চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার সাপের খবরে ছুটে যান বন কর্মকর্তারা; তবে গিয়ে দেখেন চারটি ঢোঁড়া সাপ মেরে ফেলেছে স্থানীয়রা।
চন্দনাইশের ধোপাছড়ি ইউনিয়নের চিড়িংঘাটা এলাকায় রোববার সকালে এ ঘটনা ঘটে বলে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের দোহাজারী রেঞ্জ কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, “রাসেলস ভাইপার সন্দেহে সাপ পিটিয়ে মারার খবরে আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু কিছু পাইনি।
“যে চারটি সাপ পিটিয়ে মারা হয়েছে সেগুলো ‘দাগি ঢোঁড়া’ সাপ। সেগুলো নির্বিষ। যেখানে সাপগুলো পাওয়া গেছে, তার পাশেই সাঙ্গু নদী। নদীর পাড়ে অনেক চাষাবাদ হয়। ফসলি জমিতেই সাপগুলো দেখা গেছে।”
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় রাসেল ভাইপার সাপ পাওয়ার খবর মিলছে। এই সাপের কামড়ে হতাহতের খবরও পাওয়া গেছে। আবার রাসেলস ভাইপার সন্দেহে অন্য সাপও পিটিয়ে মেরা ফেলা হচ্ছে।
বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, “কিছু মানুষ গুজবের কারণে বিভিন্ন ধরনের সাপ পিটিয়ে মারছে। শুক্রবার লোহাগাড়া উপজেলায় দুইটি অজগর সাপ পিটিয়ে মারা হয়েছে।
“বাংলাদেশে যত সাপ আছে তার ৮৫ শতাংশ নির্বিষ। আর সাপ এমন প্রাণী, যেটি নিজ থেকে কখনও আক্রমণ করে না।”
সাপ নিধনে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “এভাবে সাপ নিধন করা হলে কৃষি জমিতে ইঁদুরের উৎপাত বেড়ে যাবে। ফসলের ক্ষতি হবে। আর অজগরসহ কিছু সাপ আছে, যেগুলো বিষধর সাপ খেয়ে ফেলে। তাই অজগর মারা হলে বিষধর সাপ বেড়ে যাবে।”
সাপ দেখলেই মেরে না ফেলার পরামর্শ দিয়ে বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, “আমাদের ফুড চেইন ও ইকোলজিক্যাল ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাপ রক্ষা করতে হবে। আমরা বিভিন্ন স্থানে প্রচারণা চালাচ্ছি।
“ফসলি জমির পোকা মাকড়, ইঁদুর প্রভৃতির বংশ রোধ এবং এগুলোর হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে সাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।”
চন্দ্রবোড়া সাপ দেখলেই আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ও।
একসময় বিলুপ্ত ঘোষণা করা রাসেলস ভাইপার সাপের ছোবলের কথা ২০১৩ সালে জানা যায় রাজশাহীতে। বরেন্দ্র অঞ্চলে দেখা যাওয়া সাপটি ছড়িয়ে যায় পদ্মা অববাহিকায়। গত এক বছরে রাজশাহী অঞ্চল ছাড়াও মানিকগঞ্জ, ফরিদপুরের, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, চাঁদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, চাঁদপুরসহ ২৬ থেকে ২৭টি জেলায় এই সাপের উপদ্রব দেখা গেছে।