সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মার্কিন অভিযানে নিহত হয়েছেন ইসলামিক স্টেট নেতা আবু ইব্রাহিম আল-হাশিমি আল-কোরাইশি।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।তিনি জানান, ‘আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর দক্ষতা ও সাহসিকতার কারণে আইএস নেতা আবু ইব্রাহিম আল-হাশিমি আল-কোরাইশিকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযান শেষে সব মার্কিনিরা নিরাপদে ফিরেছেন।’
২০১৯ সালে পূর্বসূরী আবু বকর আল-বাগদাদির মৃত্যুর পর আইএস নেতা হয়েছিলেন কুরাইশি। তিনি হাজি আবদুল্লাহ, আমির মোহাম্মদ সাইদ আবদুল রহমান আল-মাওলা এবং আবদুল্লাহ কারদাশ নামেও পরিচিত ছিলেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, আইএসের শীর্ষ নেতা কুরাইশিকে হত্যা করার জন্য বেশ কয়েকমাস ধরে পরিকল্পনা করেছিলেন মার্কিন কর্মকর্তারা। এরপর নাটকীয়ভাবে আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন হত্যা অভিযানের কায়দায় মিশন পরিচালনা করেন তারা। তবে মার্কিন বাহিনীর বিশেষ অভিযানে ধরা পড়েননি কুরাইশি। সপরিবারে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন।
সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের আতমেহ শহরের উপকণ্ঠে একটি তিনতলা আবাসিক ভবন লক্ষ্য করে ওই অভিযান চালানো হয়।
তুরস্ক সীমান্তবর্তী ওই অঞ্চলে একদিকে আইএসের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী জিহাদি সংগঠনগুলোর শক্তিশালী ঘাঁটি, অন্যদিকে সিরিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইরত তুরস্ক-সমর্থিত বিদ্রোহী দলগুলোও রয়েছে সেখানে।
মার্কিন গোয়েন্দাদের কাছে নিশ্চিত তথ্য ছিল যে কুরাইশি আতমেহ শহরের আবাসিক ভবনটির দোতলায় পরিবারের সঙ্গে থাকছিলেন। সেখান থেকেই তিনি বার্তাবাহকের মাধ্যমে সিরিয়া এবং অন্য স্থানে তার নির্দেশনা প্রচার করে আইএস চালাতেন।
আইএস বাগদাদির মৃত্যুর চার দিন পরে কুরাইশির নেতৃত্বে বসার কথা ঘোষণা করলেও তাকে এই ভূমিকার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই প্রস্তুত করা হয়েছিল।
ধারণা করা হয়, সংগঠনটির ভবিষ্যত দায়িত্ব গ্রহণের প্রত্যাশায় তাকে প্রত্যক্ষ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দূরে রাখা হতো। এমনকি আতমেহর ওই আবাসিক ভবনে থাকার সময় কুরাইশি ছাদে গোসল করা ছাড়া কখনও বাইরে যাননি। সেখানে বিমান হামলায় বেসামরিক হতাহতের উচ্চঝুঁকি ছিল। কারণ অন্য একটি পরিবার নিচতলায় থাকত।
ওই পরিবার আইএসের সঙ্গে যুক্ত নয়। কুরাইশি সম্পর্কেও অবগত ছিল না। অবশ্য কুরাইশিকে ধরিয়ে দেওয়ার তথ্য দিতে এক কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছেন, কুরাইশির বাড়িতে সম্ভাব্য স্থল অভিযান বিশদভাবে যাচাই করা হয়েছিল। সম্ভাব্য ১২ ধরনের পরিস্থিতিতে কী হতে পারে তা অনুশীলন করা হয়। আবাসিক কম্পাউন্ডের বিভিন্ন মডেল তৈরি করা হয়েছিল।
গত মঙ্গলবার (০১ ফেব্রুয়ারি) স্পেশাল ফোর্সের ওই অভিযানের জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন দেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। হোয়াইট হাউসের ‘সিচুয়েশন রুম’ থেকে সরাসরি তিনি ঘটনাপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করেন। তবে অভিযান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে কুরাইশি বাড়ির তৃতীয় তলায় একটি বিস্ফোরক ফাটিয়ে স্ত্রী এবং দুই সন্তানসহ আত্মহত্যা করেন।
পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কারবি জানান, আঙুলের ছাপ এবং ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে কুরাইশিকে শনাক্ত করেন তারা। অভিযানে তাদের পক্ষে কোনো হতাহত হয়নি। তবে একটি হেলিকপ্টার অভিযানের সময় বিগড়ে যাওয়ায় তা ধ্বংস করতে হয়।
স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার রাতে মার্কিন অভিযানে নিহতদের মধ্যে সাতজন শিশু ও তিনজন নারী রয়েছেন। সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে অভিযানটি পরিচালনা করা হয়। ওই অঞ্চলটিতে হাজারও মানুষ বসবাস করেন। দেশজুড়ে যুদ্ধ চলাকালে ঘর হারানো মানুষ সেখানে আশ্রয় নেয়। আর ওই স্থানেই বিশেষ অভিযান চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী।
পি এস/এন আই