ফিলিস্তিনের গাজার পাশাপাশি লেবাননে ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন- হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতেও ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিসী- আইডিএফ জানিয়েছে, দক্ষিণ লেবাননের বেশ কয়েকটি এলাকায়- যে সব সামরিক কাঠামো থেকে ইসরায়েলের দিকে রকেট ছোড়া হয়েছে, ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান সেসব এলাকায় হামলা চালাচ্ছে।
আইডিএফের সামরিক গোয়েন্দা অধিদপ্তর এবং উত্তর কমান্ডের নির্দেশে এই হামলা চালানো হচ্ছে। খবর তাস ও টাইমস অব ইসরায়েলের।
ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল কান জানিয়েছে, রোববার সকাল থেকেই ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো এ পর্যন্ত শতাধিকবার লেবাননে বিমান হামলা চালিয়েছে।এর ফলে লেবাননে আরো তিনজন নিহত এবং দুজন আহত হয়েছেন।
এর আগে শনিবার দিবাগত রাতে উত্তর ইসরায়েলের দিকে দেড় শতাধিক রকেট এবং ড্রোন হামলা চালায় হিজবুল্লাহ।
রামিত ডেভিড বিমান ঘাঁটি ইহুদিবাদী ইসরাইলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিমান-ঘাঁটিগুলোর মধ্যে অন্যতম। অধিকৃত ফিলিস্তিনের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত ইসরাইলের এই ঘাঁটি সাম্প্রতিক সময়ে হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অন্যতম প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে।
রোববার খুব ভোরবেলায় অধিকৃত উত্তর ফিলিস্তিনে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরাইলি লক্ষ্যবস্তুগুলোর ওপর এত ব্যাপক ও ভয়ানক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা আর চালায়নি হিজবুল্লাহ।
এই অভিযানের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ইসরাইলের নিরাপত্তা ও সামরিক ব্যবস্থার জন্য মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনে। এই পাঁচটি দিক হল-
১. গত ২৪ ঘণ্টায় হিজবুল্লাহর শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে উত্তর ইসরাইলে। হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ইতিহাসে এত কম সময়ে এমন ব্যাপক হামলার ঘটনা খুব কমই দেখা গেছে।
এসব ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষিপ্ত হয়েছে গোলান থেকে হাইফা, নাসিরিয়া ও আল-জালিলসহ বিভিন্ন অঞ্চলে। এসব অঞ্চলে একটানা দীর্ঘ সময় ধরে হুঁশিয়ারি সাইরেন বাজাতে বাধ্য হয়েছে ইসরাইল।
২. রামিত ডেভিড বিমান ঘাঁটি ইহুদিবাদী ইসরাইলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিমান-ঘাঁটিগুলোর মধ্যে অন্যতম। অধিকৃত ফিলিস্তিনের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত ইসরাইলের এই ঘাঁটি হিজবুল্লাহর হামলার অন্যতম প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে। এই ঘাঁটির মধ্যে রয়েছে ইসরাইলি বিমান সেনার ১০১, ১০৫ ও ১০৯ নম্বর ব্রিগেড এবং ইসরাইলের সামরিক হেলিকপ্টার ও ড্রোনের আস্তানাও রয়েছে এখানে।
কোনো কোনো রিপোর্টে বলা হয়েছে রামিত ডেভিড বিমান ঘাঁটিতে কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে এবং এর ফলে সেখানে অনেক বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
৩. হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফলে তিন লাখ ইহুদিবাদী দখলদার বা বসতি স্থাপনকারীরা পালিয়ে গিয়ে নানা আশ্রয়-কেন্দ্রের ভেতরে লুকাতে বাধ্য হয়েছে। নানা ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে ইসরাইলিরা পালিয়ে যাচ্ছে এবং আশ্রয়-কেন্দ্রগুলোর প্রবেশ পথে ব্যাপক ভিড়। আর এ থেকে বোঝা যায় হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইসরাইলিদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি সৃষ্টি করেছে।
৪. ইসরাইলের চ্যানেল ফোরটিন টেলিভিশন জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফলে উত্তর ফিলিস্তিনের নানা অঞ্চলে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং নাতনিয়া ও নাসিরিয়া শহরসহ নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে আগুন। এ অবস্থা ইসরাইলের শক্তির মহড়া দেখানোর ক্ষমতা ব্যাপক মাত্রায় কমিয়ে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
৫. হিজবুল্লাহর হুদহুদ নামের ড্রোন কেবল সামরিক হামলার কাজে ব্যবহার করা হয় না, এই ড্রোন অত্যন্ত নিখুঁত তথ্য সংগ্রহেও দক্ষ। দুই মাস আগে হিজবুল্লাহ এ ধরনের ড্রোন ব্যবহার করে রামিত ডেভিড বিমান ঘাঁটির নিখুঁত ছবি তুলে আনতে সক্ষম হয়েছিল। ফলে এখন সেখানে নিখুঁতভাবে হামলা চালানো হিজবুল্লাহর জন্য অনেক সহজ হয়েছে।
আর এ থেকেই হিজবুল্লাহর গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের উচ্চতর সক্ষমতা ও নির্ভুল সামরিক অভিযান পরিচালনার ক্ষমতাও ফুটে উঠেছে। আর এ বিষয়টি ইসরাইলে মারাত্মক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।