রাজশাহীর চারঘাটের দিনমজুর হেফজুল হক। ৪০ বছর বয়সী এই দিনমজুর বিষধর রাসেলস ভাইপারের কামড়েও পরও সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসেছেন শুধু মনের জোরে আর রাজশাহী মেডিকেলের চিকিৎসার কল্যাণে।
মে মাসের ৩১ তারিখ শুক্রবার সকালে ধান কাটার সময় তিনি বিশাল এক রাসেলস ভাইপারের দ্বারা আক্রান্ত হন হেফজুল। সাত পাঁচ না ভেবেই সাপটি নিজ হাতে মেরে সঙ্গে করে নিয়ে চলে যান হাসপাতালে। বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালে যাবার পর অন্তত দেড় ঘণ্টায় তিনবার রক্ত পরীক্ষার পর তার শরীরে রাসেলস ভাইপারের বিষের প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। মুখের চোয়ালে কামড়ানোয় মুখের এক পাশ ফুলে যায়, এন্টিভেনম দেবার পর নেয়া হয় আইসিউইতে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সুস্থ্য হয়ে ওঠেন তিনি। তিন দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও এখনও শরীর থেকে বিষক্রিয়া পুরোপুরি নিঃশ্বেষ হয়নি বলে জানান হেফজুল।
হেফজুলের স্ত্রী মাসুমা তানিয়া আক্তার তার স্বামীর বেঁচে ফিরে আসাকে অলৌকিক ব্যাপার বলে অভিহিত করছেন। তিনি জানান, এই বিষধর সাপের কামড়ে চিকিৎসা নিয়ে ফিরে এসেছে এমন ঘটনা চারঘাট এলাকায় তিনি দেখেননি। কৃতজ্ঞতা জানান চিকিৎসক ও সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার। তার দাবি এই ঘটনা থেকে উপযুক্ত শিক্ষা নিয়ে পুরো অঞ্চলের মানুষ আর সাপে কাটলে ওঝা কিংবা কবিরাজের কাছে না গিয়ে সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাবার প্রতিজ্ঞা নিয়েছে।
স্বজন এবং প্রতিবেশীরা হেফজুলের এমন প্রত্যাবর্তনে খুশি ও বিস্মিত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের দাবি, সংকটময় এই সময়ে সরকারি সব হাসপাতালে যেন সাপে দংশনের এন্টিভেনম ওষুধ সরবরাহ যথেষ্ট থাকে। এ ছাড়া সম্প্রতি চারঘাট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় এ সাপের উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্বজনরা হেফজুলের এই সংকটকালীন সময়ে তার পরিবারের জন্য সাহায্যের আবেদন করেছেন।
সাপ গবেষক বোরহান বিশ্বাস রমন বলেন, ‘সাপে কামড় দেয়ার পর দেরি কার যাবে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে এর চিকিৎসা শুরু করতে হবে। সাপের কামড়ে পরে চিকিৎসা নিতে দেরি করলে তার ইন্টারনাল ফাংশন ডেমেজ হতে শুরু করে। তবে এক-দুই ঘণ্টার পর মধ্যে চিকিৎসা শুরু করতে পারলে রোগীর অনেকটা ঝুঁকি কমে যেতে পারে।’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার আবু শাহীন বলেন, সাপে কামড়ানোর পর যে যত দ্রুত আসছে তাদের জটিলতা কম হচ্ছে। যারা সাপে কামড়ানোর পর বিভিন্ন ঝাড়ফুঁক বা ওঝার কাছে গিয়ে সময় নষ্ট করে। তাদের জটিলতা বাড়তে থাকে। সাপের বিষটি শরীরে ছড়াতে থাকে।
তিনি বলেন, রাসেলস ভাইপারের দংশনে চিকিৎসার জন্য রামেক হাসপাতালে পর্যাপ্ত এন্টিভেনম রয়েছে। এসময় আক্রান্ত হলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাবার পরামর্শ দেন এ চিকিৎসক।
বিষধর রাসেলস ভাইপারের উপদ্রপ বেড়ে যাওয়ায় চারঘাট সহ আশপাশের এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকাবাসীকে সাবধানে থাকতে সতর্ক করে মাইকিং করা হচ্ছে। এরই মধ্যে গেল ২৩ জুন রোববার চারঘাটের বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাকাডেমিতে অন্তত ১০টির বেশি রাসেলস ভাইপারের বাচ্চা উদ্ধার করে মেরে ফেলা হয়েছে। ২৫ জুন রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি ছিলেন ২ জন সর্প দংশনের রোগী যাদের একজন রাসেলস ভাইপারের দংশনে আক্রান্ত। শুধু ২০২৪ সালে এ সাপে র্দশনের ফলে রাজশাহী মেডিকেল ভর্তি হয়েছেন মোট ১৭ জন। তবে চিকিৎসকরা জানান, এর চেয়ে বিষধর গোখরা এবং কালাচ সাপের দংশনে হাসপাতালটিতে বেশি রোগী ভর্তি হন।