স্বাস্থ্যকর খাবার বিবেচনায় ‘প্রক্রিয়াজাত’ কথাটা শুনলেই মনে হয় অস্বাস্থ্যকর। তবে সব-সময় সেটা ঠিক না।‘প্রোসেসড’ বা প্রক্রিয়াজাত এবং ‘আল্ট্রা-প্রোসেসড’ বা অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
এই তথ্য জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা নিবাসী পুষ্টিবিদ সারাহ গ্যারন ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে লেখেন, “জমি থেকে খাবার টেবিল পর্যন্ত যেসব খাবার খুব একটা পরিবর্তিত হয় না বা বৈশিষ্ট ঠিক রেখে অল্প পরিবর্তন করা হয়, সেগুলো হল প্রক্রিয়াজাত খাবার।”আর যেসব খাবার বেশি পরিমাণে পরিবর্তন করে সাথে আলাদা স্বাদ, রং বা গন্ধ যুক্ত করা হয় সেগুলো হল অতি-প্রক্রিয়াজাত।
পাশাপাশি থাকতে পারে সংরক্ষণ করার উপাদান, হাইড্রোজেন্যাটেড ফ্যাটস ইত্যাদি।তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে কয়েকটি প্রক্রিয়াজাত খাবার বেছে নেওয়া যেতেই পারে।
বাদামি পাউরুটি
গাছে তো আর সরাসরি পাউরুটি ধরে না। তাই বলা যায়, সব ধরনের পাউরুটি প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি।
লাস ভেগাস’য়ের ‘রুটসু নিউট্রিশন’য়ের কর্ণধার ও পুষ্টিবিদ হ্যালি বিশফ এই বিষয়ে একই প্রতিবেদনে বলেন, “সম্পূর্ণ গম থেকে উৎপন্ন করা প্রাথমিক উপাদান আটা থেকে প্রস্তুকৃত পাউরুটি থেকে মিলবে আঁশ, পুষ্টিগুণ এবং খানিকটা প্রোটিন।”
পরিপূর্ণ শষ্য থেকে তৈরি এরকম পাউরুটির রং বাদামি হবেই। আর সেটা স্বাস্থ্যকর।
টিনজাত ডাল বা মটর
উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের আদর্শ উৎস ডাল, মটর কিংবা ছোলা। সেই সাথে মিলবে আঁশ, ফোলেইট, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজসহ অন্যান্যা পুষ্টি উপাদান।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘নিউট্রিশন এডুকেশন আরডি’র ক্যাথরিন কার্নাটজ এই সম্পর্কে বলেন, “কাঁচা ডাল বা মটর ভিজিয়ে রাখতে হয়, সেদ্ধ করে খেতে হয়। টিনজাত ডাল বা মটর রান্না করতে এসব ঝামেলা নেই। আর কাঁচার মতোই টিনজাত ডাল ও মটর সমান স্বাস্থ্যকর।
টক দই
মার্কিন পুষ্টিবিদ এবং ‘সকার মম নিউট্রিশন’য়ের প্রশিক্ষক বলেন, “সব দই আসলে প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি।”
দুধ থেকে প্রক্রিয়াজাত করেই দই প্রস্তুত করা হয়। যতক্ষণ না পর্যন্ত এতে আলাদা স্বাদ ও রং মেশানো না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এটা স্বাস্থ্যকরই থাকে, যাকে বলে টক দই।
এই খাবার থেকে মিলবে- প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি-ওয়ান এবং প্রোবায়োটিকস। সাধারণ টক দই বা হালকা মিষ্টি দেওয়া দই প্রক্রিয়াজাত হলেও স্বাস্থ্যকর।
শুকনা ফল
মোড়কজাত বা প্যাকেটে নানান ধরনের শুকনা ফল পাওয়া যায়। সেটা হতে পারে কিশমিশ, খেজুর বা আম।
“ফল থেকে জলীয় অংশ সরিয়ে তৈরি করা হয় ‘ড্রায়েড ফ্রুটস’ বা শুকনা ফল। যে কারণে এসবে অন্যান্য পুষ্টিগুণ অক্ষতই থাকে। বিশেষ করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আঁশ”- বলেন ‘ইট সুইম উইন’য়ের মার্কিন পুষ্টিবিদ ও প্রতিষ্ঠাতা কেইটি শিমেলফেনিং।
তার কথায়, “ব্যাগে কিশমিশ রেখে দিতে পারেন। এটা দারুণ শক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করে।”
পপকর্ন
মাইক্রোওয়েভ ওভেনে প্রস্তুত করা যায়, এমন মাখন দেওয়া প্যাকেটজাত পপকর্ন ট্রান্স ফ্যাট’য়ের উৎস। আর দেওয়া থাকে কৃত্রিম স্বাদ।
তবে ফিলাডেলফিয়া’র ‘সিম্পল স্টার্ট নিউট্রিশন’য়ের পুষ্টিবিদ ক্রিস হেইগান বলেন, “সাধারণ বা হালকা লবণ দেওয়া পপকর্ন অতি-প্রক্রিয়াজাত করা থাকে না। এর থেকে মিলবে আঁশ এবং ম্যাগনেসিয়াম। আর তিন কাপ পরিমাণ পপকর্নে থাকে মাত্র ১০০ ক্যালরি।”
সয়া দুধ
পুষ্টিকর উদ্ভিজ্জ দুধ বললে সাধারণত সয়া দুধের কথাই মাথায় আসে। আর এটা প্রক্রিয়াজাত করেই তৈরি করা হয়।
‘দি নারিশড ব্রেইন’ বইয়ের লেখক ক্যানসাস’য়ের পথ্যবিদ শেরিল মুসাত্তো বলেন, “যারা নিরামিষাশী এবং ‘ল্যাক্টোজ’ সহ্য হয় না, তাদের জন্য উৎকৃষ্ট হল সয়া দুধ।”
উদ্ভিজ্জ দুধের উৎস হিসেবে এর থেকে মিলবে প্রোটিন, প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড যা গরুর দুধেও থাকে। এছাড়া প্যাকেটজাত সয়া দুধে আলাদা করে দেওয়া থাকে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি।
টিনজাত মাছ
অবশ্যই টাটকা মাছ খাওয়া উপকারী। তবে যখন টিনজাত টুনা বা স্যামন মাছে কথা আসবে তখন সেটা প্রক্রিয়াজাত হলেও স্বাস্থ্যরক হিসেবেই চিহ্নিত হবে।
এই তথ্য জানিয়ে টেক্সাস’য়ের পুষ্টিবিদ ও ‘সেভর নিউট্রিশন’য়ের কর্ণধার ব্রিটানি ক্রাম্প বলেন, “টিনজাত মাছ রান্না করা সহজ। আর ওমেগা-থ্রিস’য়ের উৎকৃষ্ট উৎস, যা হৃদস্বাস্থ্য ও মস্তিষ্কের কাজের জন্য উপকারী।”