন্ত এক হাজার ১৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৮২টি গ্রামের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা।