আমাদের বেশিরভাগই মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি উদাসীন। লক্ষ্য ও সময়সীমা পূরণের জন্য আমরা প্রতিদিন নিজেদেরকে আরো কঠিন করে তুলি। প্রযুক্তির চাহিদা ও নির্ভরতার কাছে আমরা আত্মসমর্পণ করি এবং এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কী হতে পারে তা বুঝতে না পেরে আমরা ইঁদুর দৌড়ের অংশ হয়ে যাই। আমাদের প্রাত্যহিক কিছু অভ্যাসের কারণে মস্তিষ্কে কিছু খারাপ প্রভাব পড়ে।
সেটি নিয়েই আজকের প্রতিবেদন। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
১. পর্যাপ্ত শরীরচর্চা না করা
শরীরচর্চা মস্তিষ্কের ফাংশন যেমন স্মৃতি ও একাগ্রতা বাড়াতে কাজ করে। এটি নিউরোজেনেসিস বা নিউরনের জন্ম বাড়াতেও সহায়তা করে।ব্যায়ামের অভাব মানসিক ক্ষমতার নিস্তেজতার কারণ হতে পারে। শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা এন্ডোরফিনের মাত্রা হ্রাসের কারণে উচ্চস্তরের চাপ ও উদ্বেগ তৈরি হতে পারে। এই ভারসাম্যহীনতা মেজাজ নিয়ন্ত্রণ ও সামগ্রিক মানসিক স্বাস্থ্যকে ব্যাহত করে। তাই মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা প্রয়োজন
২. উচ্চ শব্দে গান শোনা
ক্রমাগত জোরে গান শোনার ফলে শ্রবণশক্তির কমে যেতে পারে এবং চাপের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়। শ্রবণ কর্টেক্স ধ্রুবক শব্দ তরঙ্গের সঙ্গে খুব বেশি কাজ করতে পারে। কারণ মস্তিষ্কের এই অংশটি মনোযোগ ও স্মৃতি নিয়ন্ত্রণ করতে কাজ করে। উচ্চ-ভলিউম সঙ্গীত শরীরের অভ্যন্তরে কর্টিসলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।এর ফলে মানসিক স্বাস্থ্য সরাসরি প্রভাবিত হয় এবং উদ্বেগ সৃষ্টি করে।
৩. অত্যধিক চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া
চিনি-সমৃদ্ধ বা মিষ্টি জাতীয় খাবার অতিরিক্ত খেলে তা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি করে। এটি স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দিতে পারে। চিনি প্রদাহ ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সৃষ্টি করতে পারে। উভয়ই মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি করে এবং এমনকি নিউরোডিজেনারেটিভ রোগও হতে পারে। উচ্চ চিনিযুক্ত খাবার ইনসুলিন প্রতিরোধের দিকে নিয়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত চিনি খেলে তা মেজাজ নিয়ন্ত্রণে পরিবর্তন আনে এবং মানসিক ব্যাধি যেমন বিষণ্নতা ও উদ্বেগের জন্য প্রবণতা বাড়ায়।
৪. রোদে কম থাকা
রোদে কম থাকার ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দেয়। সূর্যালোক সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়ায়। তাই প্রতিদিন গায়ে রোদ লাগালে বিষণ্নতার ঝুঁকি কমে। সেইসঙ্গে বাড়ে সুস্থতা। পর্যাপ্ত রোদ না থাকলে সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার (এসএডি) উদ্বেগ ও বিষণ্নতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
৫. ক্রনিক ডিহাইড্রেশন
ক্রনিক ডিহাইড্রেশন একাগ্রতা, স্মৃতিশক্তি ও সামগ্রিক মানসিক স্বচ্ছতার মতো ফাংশনগুলোকে দুর্বল করে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। মস্তিষ্ক হাইড্রেশন স্তরের পরিবর্তনের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল। এমনকি হালকা ডিহাইড্রেশন নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদন এবং মস্তিষ্কের কোষ যোগাযোগকে প্রভাবিত করতে পারে। ক্রমাগত ডিহাইড্রেশনের ফলে স্ট্রেসের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং জ্ঞানীয় কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে, যা মনোযোগ দেওয়া এবং তথ্য প্রক্রিয়া করা কঠিন করে তোলে। অপর্যাপ্ত হাইড্রেশন মাথাব্যথা, মেজাজ পরিবর্তন এবং মানসিক সতর্কতা হ্রাস করতে পারে। মানসিক সুস্থতার জন্য সঠিক হাইড্রেশন বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৬. মানসিক চাপ
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। এটি মস্তিষ্কের ফাংশন ও মানসিক সুস্থতা উভয়কেই প্রভাবিত করে। দীর্ঘায়িত স্ট্রেস কর্টিসলের মাত্রা বাড়ায়। অতিরিক্তভাবে দীর্ঘস্থায়ী চাপ নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্যকে ব্যাহত করে, যার ফলে উদ্বেগ ও বিষণ্নতার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এটি মস্তিষ্কের বার্ধক্যকেও ত্বরান্বিত করে এবং নিউরোডিজেনারেটিভ রোগে অবদান রাখতে পারে।